সৌন্দর্য প্রদর্শন একটি প্রকাশ্য গুনাহ

 


সৌন্দর্য-প্রদর্শন একটি প্রকাশ্য গুনাহ। 

যে গুনাহের প্রধান মোটিভই হচ্ছে অন্যকে দেখিয়ে বেড়ানো এবং মানুষের সামনে নিজেকে আকর্ষণীয় হিসেবে প্রকাশ করা। এর মাধ্যমে আসলে নিছক কোনো পাপ করা হয় না, বরং পাপের মহড়া দেওয়া হয়। যা পাপের ভেতর সবচেয়ে ভয়াবহ একটি পর্যায়। 


পাপের কিছু ধাপ আছে। যেমন মাঝে মাঝে কোনো পাপ করা, নিয়মিত একটা পাপ করা, সেই পাপকে প্রকাশ্যে অপরাধ ও সংকোচ ছাড়া করা, পাপকে উদযাপন বা সেলিব্রেট করা, পাপকে পাপ মনে না করা এবং পাপের ওপর অহংবোধ চলে আসা। প্রথম তিনটি ধাপ সাধারণ গুনাহের পর্যায়ে থাকে। কিন্তু পরের ধাপগুলোতে বান্দা কুফরের দিকে চলে যায়। পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের বর্তমান সময়ে তাবাররুজের জাহেলি সংস্কৃতির যে স্রোত, সেটা ৯০% ক্ষেত্রে পরের ধাপগুলোতে চলে গেছে। 


অধিকাংশ মেয়েই আজকে তাবাররুজে লিপ্ত কোনো প্রকার অপরাধ ও সংকোচবোধ ছাড়াই। তাদের ভেতর পাপের কোনো বোধ নেই। তারা এটাকে কোনো পাপ বা অন্যায়ই মনে করছে না, বরং নিজেদের পরম অধিকার মনে করছে। তাবাররুজকে তারা পরম আনন্দের সাথে উদযাপন করছে। তাবাররুজ বা সৌন্দর্য-প্রদর্শন নিয়েই তারা পরস্পর অহংকার আর গর্ব করছে। পাপের ওপর তাদের একধরনের অহংবোধ চলে এসেছে। এটা খুবই ভয়াবহ একটি পর্যায়। যে পর্যায়ে এসে বান্দা কেবল সাধারণ কোনো পাপে লিপ্ত হয় না, বরং সে নিজের ঈমানের সীমাকে অতিক্রম করে ফেলে এবং ঈমানকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। 


আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 

كلُّ أُمَّتي مُعافًى إلا المجاهرين، و إنَّ من الجِهارِ أن يعملَ الرجلُ بالليلِ عملًا ثم يُصبِحُ و قد ستره اللهُ تعالى فيقولُ: عملتُ البارحةَ كذا و كذا

‘প্রকাশ্য পাপকারীদের ছাড়া আমার উম্মতের সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর প্রকাশ্য পাপকারী হলো সে ব্যক্তি, যে রাতের বেলা কোনো পাপ কাজ করে, তারপর সকালে এই অবস্থায় উপনীত হয় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর পাপকে গোপন রেখেছেন। অতঃপর সে লোকদের বলে বেড়ায় , আমি গতরাতে এমন এমন করেছি।’


এই হাদিসে সে ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে, যে গোপনে একটা পাপ করে তারপর গর্বের সাথে সে পাপ কাজের প্রকাশ্য ঘোষণা করছে। কিন্তু যে কেবল পাপের কথা বলছে না, বরং প্রকাশ্যে পাপ করে বেড়াচ্ছে, উদযাপন করছে এবং গর্ব ও অহংকার প্রকাশ করছে, তার অবস্থা কেমন হবে? তার অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। 


প্রকাশ্য পাপ কয়েকটি কারণে ভয়াবহঃ

এক. প্রকাশ্য পাপী ব্যক্তির ভেতর থেকে পাপের প্রতি ঘৃণা দূর হয়ে যায়। তার ভেতর অপরাধবোধের পরিবর্তে অহংবোধ চলে আসে এবং সে পাপের ওপর উদযাপনের সাথে অটল থাকে। যা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহী মনোভাবের শামিল। 


দুই. প্রকাশ্য পাপকারী ব্যক্তি কেবল নিজেই গুনাহ করে না, বরং সে অন্যকেও গুনাহের প্রতি আহবান করে। সে তার কাজ ও উদযাপনের মাধ্যমে অন্যকে এই কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। সমাজে এই কাজের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও আগ্রহ সৃষ্টি করে। এই আহবান মৌখিকও হতে পারে আবার কাজের মাধ্যমেও হতে পারে। তার এই কর্মগত উৎসাহের কারণে যারা উক্ত পাপ কাজে লিপ্ত হবে, সবার পাপের একটা ভাগ সেও পাবে পরকালে। 


তিন. প্রকাশ্য গুনাহকারী কেবল ফেরেশতাদের নয়, বরং অসংখ্য মানুষকেও তার গুনাহের ব্যাপারে সাক্ষী বানিয়ে ফেলে। যারা কিয়ামতের দিন জবাবদিহিতার শিকার হলে তার পাপের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে এবং নিজেরা পাপী হিসেবে ধরা খেলে তাকে সর্বপ্রথম দায়ী বানাবে। 


এজন্য প্রকাশ্য পাপের প্রকার হিসেবে তাবাররুজ একটি ভয়াবহ পাপ। এটা সাধারণ কোনো পাপ নয়। এই পাপ আমাকে কেবল গুনাহকারী নয়, কাফের পর্যন্ত বানিয়ে ফেলতে পারে। ফলে তাবাররুজের ব্যাপারে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। তাবাররুজের প্রতি আমাদের ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে।  

লিখেছেনঃ ইফতেখার সিফাত হাফিযাহুল্লাহ্  

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন