৬. আপনি অবাক হবেন যদি আমি চন্দ্র সূর্য তারকারাজি এসব নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি সেটা বলি। আমি বুঝতে পারি না, এত স্পষ্ট আয়াত, সহীহ হাদীস থাকা সত্ত্বেও মানুষ কিভাবে ইসলামকে বিজ্ঞাণের কুফরী আক্বীদাহগুলোর সাথে মেলাতে পারে, কোন যুক্তিতে।
"তিঁনিই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র।সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।"[আম্বিয়া,৩৩]
"সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত আগে যেতে পারে না দিনের, প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সাঁতার কাটে।"[ইয়াসিন,৪০]
এ দুটি স্পষ্ট আয়াত কি যথেষ্ট নয় মানুষকে এটা বোঝানোর জন্য যে সূর্য একটি চলমান বস্তু।নিচের সহীহ হাদীসটির মাধ্যমে সূর্যের চলাচলের একটু সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়।হাদীসটি সহিহ বুখারির কুরআনের তাফসীর অধ্যায়ে পাওয়া যায়।
"আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি কি জান সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, সূর্য চলে, অবশেষে আরশের নিচে গিয়ে সাজদাহ করে। "
এখন এটা বলুন, হাদীসে বলাই হচ্ছে সূর্য চলে।তাহলে এরপরেও সূর্যের গতি নিয়ে কারও সন্দেহ থাকতে পারে কি।আরেকটা ব্যাপার এখানে লক্ষণীয়, বলা হচ্ছে সূর্য আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে।এখন প্রচলিত বিজ্ঞানের বর্ণনা অনুযায়ী কি এটা আদৌ সম্ভব? আপনি যদি অপব্যাখা করতে চান তাহলে বলতে পারেন,সূর্যের আরশের নিচে যাওয়াটা একটা রুপক বর্ণনা, কিন্তু সেটাতেও ভুল হবে।
কেননা, আরশ সপ্তম আসমানেরও উপরে অবস্থিত, আর সূর্য বৈজ্ঞানিক অপব্যাখা মেনে বললেও প্রথম আসমানের নিচেই থাকে, প্রথম আসমানে থেকে সূর্য কিভাবে সপ্তম আসমানের উপরে থাকা মহা আরশের নিচে গিয়ে রবকে সিজদাহ করবে।
আর এ ব্যাপারে অনেক বিস্তারিত হাদীসও আছে, যেটা প্রমাণ করে সূর্য ফিজিক্যালি আরশের নিচে গিয়ে সিজদাহ করে, রুপকভাবে না।
সহিহ মুসলিমের কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীস:
"রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের একবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান এ সূর্য কোথায় যায়?
সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।
তিঁনি বললেন, এ সূর্য চলতে থাকে এবং আরশের নিচে অবস্থিত তাঁর অবস্থানস্থলে যায়।সেখানে সিজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয় ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও।তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়ে উদিত হয়।...শেষে একদিন সূর্য যথারীতি আরশের নিচে তার নির্ধারির স্থানে যাবে।তাকে বলা হবে, "ওঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও।"
অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিম গগনে উদিত হবে।"
আপনি দেখতেই পাচ্ছে উপরোক্ত হাদীসে কি সুন্দরভাবে স্পষ্ট বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে সূর্য বাস্তবেই ফিজিক্যালি আরশের নিচে গিয়ে উপস্থিত হয়, রুপকভাবে নয়।তারপরেও কি এটা মেনে নিতে দ্বিধা বা সংশয় থাকতে পারে?
সহীহ বুখারীর খুমুস অধ্যায়ে একটি হাদীসে আছে,
"এক নবী জিহাদে গেলেন এবং আসরের সালাতের সময় বা তার কাছাকাছি সময় একটি জনপদের কাছে আসলেন।তখন সূর্যকে বললেন, তুমিও আদেশ পালনকারী আর আমিও আদেশ পালনকারী।
হে আল্লাহ্ আপনি সূর্যকে থামিয়ে দিন।
তখন সূর্যকে থামিয়ে দেয়া হল।অবশেষ আল্লাহ্ তাঁকে বিজয় দান করলেন।
এখানে লক্ষণীয়, সূর্যাস্ত যদি পৃথিবীর গতি কারণেই হত, তবে পৃথিবীকে থামানোর জন্য দোয়া করা হত।অথচ দোয়া করা হয়েছে সূর্যকে থামানোর জন্য।এতটুকুই যথেষ্ট এটা দাবী করার জন্য যে, সূর্য চলমান ও যমীন স্থির। সূর্য যমীনকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরছে।
এমন একটা হাদীসের কথা বলব যেটা আপনার প্রচলিত ধ্যান ধারণাকে একদম ধ্বংস করে দিবে ইনশাআল্লাহ্।
তবে হাদীসে যাবার আগে আল কুরআনের একটি স্পষ্ট আয়াতকে বর্ণনা করতে চাই যেটা হযরত যুলকারনাইন (আঃ) এর সম্বন্ধে বলা হয়েছে,
"অবশেষে সে যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছাল, তখন সে সূর্যকে একটি কর্দমাক্ত ঝর্ণায় ডুবতে দেখলো এবং সে এর কাছে একটি জাতির দেখা পেল।"[আল কাহফ,৮৬]
এখানে কত স্পষ্টভাবেই বলে দেয়া আছে যে সূর্য একটি ঝর্ণায় অস্ত যায়, অথচ মানুষ এরও অপব্যাখা করে বলে তিনি সেটা চোখ দিয়ে অবজার্ভ করেছেন, বাস্তবে দেখেননি।তাদেরকে আমি চোখে আঙ্গুল দিয়ে আবু দাউদের কুরআনের তাফসীর অধ্যায়ের একটি হাদীস জানাতে চাই, যেটা উক্ত আয়াতের ব্যাখায় এসেছে,
"আবু যার(রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর পেছনে একই গাধার পিঠে বসা ছিলাম, তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল।তিঁনি আমাকে বললেন," তুমি কি জান এটা কোথায় অস্ত যায়?" আমি বললাম,আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিঁনি বললেন, এটা উষ্ণ পানির এক ঝর্ণায় অস্তমিত হয়।" (সহীহ আবু দাউদ)
এত স্পষ্ট বর্ণনার পরেও কি এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে যে সূর্য বাস্তবিকই একটা ঝর্ণায় অস্ত যায়?
এ বর্ণনা থেকে তো এটাও বোঝা যায় যে,সূর্য এ যমীনের তুলনায় অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা বস্তু, যেটা কিনা এ যমিনেরই এক উষ্ণ ঝর্ণায় অস্ত যায়।
সূরা লোকমানের ২৯ নাং আয়াতে এসেছে,
"তিঁনি সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়োজিত করেছেন, প্রত্যেকেউ চলছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।"
এ আয়াতের ব্যখায় ইবনে কাসীর (রহঃ) ইবনে আব্বাস(রাঃ) এর একটি বর্ণনা এনেছেন, যার ইসনাদ বিশুদ্ধ।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, সূর্য সাফিয়াহ(পেছন ভাগের সৈন্যদল) এর মত কাজ করে।দিনে নিজের চক্রের কাজে লেগে থাকে,তারপর অস্তমিত হয়ে আবার রাতে যমীনের নিচে চলে গিয়ে ঘুরতে থাকে।অতঃপর পরের দিন আবার সকালে উদির হয়।এভাবেই চাদও কাজ করতে থাকে।
কেয়ামতের সময়কার অবস্থা বুঝাতে আল কুর আনে বলা হয়েছে,
"যখন নক্ষত্রসমূহ ঝড়ে পড়বে।"[ইনফিতার ২]
"যখন নক্ষত্রসমূহ খসে পড়বে।"[তাকভীর ২]
বিজ্ঞাণের মতে নক্ষত্রগুলো পৃথিবীর থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন গুন বড়। এত বড় নক্ষত্রপুঞ্জ তাদের তুলনায় ধূলিবৎ এ পৃথিবীতে খসে পড়বে, এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য কোনও কথা।
.
লিখেছেনঃ Aksir Ahmed
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন