বাংলাদেশের ৯০% জনগোষ্ঠী চাচ্ছে সামরিক বাহিনী তথা সেনাবাহিনী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা গ্রহণ করুক।
কি মনে হয় আপনাদের, সেনাবাহিনী জনগণের এই সেন্টিমেন্ট বোঝে না? বহু আগেই বুঝেছে। করোনার সময় "কি লীগ কি লীগ" বলে ছাত্রলীগ পেটানোর পর জনগণের উল্লাস এর উৎকৃষ্ট একটা উদাহরণ। সেনাবাহিনী এগুলো দিয়ে জনগণের পালস মেপেছে।
ক্ষমতার মতো লোভনীয় জিনিসকে বাঙালি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে অধীর আগ্রহে বসে আছে। অথচ সেনাবাহিনী সেটা নিচ্ছে না। কিন্তু কেন?
কখনো প্রশ্ন করেছেন নিজেকে এই রহস্যের ব্যাপারে?
আজকে বাংলাদেশের যেকোনো রাজনৈতিক দলকে যদি এমন সুযোগ দেওয়া হতো, সেটা তারা চোখ বন্ধ করে লুফে নিতো; দেশ চালাতে পারবে কি না ভাবত না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি আইসিইউতে আছে। টের পাচ্ছেন না। পশ্চিমাদের একটা মাত্র ইকনোমিক স্যাংশন আসলেই টের পাবেন। মাত্র একটা ইকনোমিক স্যাংশন।
নভেম্বরে আমেরিকার নির্বাচন শেষ হোক। দেখবেন একের পর এক খেলা শুরু হবে বাংলাদেশে।
বহু বড়ো বড়ো দেশ পশ্চিমাদের ইকনোমিক স্যাংশনের কাছে ধরাশায়ী হয়ে যায়। সেই হিসেবে বাংলাদেশ তো চুনোপুঁটি।
একটা দেশে সামরিক সরকার থাকলে সেই দেশে বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। এই বিষয়টা কি জানেন?
না জানলে বলছি, এর পেছনে দুটো ফ্যাক্টর কাজ করে।
১. সামরিক সরকারের স্থায়িত্ব অনির্দিষ্ট। সাময়িক সময়ের জন্য ক্ষমতা নেয়। সুষ্ঠু বা পাতানো নির্বাচন করে। এরপর কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতা গ্রহণ করে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার তোয়াক্কা তারা করে না। মার্শাল 'ল' তথা নিজস্ব আইনে দেশ চালায়।
তাই সামরিক সরকারের সাথে বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায়িক কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চায় না। নতুন কোনো বিনিয়োগ করে না। বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের এবং ব্যবসায়ের নিরাপত্তা চায়। মুনাফার নিশ্চয়তা চায়। কারণ, নির্বাচিত রাজনৈতিক কোনো দল ক্ষমতায় এসে সেই সকল চুক্তি বাতিল করতে পারে। যেমন, লীগ ভারতের সাথে রেল, বন্দর সহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী যত চুক্তি করেছে, সেসব বাতিল করবে পরবর্তী প্রজন্ম।
তাছাড়া অস্থিতিশীল একটা দেশের মধ্যে বিশাল অংকের বিনিয়োগ কেউই করবে না। বিগত কয়েক সপ্তাহে দেশের অর্থনীতি কত বড়ো একটা ধাক্কা খেয়েছে সেটা লীগই জানে। এমনি এমনি ওরা ইন্টারনেট চালু করেনি। ঠ্যালায় পড়ে চালু করেছে। রাজনীতির সাথে অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
২. সেনাবাহিনী তথা সামরিক বাহিনী একটা দেশের সবচেয়ে বড়ো দেশপ্রেমিক। এটা অনস্বীকার্য। যত বড়ো নেতা-খ্যাতা, আমলা-কামলা, হামড়া-চোমড়া, বুদ্ধিজীবী-সুশিল, অমুক-তমুক লোকদের দেখেন দেশ নিয়ে কান্নাকাটি করে; এদের অধিকাংশই ষাঁড় জাফ্রিক বালের মতো গর্তযোদ্ধা কিংবা মুরগী কবিরের মতো মুরগীযোদ্ধা। দেশের প্রয়োজনে এদেরকে পাওয়া যাবে না।
সেনাবাহিনী রাষ্ট্র পরিচালনা করার সময় অন্যান্য দেশগুলোর সাথে কোনো নেগোসিয়েশন বা সমঝোতায় গেলে নূন্যতম ছাড় দেয় না। সেনাবাহিনী জাস্ট কাউকে গোনায় ধরে না। কারণ, তারা কাউকে ভয় করে না। দেশের জন্য প্রাণ দিতেই যখন চুক্তিবদ্ধ, তখন কাউকে ভয় করার প্রশ্নই তো আসে না।
তাই বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সামরিক শাসন আমলে বিনিয়োগের আড়ালে নিজেদের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে না। তাই বিনিয়োগও করে না। যেমন, লীগকে দিয়ে ভারত যা পাচ্ছে, সামরিক শাসন থাকলে কি সেসবের একচুল পেত? পেত না।
আমাদের মতো দেশের জন্য এটা অনেক বড়ো বাঁধা। ধনী দেশ হলে বিষয়টা অন্যরকম হতো। নিজের হেডম দেখিয়ে চলা যেত। যেমনটা হেডম দেখায় আমেরিকা, চীন, রাশিয়া। এসব দেশ মূলত সেসব দেশের সামরিক বাহিনীই চালায়।
এতো কিছু পরেও লীগ ক্ষমতায় কেন জানেন? কারণ, সেনাবাহিনী সমর্থন দিচ্ছে।
সাধারণ মানুষের কাছে আর্মস পাওয়ার নেই। ওটা আছে সেনাবাহিনীর হাতে। আর্মস পাওয়ার দিয়েই ক্ষমতায় টিকে থাকে, ক্ষমতাচ্যুত হয়, ক্ষমতার অদলবদল হয়।
সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছু করছে না। মানে, আপনার হাতে লাঠি আছে। সাপটা আপনার সামনে। সবাই সমর্থন দিচ্ছে সাপটাকে মেরে ফেলতে। কিন্তু লাঠিয়াল নীরব।
কেন?
সার্জন কখনো ডায়াবেটিসের রোগীর অপারেশন করে না। এতে হিতে বিপরীত হয়।
সাগরে চলমান নৌকায় ফুটো হয়ে গেলে প্রথমে ফুটোটা বন্ধ করতে হয়। এরপর নৌকাটা তীরে ভিড়িয়ে মেরামত করতে হয়। সাগরে ফুটো নৌকার মেরামত করলে নৌকা আরো জলদি ডুববে।
বর্তমান বিশ্বের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে লীগের পতনের বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর কখনোই স্থিতিশীল হবে না। দেশে একটা দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ লেগে থাকবে মিয়ানমারের মতো।
এর পেছনে রয়েছে দুটো কারণঃ
১. চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশের মাটি আমেরিকার দরকার। চীনের কারণে আমেরিকা বিশ্বে ওর আধিপত্য হারাচ্ছে। উপরন্তু চীন-রাশিয়া জোট বিশ্ব রাজনীতির সব খেলার ফলাফল বদলে দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা; প্রতিটি জায়গায় চীন-রাশিয়া জোটের প্রভাব বেড়েছে। আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো মাথা ব্যথা ব্রিকস্ জোট মার্কিন ডলারের একক আধিপত্যকে দমন করতে চাচ্ছে। অনেকটা সফলও হয়েছে। এটা আমেরিকার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন। তাই চীনকে সব দিক থেকে ঘিরে ধরতে চায় আমেরিকা।
বাঙালী ভাবছে লীগকে সরালে এখানে নতুন সরকার আসবে। না। আমেরিকা অন্তত সেটা হতে দেবে না। কারণ, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় থাকে এমন কোনো রাষ্ট্রে নাক গলানো যায় না; সেই রাষ্ট্রে প্রবেশ করে ঘাঁটি নির্মাণ করা তো সম্ভবই না। অর্থাৎ পরাশক্তিরা ঝগড়া করবে; তবে সেটা করবে অন্যের মাটিতে। নিজেদের মাটিতে ঝগড়া করলে নিজের জনগণের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হবে। ওরা তো বাঙালীর মতো বেকুব না যে, খাল কেটে কুমির আনবে।
আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক খারাপ হয়েছে পিলখানার ঘটনার পর। ওদিকে বিডি আর্মড ফোর্সেস চীনপন্থী হয়ে যাওয়ায় সামরিক বাহিনীকে নিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপ নানান অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে।
এমতাবস্থায় সামরিক শাসন শুরু হলে আমেরিকা সবার আগে বিডিতে ইকনোমিক স্যাংশন দেবে। আমেরিকা জানে লীগ কিংবা বিএনপি কিংবা যেকোনো রাজনৈতিক দল আমেরিকার পদলেহন করলেও সামরিক বাহিনী পদলেহন করবে না। নিজের ভূখণ্ডকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
ইকনোমিক স্যাংশন দিলে বাঙালীর পেটে লাথি পড়বে। বাঙালীর রাজনৈতিক জ্ঞান কম। তখন দেখা যাবে আজকে যারা 'সেনাবাহিনী নামে না কেন' বলে চিল্লাফাল্লা করছে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ধ্বস নামলে এই তারাই 'সেনাবাহিনী যায় না কেন' বলে চিল্লাবে।
ঠিক এই সুযোগটাকে কাজে লাগাবে আমেরিকা। পোষা ও বিশ্বস্ত ভৃত্য ইউনূসকে এনে রাষ্ট্র প্রধান বানিয়ে একটা পাপেট সরকার গঠন করবে। এই সরকারের লোকগুলো চলনে, বলনে ও দেখতে বাঙালীর মতো হলেও; চিন্তা, চেতনা ও মননে পশ্চিমা। ওরা পশ্চিমাদের পারপাস সার্ভ করবে।
২. লীগ ছাড়া ভারতকে সেভেন সিস্টার্স সুরক্ষার নিশ্চয়তা কেউ দেবে না। বর্তমানে বাংলাদেশের ৮০% মানুষ চরম ভারতবিরোধী মনোভাব লালন করে।
তাছাড়া রেল, বন্দর সহ যত একপাক্ষিক সুবিধা ভারত বাংলাদেশ থেকে পেয়েছে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। অসম ও দেশ বিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেসব বন্ধ করে দেবে। আর যাহোক, বিডি আর্মড ফোর্সেস এন্টি ইন্ডিয়ান মোটিভ নিয়ে গঠিত। যারা এই বিষয়টা জানেন, তারা আমার কথাটা মানবেন। অজ্ঞরা তর্ক করবে।
তাই ভারতও চাইবে না এখানে লীগ ব্যতীত অন্য কেউ ক্ষমতায় আসুক। লীগ ভারতের কাছে মন্দের ভালো। যদিও অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ভারতই একসময় লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। অন্যথায় শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মূখ্যমন্ত্রী হয়ে থাকতে হবে।
তাই ভারতের উদ্দেশ্য হলো, লীগকে যদি ক্ষমতা থেকে চলে যেতেই হয়, তাহলে ভারত বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নেবে। কিন্তু এতে সবচেয়ে বড়ো বাঁধা বিডি আর্মি।
তাই ভারত বাঙালীকে নিজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। বিডি আর্মিকে ভেঙে তছনছ করতে চাচ্ছে। প্রথম কামড়টা দিয়েছে পিলখানায়। এটা ভারতের বহু পুরনো পরিকল্পনা। ভারত তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারলে ভারতের কাজ ৯০% হয়ে যায়। একটা দেশের সামরিক বাহিনী যত শক্তিশালীই হোক না কেন; নিজ জনগণের সমর্থন না পেলে সেটা বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।
লিখেছেনঃ কারিম শাওন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন