গেরিলা যুদ্ধটা কি বুঝবেন টিটিপি কি করছে বুঝলে
আপনি যদি গেরিলা যুদ্ধটা আসলে কি তা না বুঝেন, তাহলে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে টিটিপি আসলে কি করছে। চলুন একটু বুঝানো যাক।
গেরিলা যুদ্ধকে বলা হয় মশা এবং কুকুরের যুদ্ধ। আপনি মৌমাছি বা ভালুকও বলতে পারেন। মূল ধারণাটি হলো মশা বা মৌমাছিগুলো কুকুরগুলোকে এমনভাবে কাঁমড়াতে থাকবে যে, কুকুরটা একসময় বাধ্য হবে পানিতে ডুব দিবে।
গেরিলাদের শক্তি হলো তারা দুর্বল, কিন্তু খুবই ক্ষিপ্ত। তারা খুব কম সাপোর্টে জীবন ধারণ করতে পারবে, তাদের খরচ কম, তাদের খুব ভারী জিনিসও ক্যারি (বহন) করতে হয় না। তবে তাদের খুব ফিট থাকতে হবে, বেশী কষ্ট করতে হবে, পাহাড়সম ধৈর্য্য ধরতে হবে। এ যুদ্ধ রাতারাতি জিতে যাওয়ার কোন যুদ্ধ নয়। এবং বেশীরভাগ লোকই এই যুদ্ধ বুঝতে পারে না। বরং আমরা মুসলিমরা গত ২০-৪০ বছরের এই যুদ্ধের ক্ষেত্রে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা এবং সম্ভাবনার দ্বার উম্মুক্ত করছি।
গেরিলা যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ঃ
হিট এন্ড রান, এ্যাম্বুশ হচ্ছে গেরিলা যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে। গেরিলারা শুধু হিট এন্ড রান করবে, এ্যাম্বুশ করবে। প্রথমে ছোট-ছোট চেক পোস্টে করবে, তখন যখন বাধ্য হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনা বের করে চেক পোস্ট বাড়াবে, ক্যান্টনমেন্ট দুর্বল হয়ে পড়লে সেখানে বড় অ্যাটাক করবে। তারা বুঝতে পারে না যে, ক্যান্টেনমেন্টে বেশী রাখবে নাকি চেকপোস্টে নাকি কি করবে।
আবার সেনাদের মুভমেন্ট যখন হবে, ধরুন গাড়িতে বসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে, এই সময়টাতে সেনারা ক্লান্ত এবং দুর্বল থাকে তখন গিয়ে এ্যামবুশ করতে হবে। ওখানে বসে থাকা যাবে না কাহিনী করেই চলে আসতে হবে।
এই কাজ করে লাভ কি? এই কাজের উদ্দেশ্য হলো সেনাবাহিনীর খরচ বাড়িয়ে দেওয়া। জনবল কমানো। এটা ঠিক যে তাদের রিক্রুটমেন্ট প্রসেস চলতে থাকবে, কিন্তু মারতে থাকলে সেটার খরচ বাড়বে, দক্ষতা বলুন আর সক্ষমতা সবই কমবে।
সেনা সদস্যরা মনোবল হারাতে থাকবে। তখন সরকার চেষ্টা করবে যে, খরচ কমিয়ে কিছু অঞ্চলে টহল কমিয়ে দিতে, বলা যায় তারা বাধ্য হবে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিতে। কারণ সেগুলো ধরে রাখতে গেলে তাদের খরচ খুব বেড়ে যায়, ব্যাপক প্রাণ হানি হয়।
এই পর্যায়ে গেরিলাদের উচিত না সরকারের সাথে কোন রকমের দরকষাকষিতে যাওয়া। সরকার অনেককে অনেক রকম টোপ দিবে, অথচ এই সময়টাতে গেরিলা সামনে আছে, সরকার পিছনে। বরং যে সব এলাকা ছেড়ে দিবে সরকার, সেখানে গেরিলারা স্থানীয়দের সাথে মিলে একটা ছায়া সরকারের মত ব্যবস্থাপনা তৈরী করবে।
এই পর্যায়টা যখন শুরু হবে, বুঝতে হবে যে গেরিলারা প্রথম ধাপ থেকে দ্বিতীয় ধাপে পৌছেছে। তবে খুব সাবধানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সম্মুখ সমরে গিয়ে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করা যাবে না। এই সময়টাতে গেরিলাদের জায়গা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ করা যাবে না। তাদেরকে জনগণের সাথে মিশে থাকতে হবে।
গেরিলা যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ঃ
একটা পর্যায়ে সরকার শক্তি সঞ্চয় করে, ব্যাপক পরিকল্পনা করে হারানো জায়গাগুলো ফেরত নিতে অভিযান চালাবে। তখন কিন্তু ভুলেও গেরিলাদের উচিত হবে না সরকারের সাথে সম্মুখ সমরে জড়ানো বরং তাদের ওই জায়গাগুলো ছেড়ে দিতে হবে। দাঈশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করতো না। তারা বলতো, আমরা জায়গা ছেড়ে দিলে শরীয়াহ কায়েম করবে কে? কিন্তু তালিবানরা এভাবে শহর ছেড়ে দিত, কারণ তারা জানতো যে কিছুদিন পর এই শহর তারা আবারো লাইটেনিং স্পীডে (আলোর গতিতে) দখল করতে পারবে। এজন্য এত জনবল খরচ করে, এয়ার স্ট্রাইকের সামনে পড়ে, শহর ডিফেন্ড করা গেরিলা যুদ্ধের সাথে যায় না।
আপনারা ঘেটে দেখতে পারেন যে, গত ১০ বছর আগ থেকেই তালিবানরা বিভিন্ন বড় বড় শহর দখল করছে, এত পার্সেন্ট দখল, এই সেই বলে জনগণকে উজ্জিবীত করছিল, কিন্তু রাজধানীতে আসছিল না। তারা আসলে ইউসড টু করছিল। সোমালিয়াতে শাবাবও এমনটা করছে। বিভিন্ন শহর দখল করে মাঝে মাঝে, আবার ছেড়ে দেয়। এইটা হচ্ছে গেরিলা যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে।
এই সময়টাতে জনগণের হৃদয়গুলো জয় করে নিতে হবে, হৃদয় দখলের যুদ্ধ বললেও ভুল হবে না। মিডিয়া কার্যকলাপ পুরোদমে চালাতে হবে। এটা ১০ থেকে ২০ বছরও এমনকি এর বেশীও চলতে পারে। আপনার মনে রাখতে হবে যে, সম্মুখ সমরে যদি আপনি না জিতেন, তাহলে আপনি হারতেসেন। আর গেরিলা যুদ্ধে আপনি যদি না হারেন, যদি টিকে থাকেন তাহলে আপনি জিততেসেন এটা হচ্ছে ধৈর্য্যর খেলা। প্রতিপক্ষ ধৈর্য্য ধরতে না পেরে অনেক ভুল করবে, সিভিলিয়ানদর উপর এ্যাটাক, ধরপাকড় করবে এটা আপনার রিক্রুটমেন্ট বাড়িয়ে দিবে এই পর্যায়ে।
আবার মিডিয়া দিয়ে অপপ্রচারও চালাবে। গেরিলাদের অবশ্যই নিজেদের কাউন্টার মিডিয়া এবং মেকানিসম থাকতে হবে সেগুলোকে অপপ্রচার প্রমাণ করারা জন্য, জনগণকে পাশে রাখতেই হবে। জনগণ হলো পানি, আর গেরিলারা হলো মাছ। পানি যত বিশুদ্ধ/পবিত্র হবে, সহায়ক হবে গেরিলারা ততটিকে থাকবে। ঠিক হামাস যেভাবে এই সমর্থনে টিকে আছে। তাদের ন্যাচালার এ্যাডভান্টেজ (প্রাকৃতিক সুবিধা) নেই, যেটা তালিবানদের ছিল। তাদের কিছু কৃত্রিম সুযোগ-সুবিধা তৈরী করে নিতে হয়েছে যেমন মাটির নীচের সুড়ঙ্গ বা টানেল।
গেরিলা যুদ্ধকে বলা হয় অপ্রচলিত সামঁজস্যহীন যুদ্ধ। যেখানে নিয়মিত আর্মি যেটা লড়ে সম্মুখ সমরে, সেটা হচ্ছে প্রচলিত প্রতিসম যুদ্ধ। এখানে তাই চিরাচরিত অনেক হিসাব-নিকাশ মিলে না। অনেকে মনে করে যে গেরিলা যুদ্ধ হলো বিশৃঙ্খল ভাবে যুদ্ধ করা। বিষয়টা মোটেও তা নয়, অনেকে বলে এটা কাপুরুষের যুদ্ধ। অনেক মুসলিম স্কলাররা এবং আন্দোলন এই যুদ্ধকে অনুমতি দেয় না। অথচ এই যুদ্ধটা হচ্ছে শুধুমাত্র যুদ্ধে এমন একটা কৌশল যেখানে উভয় পক্ষে সক্ষমতায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকে।
এটাকে এজন্য দুর্বলের যুদ্ধও বলা হয়ে থাকে। এবং এই যুদ্ধটা হচ্ছে স্টেট বনাম ননস্টেট এ্যাক্টরের যুদ্ধ। এমনকি স্টেট সমর্থন থাকলেও সেটা হচ্ছে প্রক্সি যুদ্ধ। মূলত সমরবিদ্যার এবং আধুনিক বিশ্বের আসবাব, প্রকৃতি সম্পর্কে না জানার কারণে অনেকে এই যুদ্ধগুলো হারাম, মাফসাদা বলে থাকেন। কিছু আক্ষরিক বুঝের উপর ভিত্তি করে, কিংবা সরকারগুলোকে সমর্থন করতে গিয়ে, কিংবা কমফোর্ট জোন জাস্টিফাই করতে।
বরং আমরা ইসলাম থেকে এর উদাহরণ পাই যে মক্কা থেকে বের হয়ে আসা আবু বাসির (রা) এবং জান্দাল (রা) এর যে বাহিনী মদীনার বাহিরে সমুদ্র উপকূলে কুরাইশদের উপর এরকম হিট এন্ড রান কৌশলে তাদের অবস্থা এত খারাপ করে দিয়েছিল যে, কুরাইশরা পরে বাধ্য হয়ে হুদাইবিয়ার সন্ধির শর্তগুলো লঘু করে। যেই শর্তগুলোকে আপাত দৃষ্টিতে অসুবিধা মনে হচ্ছিল, আবু বাসির আর আবু জান্দালদের গেরিলা যুদ্ধ সেগুলোকে সুবিধায় পরিণত করেছিল সেটাই ছিল সু্স্পষ্ট বিজয়। আপনারা সীরাহ থেকে বিস্তারিত জেনে নিবেন।
আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের জনক একজন মুসলিম, মরোক্কোর মুহাম্মাদ বিন আব্দুল করীম আল-খাত্তাবি। তার ব্যাপারে অনলাইনের ঘাটাঘাটি করুন। যদিও তিনি উত্তর আফ্রিকাকে স্পেন আর ফ্রেঞ্চদের থেকে স্বাধীন করতে পারেননি, কিন্তু তার দেওয়া কলাকৌশল থেকেই মাও সে তুং এই আধুনিক গেরিলা যুদ্ধকে আরো পরিণত শাস্ত্রের দিকে নিয়ে গিয়েছে, যা সে নিজেই স্বীকার করেছে। পরবর্তিতে কমিউনিস্টারা এটার ব্যাপক প্রয়োগ করেছে বিভিন্ন দেশে নিজেদের বিপ্লবী সরকার গঠন করার জন্য।
এরকম শহর দখল, অঞ্চল দখল, ছেড়ে দেওয়া দ্বিতীয় ধাপে চলতে থাকবে। তখন গেরিলারা ধীরে ধীরে ওপেন হওয়া শুরু করবে। একটা মিলিশিয়া বাহিনীর মত এ্যাক্ট করবে। ছায়া সরকার চালাবে, নিজেদের কোর্ট চালাবে। তালিবানরা আগে থেকেই নিজেদের কোর্ট চালু করে ফেলেছিল। স্থানীয়দের থেকে ম্যানেজার নিয়োগ দিবে এবং একটা কূটনীতিক দরজা খুলে সরকারকে বিভিন্ন চাপ দিবে, দাবী জানাবে।
এখন এরকম পরিস্থিতি চলতে চলতে যদি সরকার দুর্বল হয়, গেরিলাদের সাথে সরকার একমত হয়ে যায়। তাহলে তো হলোই শান্তিপূর্ণ উত্তরণ নতুবা গেরিলারা তৃতীয় ধাপে যাবে। যদি কোন ভুল হয়, যেমন তৃতীয় ধাপে ফুল স্কেল ওয়ার শুরু হবে। গেরিলাদের কিছু কিছু ভূমি প্রয়োজনে ছেড়ে দিতে হবে। তারা যদি ডিফেন্ড করতে গিয়ে মরে, তাহলে আবার পুনরায় প্রথম ধাপে ফেরত যাবে।
যেমন দাঈশ প্রথম ধাপে চলে গিয়েছে, যদিও তাদের সুযোগ ছিল এটা এড়ানোর। আবার হামাস বাধ্য হয়েছে, তাদের আবার প্রথম ধাপে ফেরত যেতে হবে। আল-কায়দা চুপচাপ আছে, বুঝার চেষ্টা করছে। ওইদিকে শাবাব কিন্তু দ্বিতীয় ধাপ থেকে তৃতীয় ধাপের যাওয়ার চেষ্টা করছে। সিরিয়াতে দ্বিতীয় ধাপই ছিল, কিন্তু আল্লাহ তা'আলা অনেকগুলো সমীকরণ মিলিয়ে দেওয়ার কারণে তারা ক্ষিপ্তবেগে দ্রুততার সাথে বিপ্লব করে ফেলেছে।
গেরিলা যুদ্ধের তৃতীয় পর্যায়ঃ
তৃতীয় ধাপে গিয়ে গেরিলারা সরাসরি রাজধানীর জন্য অভিগমন করবে। তাদের যেন এয়ার স্ট্রাইক করা না হয়, সেই বিষয়ে তারা কূটনীতি চালাবে, বিপক্ষ দলের লোকদের গোপণে কেনা শুরু করবে, ভয় বা লোভ দেখিয়ে তাদের যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে বলবে। কারণ দীর্ঘ গেরিলা যুদ্ধের কারণে সেনারা খুব ক্লান্ত থাকবে।
সরকার ঠিকমত বেতন দিতে পারবে না, কারণ গেরিলারা সরকারের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলবে। তখন সেনারা যুদ্ধে মনোবোল হারাবে। এই সময়টাতে গেরিলারা সেনাদের মধ্যে নিজেদের লোক ঢুকাবে, স্লিপার সেল থাকবে, অনেককে কিনে নিবে। এর সবগুলাই তালিবানরা করেছে এবং সিরিয়াতেও করা হয়েছে। যখন সময় হয়েছে স্লিপার সেল সক্রিয় হয়ে ভিতর থেকে, আর গেরিলারা বাহির থেকে শহর দখল শুরু করেছে, সরকারি সেনারা শুধু অস্ত্র ফেলে দিয়ে পালিয়েছে, তারা পালাতে বাধ্য!
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হলো যে, পুরো পাকিস্তানের অর্থনীতি সেনাদের অধীনে।
তাদের অফিসারদের অভাব নেই। সৈনিকদেরও খুব সুযোগ সুবিধা আছে। এই সিস্টেমটা ব্রেক করতে হবে। এটা ভেঙে ফেলতে পারলে, সৈনিকরা আর ঠিক মত পারফর্ম করতে পারবে না। কিন্তু পাকিস্তানের জনগণ সেনাদের প্রতি খুব নরম, তারা তাদের হিরো মনে করে, এমনিতে তারা যতই খারাপ হোক না কেন। এছাড়া আলেমদের বড় একটা অংশ সেনাদের পক্ষে ফতওয়া দেয়।
জনগণ তাদের সেক্যুলার না, বরং মুজাহিদ মনে করে। এই কারণে তালিবানদের মতাদর্শগতভাবে ঝামেলায় পড়তে হয়। আফগানের পুতুল সরকারের সেনাদের তাকফির করা জরুরী ছিল না, কারণ স্পষ্টতই বুঝা যায় তারা দালাল, কারণ তাদের প্রতি জনগণের কোন মোহ ছিল না, তারা আনস্মার্ট পুতুল শুধু। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই অনেক শক্তিশালী।
তাদের আছে বিশ্ব সেরা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ISI - Inter-Services Intelligence), আছে নিউক! সেনাবাহিনী আবার নিজেই ব্যবসা করে। বলা হয় প্রতিটা রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী থাকে, আর এদের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনীরই একটা রাষ্ট্র আছে। অর্থাৎ যু্দ্ধটা কঠিন হতে যাচ্ছে।
আরেকদিকে টিটিপি এখনে পশতুন বেইসড। অন্যরাও যোগ দিচ্ছে, তবে সীমিত। পাঞ্জাবী, সিন্ধিদের থেকে বড় কোন ইসলামী হারকাত সেভাবে এই লড়াইয়ে নামছে না। দাওয়াহ গ্রুপ গুলোও রাজনৈতিক পাকিস্তানি সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ করছে না তাই টিটিপিকে একাই লড়তে হচ্ছে। সাথে ইমারাতের স্টেট সাপোর্ট আছে আর কি।
আল-কায়দা বলতে গেলে সেখানে খুবই ক্ষুদ্র, তারা মূলত ক্ষুদ্রই থাকে অপ্রকাশিত হিসেবে। টিটিপিই মূল। আল-কায়দা মূলত কাশ্মীর নিয়ে চিন্তা করছে এবং বাকি জাতিগুলোর মধ্যে মতাদর্শগত দাওয়াতের কাজ করছে।
অনেকে মনে করে যে, যুদ্ধে কোনো কূটনীতি নাই। দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় ধাপের সময় থেকে খুব করে নিজেদের কূটনৈতিক চ্যানেল সক্রিয় করতে হবে গেরিলাদের। বিশ্ব ব্যাপী নিজেদের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ক্যাম্পেইন, মিডিয়া ওয়ার তো আগে থেকেই চালাতে হবে। এ সময়টাতে বিভিন্ন পক্ষের সাথে চুক্তিতে যেতে হবে। লিয়াজু করতে হবে।
আমরা মুসলিমরা বলি শরীয়াহ সম্মত চুক্তি এবং লিয়াজুর কথা। সরকারকে বার্গনিং টেবিলে টেনে আনতে হবে। যদি সরকার স্বাধীন না হয়, তাহলে তাদের বাপকে টেনে আনতে হবে। যেমন তালিবানরা পুতুল সরকারের সাথে না, ডিরেক্ট আমেরিকার সাথে ডিল করেছে। সিরিয়াতে বাশার না, বরং সেখানেও রাশিয়া-আমেরিকার সাথেই ডিল হয়েছে যা হওয়ার পছন্দনীয় কিংবা অপছন্দনীয়। অর্থাৎ ভুলেও পুতুলদের সাথে ডিলে বসা যাবে না।
একচুয়াল কমান্ড যাদের থেকে আসে, তাদের নামতে বাধ্য করতে হবে। তাদেরকে চুক্তি করতে হবে, আফগানে এমন হয়েছে, সিরিয়াতে হয়নি। এজন্য সিরিয়াতে ছাড় দিতে হচ্ছে, আফগানে দিতে হয়নি তেমন একটা। এখানে আল-কায়দার সাথে জুলানী আর তুর্কির মত পার্থক্যটা প্রকটভাবে দেখা যায়।
গেরিলা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে একটা ডিলে আসতেই হবে - যেটা আমরা অনেক সময় মাথায় আনি না। বরং এটাই বাস্তবতা। ডিলের সময় দরকষাকষির টেবিলে মাঠে আপনার পজিশন কত ভালো, মতাদর্শগতভাবে কত দৃঢ়, এবং কত বেশী ভালো কূটনীতি করে ডিল করতে পারবেন, সেটার উপর আপনার সাফল্য নির্ভর করে। অনেকে ডিল মানেই মনে করে আপোষ! ডিল মানে আপোষ না, ডিল তো একটা না একটা করতেই হবে। ডিল কি রকমের করছেন, কিভাবে ডিলটাকে প্রয়োগ করছেন সেটার উপর নির্ভর করে আপোষ নাকি না।
কারণ এখনকার ডিল আর হাজার বছরের আগেকার ডিল একই রকম থেকে যায়নি। এখন ডিল করার পরও, একে অপরের বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ার চালায়, কভার্ট অপারেশন করে। ন্যারেটিভ যে যার পক্ষে রাখতে পারে, ডিলগুলো সে সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন আমেরিকা অনেক ডিল ভাঙে কিন্তু ন্যারেটিভ নিজের পক্ষে রেখে সে সেটাকে কাভার করে। আমরা বলেও কাজ হয় না যে আমেরিকা-জায়োনিষ্টরা আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গ করছে।
তাই আমাদেরও আক্ষরিক বুঝ নিয়ে চুক্তিতে যা লেখা আছে তা পালন করতেই হবে, বিষয়টা এমন না। উমার (রা) বলেন, ইসলামের কোন নীতি দিয়ে ইসলামের ক্ষতি করা যাবে না। আমরা কূটনৈতিক ডিল করবো, তারা যেভাবে চুক্তি ভঙ্গ করে আগ্রাসন চালায়, আমরাও চুক্তি ভঙ্গ করে জায়গা মত সাইজ দিবো, বিইযনিল্লাহ।
লিখেছেনঃ Bearded Bengali
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন