TTP - Part 3 | تحریک طالبان پاکستان

 

 Read in Urdu: Click Here [FBLnk]

 

পাকিস্তানের সাথে ইমারতের লড়াই দুনিয়ার স্বার্থের নাকি আদর্শিক?

অনেকে বলে যে, গণতন্ত্র দিয়ে এক ইঞ্চিও শরীয়াহ কায়েম হয়নি। কিংবা ইসলাম গণতন্ত্র বলতে আসলে কিছু নেই। এটা বাস্তবে সম্ভব না। আমি কথাটা এখন এভাবে না বলে, বলবো যে, ইসলাম গণতন্ত্রের যে মডেল দেওয়া হয়, সেটার সবচাইতে উত্তম সম্ভাব্য উদাহরণই হচ্ছে পাকিস্তান। কারণ এর সংবিধানে ইসলামের কথা লিখা আছে, কুরআন, সু্ন্নাহ বিরোধী আইন বানানো যাবে না এমন কথাও লিখা আছে। কিন্তু আইন বানাবে তারা যারা ভোটে নির্বাচিত হয়। আর সাথে সাথে ডিপস্টেট হিসেবে আর্মি আছে। এবং রাজনীতি এবং আর্মি দুই জায়গায় সেক্যুলারদের অধিপত্য।

এখানে টুইস্টটা হচ্ছে যে, "কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন বানানো যাবে না" এই কথায়। এমনকি বাংলাদেশেও আলেমরা এমন দাবী জানায়, প্লিজ! কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন কইরেন না। এই কথাটা শুনতে অনেক ভালো মনে হলেও, এটা হচ্ছে পরাজিত প্রজার ভিক্ষাবৃত্তির মত, যার কোন বাস্তবতা নাই।

সংবিধানের কথাটা এমন হতে হবে যে, "আইন কেবল মাত্র কুরআন-সুন্নাহ মুতাবেকই হতে হবে" এটা না বলে তারা বলে "কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন বানানো যাবে না" - এটা হলো আদর্শিক পার্থক্যের একটা সূরাত। প্রথমটা হচ্ছে ইমারতে আদর্শ, পরেটা ইসলামী গণতন্ত্রের।

তারপর আরেকটা বিষয় হলো যে, "কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন বানানো যাবে না" এটা কি সামনের সময় থেকে শুধু? আগে যেসব বিরোধী আইন হয়েছিল সেগুলো বাতিল হবে কিনা এই কথাটার স্পষ্ট ঘোষণা দেয় না। এইজন্য পাকিস্তানের সংবিধানে "কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন বানানো যাবে না" এই কথা থাকার পরও, ব্রিটিশদের বানিয়ে যাওয়া সকল কুফর, হারাম এখনও চালু আছে। ইসলাম গণতন্ত্র আসলে সেগুলো মুছতে পারেনি।

কারণ আইন পাশ করতে হলে তাকে প্রতিটা ইস্যুতে জনগণের প্রতিনিধিদের ভোট লাগে যারা আবার কিনা পশ্চিমাদের আশির্বাদ প্রাপ্ত, এমনকি তাদের আইনগুলোও নাকি এনজিও গুলো লিখে দেয়। প্রমাণ স্বরূপ বাংলাদেশে এলজিটিভি আইনের খসড়া এক এনজিও লিখে দিয়েছিলো, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে।

পাকিস্তানে সেটাও পাশও হয়ে গিয়েছিল, সেটাও সেখানে থাকা এনজিও গুলোই লিখে দিয়েছিল। এরকম কত কত আইন যে তারা আমাদের আগোচরে পাশ করাচ্ছে, যেমন জঙ্গি এবং সন্ত্রাবাদ বিরোধী আইন, প্রতিটা মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আছে, হোক গণতান্ত্রিক অথবা রাজতান্ত্রিক। এখন বলুন গণতন্ত্র অনুযায়ী তো জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের প্রতিনিধিরা আইন বানাবে, অথচ আমরা দেখছি, তারা পশ্চিমাদের পছন্দ অনুযায়ী বানাচ্ছে।

গণতন্ত্রের ভক্তরা বলবে যে, এটা সুষ্ঠ গণতন্ত্র না। সুষ্ঠ গণতন্ত্র থাকলে আমরা পশ্চিমাদের মানবো না, জনগণের পছন্দ অনুযায়ী আইন বানাবো। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যে, যদি পশ্চিমাদের না মানার মত ক্যাপাবিলিটি আপানার থাকেই তাহলে আপনার গণতান্ত্রিক সিস্টেমে থাকার দরকার কি? আপনি ইমারত সিস্টেমে চলে আসেন? এখানেই আছে আমাদের আর গণতন্ত্রপন্থীদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব।

তাদের একটা গ্রুপের মতে গণতন্ত্র হচ্ছে শুধুমাত্র পার্লামেন্ট গিয়ে একটা সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে সেক্যুলার সংবিধান বাতিল ঘোষণা করে, পশ্চিমা এবং বাকি স্থানীয় পাওয়ার যেমন ইন্ডিয়া, চায়না, রাশিয়া এদের বিপরীতে গিয়ে শরীয়াহ শাসন ঘোষণা করে বিপ্লব করবে। ঠিক এই চিন্তা নিয়েই এই পথে আশা শুরু হয়েছিল। এটা বাস্তবে সম্ভব কিনা, সেটার কথা বলছি না, বলছি কেবল রূপ রেখার কথা। এদের মতে গণতন্ত্র একটা টুল জাস্ট, সাময়িক অবস্থা। সুযোগ পেলেই আমরা সাহাবাদের সিস্টেমে চলে যাবো!

তাদের আরেকটা গ্রুপের মত হলো যে, আসলে সাহাবাদের সিস্টেমই হতে হবে এমন না। বরং আমাদের আসলে নির্বাচন পদ্ধতিতেই থাকা উচিত। ইমারত নয়, বরং বিপ্লবের পরও ইসলামী গণতান্ত্রিক সিস্টেমে থাকা উচিত। এই জিনিসটা হয়েছিল ৪৭ এর পর পাকিস্তানে। যখন ইসলামের জন্য ব্রিটিশদের থেকে উপমহাদেশের মুসলিমরা স্বাধীন পাকিস্তান তৈরী করলো, তারা ইমারত সিস্টেমে গেল না, তারা গেল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরে সেটাতে ইসলামের চাদর জড়াতে বাধ্য হলো, কারণ রাষ্ট্রটি ইসলামের নামেই তৈরী হয়েছিল।

হ্যাঁ এর আগে পাকিস্তান হওয়ার জন্য ভোটাভুটি হয়েছিল, মুসলিম লীগ নির্বাচনী গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছিল। অর্থাৎ আমাদের সামনে ভোটের রাজনীতি এরপর সেটার মাধ্যমে তুলনামূলক বিপ্লব।  তারা সেটা থেকে ইমারাহ সিস্টেমে না গিয়ে, সর্বাত্মক বিপ্লব না করে, পূর্বের ব্রিটিশ বন্দোবস্ত জারী রাখা এই উদাহরণ আমাদের কাছে আছে।

এই নতুন রাষ্ট্রকে কিন্তু অনেকে ইসলামী রাষ্ট্র বলে। আবার অনেকে বলে এখানে শরীয়াহ কায়েম হচ্ছে না। আবার অনেকে ইসলাম কায়েমের জন্য রাজনীতিও করে। যেমন জামাতে ইসলামী। তাদের মানহাজের সাথে, লক্ষ্যের সাথে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি পুরোপুরি মিলে যায়। অর্থাৎ যেই লক্ষ্যে তারা কাজ শুরু করেছিল, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা অর্জন হয়ে গিয়েছে, তাদের আসলে নতুন করে বিপ্লব করার কিছু নেই।

এই জন্য পাকিস্তানের জনগণ আসলে জামাতকে আলাদা কোন বিপ্লবী অস্তিত্ব হিসেবে ট্রিট করতে পারে না। এখানে আদর্শিক আর কোন পার্থক্য নেই, নেই সিস্টেমেরও। কারণ পার্লামেন্টে গিয়ে ইসলাম কায়েম করার অধিকার পাকিস্তানে আছে। জামাতও এই সিস্টেমের কথাই বলে, সে ইসলামী ইমারত হয়ে খিলাফতের কথা বলে না। হ্যাঁ তারা রিক্রুটমেন্টের সময় বলে যে, ইসলাম কায়েম করতে হবে, কিন্তু তাদের রাষ্ট্রীয় রূপ রেখায় গিয়ে ওই জনগণ যদি বলে, তবে।

প্রকৃতপক্ষে জনগণ কি বলবে? যেটা সবাই জেনেও না জানার ভান করে, তা হলো পশ্চিমারা কি বলবে, বাকি আন্তার্জাতিক বিশ্ব কি বলবে। এরপর পশ্চিমারা এবং আন্তার্জিতক বিশ্ব যতটুকু করতে দিবে। হ্যাঁ বাস্তবে এটা ছাড়া উপায় হচ্ছে না। কিন্তু বলতে তো হবে যে, এটা সত্যিকারের ইচ্ছা না, সন্তুষ্টির পর্যায় না, আমরা বাধ্য হচ্ছি। বরং আমরা দেখি অনেকে এটাতেই খুশি হচ্ছে।

মুসলিমদের পূর্ণ স্বাধীনতার পরও এরকম সিস্টেম রেখে দেওয়ারই দাওয়াহ করে। আমরা দেখি যে সিরিয়াতে তো ভোটাভুটির মাধ্যমে বিপ্লব হয়নি, হয়েছে সশস্ত্র। এখন হওয়ার পরও নিঃশর্ত ইমারাহ সিস্টেমের দিকে যাওয়া যাচ্ছে না,  কারণ ওই যে পশ্চিমারা। তার উপর মুসলিমদের অনেকে আসলে গণতান্ত্রের প্রতি মুগ্ধ, অথবা মুগ্ধ না হলেও, নিজেদের ক্ষমতায় স্টেক রাখার জন্য, অনেক খেয়াল খুশির পালনের সুযোগ রাখার জন্য এই দাবী করছে। অথচ বিপ্লব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়নি।

এখনও দেখবেন যে, পাক-আফগান লড়াইয়ে আমরা মুসলিমরা দুই ভাগ হয়ে গিয়েছি। একসাথে যারা ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে রাজি কিন্তু আদর্শিক ক্ষেত্রে একপক্ষ ইসলাম কায়েমের উপর জোর দেয়, আরেক পক্ষ আসলে পরিচয় ভিত্তিক ইসলামেই সন্তুষ্ট থাকার কথা বলে। তাদের আসলে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটাই আদর্শিক কারণে ভালো লাগে।

যদিও বাস্তবে সেটা না গণতান্ত্রিক, না ইসলামিক। সেটা হলো পশ্চিমা ইকো সিস্টেমের সাথে সম্পর্ক, সেটা সাথে লাইফ-স্টাইলের লেনদেন। যেমনটা এই পক্ষ সিরিয়ার বিপ্লবের পর, মুজাহিদদের নেতারা যখন অনেক ছাড়াছাড়ির কাজ করছে, তারা এতে খুশি হচ্ছে। তাদের মতে দুনিয়াতে এভাবেই চলতে হয়। ইমারত-খিলাফত কায়েম করতে বলে যারা তারা মূর্খ, বাস্তববাদী না। ঠিক আছে, কিন্তু তাদের স্বপ্নটা সৎ, লক্ষটা সঠিক।

যদিও তাদের পক্ষে এই যুক্তি দেওয়া যেত যে, পরিস্থিতির কারণে তারা এরকম করতে বাধ্য হচ্ছে, এটা আদর্শিক অবস্থান না, তাদের পূর্ণ তামকিন নেই। না বরং এটাই তাদের কাছে আদর্শিক অবস্থান। এই জন্য টিটকারী দিচ্ছে, তাদের যারা আদর্শিক ইমারত পদ্ধতির কথা বলে, খিলাফতের কথা বলে। আহহা, জুলানী জঙ্গিদের মনটা ভেঙে দিল - poor জঙ্গিস!

এসব ভেবে তারা খুশি হচ্ছে। তারা আসলে এই বিপ্লব যেই শরীয়াহ কামী শহীদদের রক্তের উপর হয়েছে, তাদের টিটকারী দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে পাকিস্তানের সাথে ইমারতের আদর্শিক দ্বন্দ্ব। কারণ এই টিটকারীর পক্ষের লোকেরা পাক-আফগান লড়াইয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলবে। যদিও তারা পারজিত হবেই, তাদের অনুপযুক্ত ভাবধারার কারণে। কেবল মাত্র মুজাহিদদের বিজয়ের পরই তারা ওই বিজয়ের পদ্ধতিকে টিটকারী দিয়ে নিজেদের নষ্ট-ভ্রষ্ট পশ্চিমা মুগ্ধতার গণতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গাইতে আসবে।

পাকিস্তানের সাথে ইসলামী ইমারতের দ্বন্দ্ব হচ্ছে এই নিঃশর্ত শরীয়াহ কায়েম এবং গণতান্ত্রিক ইসলামের দ্বন্দ্ব। কায়েম করতে গিয়ে আমারা অনেক বাঁধা বিপত্তিতে পড়বো, ভুল করবো, সেটা এক বিষয়। আর শুরুতেই পশ্চিমা মুগ্ধতার গণতান্ত্রিক ইসলামকে সিস্টেম হিসেবে আদর্শিক এবং শ্রেষ্ঠ মনে করা, সেরকম আচরণ করা আরেক বিষয়।

 

লিখেছেনঃ Bearded Bengali

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন