সিরিয়া বিপ্লবের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ | পর্ব ১০

 

জায়োনিষ্টদের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে আমরা নিরব কেন?

জায়োনিষ্টদের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক নিয়ে আমরা খুব সরব থাকলেও, জায়োনিষ্টদের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে আমরা তেমনটা একটা ওয়াকিবহলো না। জায়োনিষ্টদের রাষ্ট্রের বড় একটা অংশ কিন্তু রাশিয়ান ডুয়েল সিটিজেনশীপ রাখে।

এমনকি রাশিয়ানদের বাণিজ্য সেক্টরেও রাশান জায়োনিষ্টদের বড় সিন্ডিকেট আছে। যেমন আমার যতটুকু মনে পড়ে যে, ইংল্যান্ডের চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক একজন রাশান জায়োনিষ্ট।
এরকম আরো অনেক সেক্টদের দেখবেন যে রাশান জায়োনিষ্টরা খুব প্রিভিলেজড। তারাও পর্দার আড়ালেই বেশী থাকে। তাই এটা খুব স্বাভাবিক যে রাশিয়াতে জায়োনিষ্ট লবী খুবই শক্তিশালী।

অনলাইনে রাশান ফ্যানবয়রা জায়োনিষ্টদের ১৮ গোষ্ঠি উদ্ধার করলেও, তাদের পুতিন আব্বা কিন্তু কখনোই জায়োনিষ্টদের বিরুদ্ধে তেমন কিছু করে না। এমনকি রাশাতে আইসিস হামলা করার পরও যখন লোকজন বলতেছিল এটা জায়োনিষ্টদের কাজ যা তা আইসিসকে দিয়ে করিয়েছে।
অথচ পুতিন কিন্তু তার দেশের জায়োনিষ্টদের লবী, তাদের নেটওয়ার্কের উপর কোন ক্র্যাকডাউন চালায় নি। অর্থাৎ এসব প্রোপাগান্ডা হচ্ছে মূর্খ সমর্থকদের জন্য।

এবং রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব করে ইরানও আসলে তেমন কিছুই করতে পারবে না, কারণ রাশিয়া নিজ স্বার্থ শেষে ইরানের জন্য জান-মাল সব দিয়ে দিবে না। যেখানে ইরানীরা সারা বিশ্ব থেকে শিয়া তরুণদের জমা করে তাদের দিয়ে ফিল্ডে লড়িয়েছে। এতে তাদের অর্থনীতি থেকে শুরু করে, জনবল এবং ইমেইজ অনেক কিছু নষ্ট হয়েছে। অথচ বাশার নিজেই ইরানের যে লক্ষ্য সেটার প্রতি লয়েল ছিল না। কারণ বাশারের একচুয়ালি (প্রকৃতপক্ষে) ধর্ম-কর্ম নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই। পুরো নুসাইরী সেক্টটাই এমন।

খ্রিষ্টবাদ থেকে শিয়াইসমের কনভার্ট হয়েও তারা গত হাজার বছর আসলে কখনোই ইসলাম প্র্যাক্টিস করেনি। তারাইভেন জায়োনিষ্ট আর খ্রিষ্টানদের থেকে নিকৃষ্ট এবং গডলেস। তাদের যারা দুনিয়া দিবে, তারা তার পক্ষে।

এই বাশারকে টিকিয়ে রাখার জন্য ইরান এত কিছু করেছে। এমনকি ৪০ বছর আগে খোমেনীর কাছে মুসলিম ব্রাদারহুড হেল্প চাইলেও, সে তা না করে বাশারের বাপ হাফিজ আল-আসাদের পক্ষে গিয়েছিল। অথচ তখন ইরান ব্রাদারহুডকে সমর্থন করে ক্ষমতা আনতে পারলে হয় সত্যিই শিয়া সুন্নী ঐক্য করে জায়োনিষ্টদের বিরুদ্ধে লড়তে পারতো। কিন্তু ইরান তা করেনি।

কারণ ইরান ইনসিকিউরিটতে (নিরাপত্তাহীনতায়) ভুগে যে, সুন্নী মুসলিম ব্রাদারহুড শক্তিশীল হলে তো আল্টিমেটলি (শেষ পর্যন্ত)  নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকছে না। এখন হামাসকে সাপোর্ট করে, কারণ তারা বাধ্য। ফালিস্তিনে তো কোন শিয়া গ্রুপ নেই। এমনকি তারা চেষ্টা করেছিল শিয়া দাওয়াহ-তালিম সেন্টার খুলতে। হামাস টেকনিক্যালি সেগুলা দমন করেছে।

বাশারের প্রতি ইরানে এত ইনভেসমেন্ট, কিন্তু যখনই বাশারকে লোভ দেখালো আরবরা, তখন সে সেইদিকে ঝুকে পড়লো। গাযযার যুদ্ধের কারণে হিজবুল্লাহ যখন জায়োনিষ্টদের সাথে মুখোমুখি তখন বাশার আসলে নিষ্ক্রিয় ছিল। এমন কথা ভেসে আসছে যে ইরান তাকে অগ্ৰগামী করতে পারছিল না।

আবার ওইদিকে রাশিয়াও জায়োনিষ্টদের বিরুদ্ধে এয়ার সাপোর্ট দিতে রাজি হচ্ছিল না। অর্থাৎ প্রথমে রাশিয়া, তারপর বাশার উভয়েই ইরানকে জায়োনিষ্টদের বিরুদ্ধে সাপোর্ট দেয় নাই। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান রাশানদের অনেক ড্রোন সাপ্লাই দিয়েছে।

চিন্তা করেন মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় রাশিয়া শিয়াদেরকে এয়ার সাপোর্ট দিয়েছে, অথচ জায়োনিষ্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় রাশিয়া হিজবুল্লাহকে এয়ার সাপোর্ট দেয় নাই। চিন্তা করেন, হিজবুল্লাহ এয়ার সাপোর্ট পেলে কি তাদের এই যে অপমানজনক চুক্তি করতে বাধ্য হলো জায়োনিষ্টদের সাথে, তা করা লাগতো?

আমেরিকা বা রাশিয়ার সাথে জোট করে আমাদের কি লাভ যদি না আমরা তাদের এয়ার সাপোর্ট, এয়ার ডিফেন্সই ব্যবহার করতে না পারি? বরং তারা নিজেদের স্বার্থের সবটুকু নিবে, কিন্তু করার বেলায় ঠুলা। শিয়া-সুন্নী উভয়ের বেলায়ই।

আফগানে আমরা রাশিয়াকে পারজিত করলাম, আমেরিকা নিজে আসতে পারতো না। ফিল্ডে মুসলিমরা ছিল দেখেই আসতে পেরেছে। যেমনটা ৭১ এ মুসলিম বাঙালিরা মুসলিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে লড়ে জিতেছে। ইন্ডিয়ানরা নিজেরা শুধু যুদ্ধ করতে গেলে কিন্তু পারতো না। তারা তাদের সুবিধাটুকু নিয়েছে, কিন্তু আমরা আমাদের বেওকুফীর কারণে নিজেদের সুবিধাটা নিতে পারিনি।

কারণ আমার ইসলামের আক্বীদাকে রাজনীতি, কূটনীতির নামে জালাঞ্জলি দিয়ে, না রাজনীতি আর কূটনীতির মাঠে জয়ী হয়েছি, আর না ইসলামকে ধরে রেখেছি। আল্লাহর দ্বীন ইসলামকে হিসাব থেকে বাদ দেয়ার ফলাফল হলো, আল্লাহ আমাদের নিজেদের উপর ছেড়ে দেন। দেখো তোমরা যা পারো নিজেরা করো। কিন্তু আল্লাহর দ্বীন সাথে থাকলে, তিনি সাহায্য পাঠাবেনই, বরকত এবং রহমত ঢেলে দিবেনই।
ইরান জায়োনিষ্টদের সাথে সরাসরি লাগতে চায় না, এর কারণ হলো তার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে জায়োনিষ্টরা, আর আরবরা তাকে হেল্পও করবে না।

তারা চায় আরবরা জায়োনিষ্টদের সাথে লড়াই করুক, আবার আরবরাও চায় ইরান নিজে আগে যাক। কারণ এরা প্রত্যেকেই আল-কুদসের থেকে নিজেদের বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
ইরান অস্থিরতা দেখায় কারণ তার আল-কুদসের দখল পাওয়ার স্বপ্ন আছে। এর আগে ইসমাইলি শিয়ারা তাদের উবাইদী সালাতানাত তথা ফাতিমী খিলাফাত নামে আল-কুদসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল আব্বাসী খিলাফতের প্রতিনিধি সেলজুকদের কাছ থেকে। তারপর শিয়াদের থেকে ক্রুসেডাররা আল-কুদস নিয়ে নিয়েছিল।
এর শত বছর পর, সুলতান সালাহউদ্দিন আবারও আল-কুদস জয় করেন, এর আগে ওই ইসলামাইলি শিয়াদের তথাকথিত ফাতিমী খিলাফতও বিলুপ্ত করেন।

কিন্তু ইরানের শিয়ারা কিন্তু ইসমাইলী না, এরা হচ্ছে ১২ ইমামে বিশ্বাসী ইসনা আশারিয়া। এরা হচ্ছে ইরানের সাফাভী সাম্রাজ্যের সন্তান, যারা আল-কুদস শাসনে স্বাদ কখনো পায় নি। এটা তাদের স্বপ্ন। তথাকথিত আরব শাসকদের আল-কুদস শাসন করার স্বপ্নটা নেই। তাই তাদের টিকিয়ে রেখেছে আমেরিকা, নতুবা তাদের গদিও আর থাকবে না।

কিন্তু সুন্নী মুজাহিদ এখন সেটা হোক লোকাল অথবা গ্লোবাল, আল-কুদস তাদের হৃদয়ে। তাদের কোন গ্রুপকেই আমেরিকা-জায়োনিষ্টরা সহ্য করবে না। হয়ত পলিটিক্সের কারণে কখনো কখনো নরমপন্থা অবলম্বন করবে, কিন্তু তারা সুযোগ পেলেই ক্ষতি করবে। যেমন এই মূহর্তে সিরিয়ার মু_জাহিদদের সাথে আমেরিকা-জায়োনিষ্টরা ফুল স্কেলে যুদ্ধে যেতে পারবে না। তাই তাদের পলিটিকাল প্রেশার দিবে, কিছু এয়ার স্ট্রাইক করবে।

 তাদের হাতে যেতে পারে এরকম অস্ত্রভান্ডারগুলো ধ্বংস করবে, এবং মাঠে তাদের প্রক্সি সেক্যুলার, ন্যাশেনালিস্ট, মার্কিসিস্টদের লেলিয়ে দিবে লড়ার জন্য। জায়োনিষ্টরা গোলান মালভূমিতে বাফার জোন ক্রিয়েট করছে যেন মু_জাহিদদের সামনে অল্প হলেও কিছু বাঁধা আগে থেকে তৈরী করে রাখা যায়।


কারাগার শুধু বন্দীশালা নয়!

যখন জাস্ট ৫ মিনিটস পড়ছিলাম, তখন মনে হয়েছিল এত কষ্ট কিভাবে সম্ভব! এখন জেল ভাঙার পর যে কাহিনী গুলো শুনতেসি, সেটা ওই জাস্ট ৫ মিনিটস এর বর্ণনার চেয়েও ভয়ংকর। বরং ওনার সময় তথা ৪০ বছর আগে যারা বন্দী হয়েছিল, তাদের অনেকে এখন মুক্ত হলো, অনেকে সেখানেই শহীদ হয়েছে। মনে হচ্ছে, ওই বোনের ৯ বছর যেন কিছুই না। ওই বোন বেঁচে গিয়েছেন।

অর্থাৎ আমরা এক আফিয়ার কথা জানলেও এরকম শতশত আফিয়ারা বন্দী আছে, তাগুতদের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। আমরা তাদের খবর জানি না,রাখি না।
তবে আমেরিকানরা যে অত্যাচারের জন্য মিশর-সিরিয়া এমনকি আরবে আরো কিছু রাষ্ট্রে যেমন আরব আমিরাত, সাউদীতে পাঠাতো এটা আমি আগে থেকেই জানি।

আল-জাজিজার একজন সুদানী সাংবাদিক মানসুর আদায়ফি কে আল-কায়দা বলে বিক্রি করে দেয়া হয় আমেরিকার কাছে। তিনি গুয়েন্তানামোতে ছিলেন। তার লেখা বইটা বাংলাতে "বিস্মৃতির অন্তরালে" নামে অনুবাদ করা হয়েছে। সেখানে এসব বিষয়ে আরো জানতে পারবেন।
আমেরিকানরা আসলে এরকম নির্যাতন করে, এবং করিয়ে মজা পায়। মূলত এসব রাষ্ট্রগুলোতে আমেরিকাতেও যে তথাকথিত মানবাধিকার আছে, সেটাও নেই - তখন তারা অনেককে এইসব দেশে নির্যাতনে জন্য পাঠিয়ে দেয়, যেমন আমাদের শিক্ষক আবু মু'সআব আস-সুরীকে তারা পাঠিয়েছে।

একজন জিজ্ঞেস করছিল এতজন মানুষকে বন্দী করে রেখে এরা কি মজা পায়? বন্দীদের খাওয়াতে হয়, পাহারা দিতে হয়, এগুলো এক্সট্রা প্যারা না? তারা কেন এমন করে?
আমার অভিজ্ঞতা বলে যে, তারা এগুলো করে, বন্দীদের কষ্ট দেখে মজা পায়। আমি নিজের চোখে সেটা দেখেছি, নিজে অনুভব করেছি যখন বন্দী ছিলাম। এবং তারা এই বিষয়গুলো কম বেশী প্রমাণ ছাড়া প্রচারও হতে দেয়, যেন মানুষের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হয়।

যেমন ইরাকের আবু গারিব কারাগারে [১] আমেরিকান সেনাদের দ্বারা মুসলিমদের লাঞ্ছিত এবং নির্যাতনের চিত্রগুলো ফাঁস করেছিল কারা যেন? তাদেরই লোকজন। অথচ এর জন্য আমেরিকার যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায় নি, বরং মানুষ সেগুলো দেখে আতঙ্কিত হয়েছিল। তার উপর বাশারের কারাগারেও অনেক কিছু আগে ভাইরাল হয়েছিল যে, বন্দীদের খাবার না দেয়ার কারণে একেবারে শুটকির মত হয়ে আছে এমন ছবি। নেটে সার্চ করলেই পাবেন এগুলো।

তারা কষ্ট দিয়ে মারতে পছন্দ করে। আমি গুমে থাকতে ভাবতাম যে, তারা আমাদের খাওয়াই বা দিচ্ছে কেন? তখন তাদের প্যাটার্ন দেখে রিয়েলাইজ (ধারণা/অনুভব) হলো যে, তারা আপনাকে কোন রকম বেঁচে থাকার জন্য কিছু খাবার দিবে যেন, আপনি মরে না যান। কারণ মরে গেলে কষ্ট পেলাম কম। কিন্তু এতটা খাবার দিবে না, যেটাতে ক্ষুধার জ্বালা মিটবে। এতটা ভালো খাবার দিবে না যে, তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারবো। নূন্যতম কিছু খাবার দিবে, সেটাও আবার নোংরা, পঁচা, বাসি।

তারা বিষয়টা উপভোগ করতো। দীর্ঘ কারাবাস থেকে অনেক সময় ক্রস ফায়ার ভালো। কারণ মৃত্যু ইসপার নয়ত উসপার। কিন্তু বন্দী রেখে ধুঁকে ধুঁকে মরাটা, কিংবা না মরে বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টের।

তার উপর নির্যাতনের কারণে শারীরিক সমস্যা থাকে, মানসিক অবস্থা কেমন হয় সেটা আমরা কল্পনা করতে পারবো না। এমনকি আমি নিজে বলছি যে আমরা অনেক অনেক ভালো ছিলাম, যেরকমটা শুনছি সিরিয়ার ক্ষেত্রে।

আল্লাহ তা'আলা সব কিছু দেখছেন। সবকিছুর বিচার হবে। আমাদের কিছু বলে দেয়া লাগবে না। তিনি সব জানেন এবং দেখেন।

লিখেছেনঃ Bearded Bengali

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন