বিয়ের সময় জীবনসঙ্গী নির্ধারণে কীভাবে দ্বীনদারিত্ব নির্ণয় করবেন


 ভাইদের মাঝে অনেকেই বিয়ের সময় জীবনসঙ্গী নির্ধারণের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ততা অনুভব করেন, যে কীভাবে দ্বীনদারিত্ব নির্ণয় করবেন।


এমনিতে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে যার দ্বারা দ্বীনদারিত্ব ফিল্টার করে বের করা যায়। যেমন-

১) কার কার বই ভালো লাগে,

২) পছন্দের আলিমদের নাম কী,

৩) দ্বীনকে নিয়ে পরিকল্পনা কী,

৪) বর্তমানে কী কার্যক্রম করা হচ্ছে,

৫) সালাত এবং পর্দার ব্যাপারে অবস্থান কতটুকু,

৬) সেক্যুলারিজম, ডেমক্রেসি, ন্যাশনালিজম, লিবারেলিজম ইত্যাদির বিষয়ে ধারণা আছে কী না,

৭) সিরাত পড়েছে কি না, মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা কেমন,

৮) কুরআন ও তাফসীর কেমন পড়া হয়,

৯) সে কি বিয়ের পর বস্তুবাদীদের মতো "দেশ বিদেশে ঘুরতে যাবো" "লুতুপুতু মজার লাইফ লিড করবো"এমন স্বপ্ন দেখে নাকি সালাফদের মতো বিলাসহীন কঠিন জীবনে আগ্রহী, আখিরাতকে সুন্দর করার জন্য।

১০) মুসলিম উম্মাহর এবং দ্বীনের বিজয়ের জন্য তাঁর ফিকির কী, আক্বিদা ও মানহাজ কী... ইত্যাদি।


  • এই বিষয়গুলোর ঠিকঠাক উত্তর পেলে আপনি সৌভাগ্যবান। কিন্তু এরকম নারী আপনি লাখে একজনও খুঁজে পাবেন কি না সন্দেহ। তবে এমন ৩টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো আপনার ভবিষ্যৎ স্ত্রীর মাঝে থাকলে তাঁকে আপনি গড়ে নিতে পারবেন। এগুলোকে বলা যায় "না থাকলেই নয়"। যেমন-


১) তাকওয়াবান: এটা এমন বৈশিষ্ট্য, যেটার কারণে আপনি সামনে না থাকলেও আপনার স্ত্রী কোনো প্রকার গুনাহে লিপ্ত হবে না, আল্লাহর ভয়ে। আপনি তো আপনার স্ত্রীকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারবেন না, কিন্তু তিনি আল্লাহর চোখের সামনেই সব সময় রয়েছেন। তিনি যদি তাকওয়া অবলম্বন করেন, তবে তিনি আল্লাহর বিধানে দৃঢ় হবেন, আপনার উপস্থিতিতে কিংবা অনুপস্থিতিতে।


২) আনুগত্যশীল: দ্বীনের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে তাঁর ইলম ও আমলের অবস্থান যেমনই হোক না কেন, তিনি যদি আপনার আনুগত্যশীল থাকেন, তবে আপনি তাকে পরিপূর্ণ হেদায়েতের পথে আহ্বান করে আনতে পারবেন। তাকে ইলম শিক্ষা দিতে পারবেন এবং আমলের দিকে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন। আপনার আকিদা এবং মানহাজ দ্বারা তিনি প্রভাবিত হবেন। তাই এটাকে নূন্যতম কোয়ালিফিকেশনের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।


৩) উম্মাহর প্রতি দরদ: এই গুন নির্ধারণ করে দেয় দ্বীনের ক্ষেত্রে দায়িত্ব কর্তব্যবোধ। দায়িত্ববোধ মানুষকে বদলে দেয়। নির্যাতিত নিপিড়ীত উম্মাহর প্রতি যদি তাঁর দরদ থাকে, তাঁর এই মানবতাবোধ তাঁকে যেমন দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকতে সাহায্য করবে, তেমনি আপনাকে দ্বীন পালনে স্পৃহা যোগাবে। এই গুন একজন মুসলিমকে দ্বীনের শিখড়ে পৌছাতে দিতে পারে।


তাই আপনার ভবিষ্যৎ স্ত্রীর মাঝে অন্য কিছু না থাকলেও অন্তত এই তিনটি বিষয়ই যথেষ্ট। তবে এর জন্য আপনার নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। আপনাকে ইলম অর্জন করতে হবে, আপনার নিজেকে সংশোধন করতে হবে। যারা বিয়ের পর সংশোধন হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তারা বরাবরই বিপাকে পড়েছে। হয়তো আপনার ভবিষ্যত স্ত্রীও ভাবছে বিয়ের পর সংশোধন হবে। দ্বীন শেষে কারোরই সংশোধন হবে কি না সন্দেহ।


আরেকটি বিষয়- কখনো নফসের খায়েশাতকে প্রাধান্য দিবেন না। নির্লজ্জ হবেন না। আপনি একজন গায়রত সম্পন্ন পুরুষ। যেকোনো জাহেলি মানসিকতা ও আচরণ থেকে সতর্ক হোন। দ্বীনের ক্ষেত্রে আপোসহীন হোন। বেদ্বীন ও দ্বীন সম্পর্কে গাফেল নারী বিয়ে করার চেয়ে সারাজীবন অবিবাহিত থাকা অধিক উত্তম। আল্লাহ জান্নাতে সৎকর্মশীল বান্দা এবং শহীদদেরকে উত্তম স্ত্রী দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। আপনার ফোকাস দ্বীনের মাঝেই থাকুক।


-মীর মুমিন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন