‘বোরকা পরে সব করা যায়’ এই ধরনের একটা চিন্তা বা এই চিন্তা থেকে উৎসারিত নানা কর্মকাণ্ড বর্তমানে বোরকা পরিহিত নারীদের ভেতর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা ভয়াবহ একটা চিন্তা। এই চিন্তার কারণেই বর্তমানে বোরকা পরিহিত মুতাবাররিজাহ তথা সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা বোরকা, হিজাব, নিকাব পরে টিকটক ও রিলস ভিডিওতে এসে হেলেদুলে স্লো-মোশন দিয়ে নিজেকে প্রদর্শন করছে, কেউ ট্রেন্ডি সং বা রিমিক্সের সাথে হালকাপাতলা নৃত্যও করছে। ভ্লগ ভিডিও তৈরি করতে এসে নিজেকে প্রদর্শন করছে এবং মানুষের অ্যাটেনশন তৈরি করছে। কেউ কেউ আবার হিজাব নিকাবের মডেলিং করছে। হাতে মেহেদি দিয়ে, ঘড়ি লাগিয়ে নিকাব বা বোরকার কাপড় দুলিয়ে দুলিয়ে ফ্যাশন দেখাচ্ছে।
কেউ আবার মাথায় হিজাব বা নিকাব লাগিয়ে পুরো শরীরে কারুকার্যমণ্ডিত শাড়ি পরিধান করে নতুন ট্রেন্ড চালু করছে। এরকম অসংখ্য চিত্র, আচরণ ও কর্মকাণ্ড দুঃখজনকভাবে আমরা মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে দেখতে পাচ্ছি। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে প্রধানত যে চিন্তাটা কাজ করে সেটা হলো, বোরকা পরে সব করা যায়। (আমি কিন্তু বলিনি, পর্দা করে সব করা যায়। কারণ পর্দা কেবল নির্দিষ্ট পোশাক পরার নাম নয়)
আর এই চিন্তা তৈরি হওয়ার কারণ হলো পর্দার বিষয়টি পুরোপুরি অনুধাবন করতে না পারা। পর্দা কেবল শরীরে নির্দিষ্ট পোশাক জরানোর নাম নয়। বরং এর সাথে ব্যক্তির চিন্তা ও আচরণও সম্পৃক্ত। ব্যক্তির চিন্তা যদি থাকে নিজেকে প্রদর্শন করে বেড়ানো, নিজেকে আকর্ষণীয় হিসেবে অপাত্রে উপস্থাপন করা, তাহলে বোরকা পরেও সে পর্দাশীল হবে না। বরং সে মুতাবাররিজাহ নারীদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।
ব্যক্তির আচরণে যদি অন্যকে আকর্ষণ করার মনোবাসনার মতো কিছু পাওয়া যায়, ব্যক্তির চলাফেরা, অঙ্গভঙ্গি ও আচার-আচরণের মাধ্যমে যদি মানুষের অ্যাটেনশন তৈরির ছাপ থাকে, তবে সে বোরকা নিকাব পরিধান করেও পর্দাশীল হবে না। সেও মুতাবাররিজাহ নারী হবে। এমনিভাবে পরপুরুষের প্রতি বা পরপুরুষের মাঝে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথাবার্তা, হাসিঠাট্টা, সম্মোহনী চলাফেরা ইত্যাদি যদি কোনো বোরকা পরিহিত মেয়েও করে, তবে সেও মুতাবাররিজাহ নারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
- তাই আমরা বলব, বোরকা পরে সব করা গেলেও পর্দা করে সব করা যায় না। আর যে বোরকা পরিধান করে সব করা যায়, সে বোরকা দ্বারা পর্দা হয় না। সে বোরকা দ্বারা তাবাররুজের চর্চা হয়, সে বোরকা দ্বারা আল্লাহর অবাধ্যতার চর্চা হয়। আল্লাহ তাআলার কাছে সে বোরকাই পর্দা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে, যেটা তাবাররুজ থেকে মুক্ত।
- যে বোরকা কেবল কাপড় হিসেবে শরীরে লেগে থাকবে না, বরং নারীর চিন্তাচেতনা ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করবে। যে বোরকা নারীকে ফ্রি-মিক্সিং—গাইরে মাহরাম পুরুষদের সাথে মেশা, হাসিতামাশা ও আড্ডাবাজি থেকে বিরত রাখবে। যে বোরকা তাকে বিনয়, লাজ ও আত্মমর্যাদাহীন কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখবে। যে বোরকা তার চিন্তাকে প্রদর্শনী ও অ্যাটেনশন লাভের উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত রাখবে। এমন বোরকা ও নিকাবই আল্লাহর কাছে পর্দা হিসেবে গণ্য হবে। বাকিসব বেপর্দা ও তাবাররুজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সৌন্দর্য প্রদর্শন নামক প্রকাশিতব্য বই থেকে
লিখেছেন- Iftekhar Sifat (Hafizullah)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন