ফ্রীম্যাসনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
ফ্রীম্যাসন মানে- স্বাধীন নির্মানকর্মী ক্লাব।
এই বাহ্যিক নাম দ্বারা বুঝা যায় – এটা চরিত্র নির্মানকারী একটি সংগঠন। কিন্তু বাস্তবে এরকম নয়। বরং এই মনমুগ্ধকর নামের অন্তরালে এই সংগঠন চরিত্রহনন ও সমাজের অবকাঠামো ধ্বংসে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছে। এটি পৃথিবীর সমস্ত আন্দোলনে মধ্য সর্বাধিক সংহত, অন্তঃশীল ও সন্নিবদ্ধ, ইয়া*হুদী ও জায়ো_নিস্ট/দের আন্দেলন। তাই এর বাস্তব ও প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা ও বিস্তারিতভাবে প্রত্যেক মুসলমানকে এর আসল রূপ সম্বন্ধে অবগত করা জরুরী মনে করি। যাতে করে কোন মুসলমান অজ্ঞাতসারে তাদের বিছানা জালে আটকে না যায়।
উৎপত্তি ও বিকাশঃ
আন্দোলনের উৎপত্তি বা প্রাদুর্ভাব নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে:
এর উদ্ভাবক হল ‘দ্বিতীয় হেরোডিস’। ‘গোপন শক্তি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এর সদস্য সংখ্যা তখন ছিল মাত্র নয় জন।
হায়কল নামক স্থানে সেমিনারের মাধ্যমে তাদের নিয়মতান্ত্রিক অভ্যুদয় ঘটে। এই সেমিনারে প্রত্যেক সদস্য একবাক্যে শপথ করে যে- ‘সংগঠনের যাবতীয় তত্ত্ব- উপাত্ত অত্যন্ত গোপন রাখবে, সংগঠনের প্রতিটি ডাকে সাড়া দেবে। আর যে এই ডাকে কর্ণপাত করবেনা, তার উপহার হবে নির্ভেজাল মৃত্যু’। তাদের হাতে সর্বপ্রথম নিহত হন ‘পি"টার্স’ ‘নেরুন।’ তার ইহুদী স্ত্রী ‘বুবায়ার’ উদ্দীপনায় তাঁকে হত্যা করে।
কিছু মনীষী বলেনঃ এই আন্দোলনের প্রাদুর্ভাব হয় আরও পরে। তারা বলেন- ‘১৩৭৬ সালে বৃটিশ জেনারেল এসেম্বলীর প্রথম ম্যাসন্নী সদস্য সম্বন্ধে সন্ধান পাওয়া যায়, এর পূর্বে এদের কোন হদিসই পাওয়া যায় না। ১৭১৭ সালে তারা প্রথম সেমিনার করে। এবং ল্যাটিনী নাম ARO BUARTEU CONORIUM গ্রহণ করে তাদের বিকৃত আক্বীদা-বিশ্বাস সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করে’!
ফ্রীম্যাসন নামের ব্যবহারঃ
এই আন্দোলনের শেঁকড় সন্ধানী ডঃ মুহাম্মদ আলী যুবার গবেষণা হল- সূচনায় তারা ‘গোপন শক্তি’ ও এধরনের সমার্থ নাম দিয়ে তাদের কর্মসূচী অব্যাহত রাখে। অতঃপর ১৭১৭ সালে লন্ডন কনফারেন্সে ‘ফ্রীম্যাসন’ নামটি নিবার্চিত করে। এই কনফারেন্সের সভাপতি ছিলো স্কটিশ বংশোদ্ভূত ‘জেমস অ্যান্ডারসন’ (১৬৮০-১৭৩৯ ইং) । সেই সর্বপ্রথম নিয়মবিধি’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রণয়ণ করে, যা ফ্রিম্যাসনদের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ। ১৭২৩ সালে এটি লন্ডন থেকে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়।
আবার কোন কোন রহস্য সন্ধানী গবেষক বলেন- ‘ফ্রীম্যাসন’ নামটি ‘কোড ফ্রাইডি বোয়ালের’ (CODE FORIDE। BOUILLAR) (১০৬১-১১০০ ইং ) ব্যবহার করে। যাকে ক্রুসেডার;রা প্রথম ক্রসেড যুদ্ধের পর বায়তুল মুকাদ্দাসের রাজা মনোনয়ন করে।
অন্যান্য নামঃ
জার্মানীতে তারা ‘ফ্রীম্যাসন’ নামের আড়ালে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছিল। হিটলার যখন অবগত হলেন- এরা ইহুদীদের ছায়াশ্রিত, তখন জার্মানীতে তাদের সমস্ত অফিস-দপ্তর বন্ধ করে দেন। তারা তখন খোলস পাল্টিয়ে ‘জার্মান হাউস ক্লাব’ ( চিপায় পরলে শয়তানও সোজা হইয়া যায় হা হা ) নাম গ্রহণ করে। অতঃপর যখন তাদের বোধগম্য হল- এই রূপটিও সচেতন মানবের নিকট দুর্বোধ্য নয়, তখন সংগঠনের নাম নবায়ন করে রোটারী ক্লাব’ নামে রূপায়ন করল। পর্যায়ক্রমে তারা চাতুর্যতার আশ্রয় নিয়ে লায়ন্স ক্লাব’ ‘বিনাই বার্থ ইত্যাদি নাম গ্রহণ করে।
রোটারী ক্লাবঃ
১৯০৫ সালে পল. পি হ্যারিস আমেরিকার শিকাগো শহরে এই ক্লাবের গোড়াপত্তন করে। ধীরে ধীরে বিশ্বের আনাচে-কানাচে এর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়ে। ‘ইন্টারন্যাশনাল রোটারী ক্লাব’ নামে তারা সন্নিবদ্ধ। ক্লাবের হেড কোয়ার্টার আমেরিকার ‘এফাভেস্টেনে।
এলাকার গন্যমান্য সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণতঃ এর সদস্য হয়। এলাকার গণ্যমান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এর সদস্য হয়। ক্লাবের বৃদ্ধির জন্য বিদ্বানরাও থাকে, যারা অজ্ঞাতে এর জালে ফেঁসে যায়। রোটারী ক্লাবের লায়লপুর শাখা (বর্তমানে ফয়সালাবাদ) শহরের মান্যবর ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে একটি দাওয়াতের আয়োজন করে। এতে শহরের কিছু উলামায়ে কেরাম আহুত ছিলেন এবং তারা শরীকও হন। তারা যদি সজ্ঞানে হাজির হন, তারপরও ক্লাবকে অলংকৃত করার জন্য যথেষ্ট।
লায়ন্স ক্লাবঃ
১৯৫১ সালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে এই ক্লাবের গোড়াপত্তন করা হয়। পরবর্তীতে তা ওয়াশিংটনে স্থানান্তর করা হয়। বিশ্বব্যাপী তার অসংখ্য- অগণিত ব্রাঞ্চ আছে।
নেতৃস্থানীয়, ক্ষমতাসীন সরকার, নবাবও মান্যবর ব্যক্তিরা সাধাণতঃ এর সদস্য হয়।
বিনাই বার্থ ক্লাবঃ
১৮৩৪ সালে এই ক্লাব প্রতিষ্টা হয়। ১৯০৩ সালে এই ক্লাবের শুধুমাত্র বার্লিনের একটি সেন্টারের প্রায় আশিটি শাখা ছিল। বর্তমানে এর হেডকোয়ার্টার আমেরিকায়। এই ক্লাব নারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং প্রায় এর সকল সদস্যই ইহুদী নারী। এই ক্লাবসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ডঃ মুহাম্মদ আলী যু’বী প্রণীত ‘আল-মাসূনিয়াহ ফিল ‘আরা’ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করতে পারেন।
শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্যঃ
এই ধর্মবিদ্বেষী সংগঠনের গোড়াপত্তনে ছিল দুই পশ্চিমা ব্যক্তি। একজন ইউরোপিয়ান- ‘আদীম ওয়েইস হাপ্ট অন্যজন আমেরিকান ‘আলবার্ট পাইক’ । এদের মধ্যে প্রথমজন ১৭৪৮ সালে জার্মানীতে জন্মগ্রহণ করে।খ্রিষ্টধর্মে পান্ডিত্য লাভ করে ধর্মীয় অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। এই পরমোন্নতির পর এমন রসাতলে যায় যে- ধর্মবিদ্বেষী হয়ে আস্তিকতাকে বিসর্জন দেয়। ১৭৭০ সালে ইহুদীদের সঙ্গে হাত মিলায়। তাদের শিল্পচাতুর্য ও কুটবুদ্ধিকে সম্বল হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের সহায়তায় ‘পরমাগ্রহের মিলন’ নামে ফ্রীম্যাসনের একটি অঙ্গঁসংগঠন রাখে। তারপর বিশ্বব্যাপী বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে গঠিত ‘বৈশ্বিক সরকার’ প্রতিষ্টার শ্লোগান উত্তোলন করে। এই সুন্দর শ্লোগানে অনেক বড় মাপের সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদরা আবিষ্ট হয়ে পড়েন। যে সংস্কারধর্মী শ্লোগান সে উত্তোলন করেছিল, তা ছিল বাহ্যিক মোহনীয়। বস্তুত এই সংস্কারের অন্তরালে ছিল বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও ভূপৃষ্টের
যাবতীয় ধর্ম-মতবাদকে জ্যান্ত কবর দেওয়া।
মৌলিক কর্মসূচীঃ
এই ভীতিপ্রদ ও রক্তক্ষয়ী স্কীম বাস্তবায়নে সে যে মৌলিক পদ্ধতি অনুসরণ করে-তা ছিল নিম্নরূপ:
ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কবজায় আনতে সম্পদকে ব্যবহার করা। সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায় পৌঁছতে প্রয়োজনে নারীদের ভোগসামগ্রী হিসেবে পেশ করা’। যাতে এরা আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে বাঁধা দাঁড়ায়। বরং তারা হবে আমাদের দাবারগুটি।
বর্তমানে তাদের তিনটি স্কুল এই কর্মসূচি পালন হচ্ছে:
•প্রথমটি স্কটল্যান্ডের শহর গর্ডন্স টাউনে অবস্থিত।
•দ্বিতীয় জার্মানীর শহর ছালামে ।
•তৃতীয়টি গ্রীসের শহর অ্যানাভ্রিটায় ।
তাদের তৃতীয় প্রধান কর্মসূচী হল- তথ্য-প্রযুক্তি ও মিডিয়ার (রেডিও, টিভি ও পত্রিকা) উপর করায়ত্ব কায়েম করা। যাতে এগুলো তাদের মর্জি মাফিক আবর্তিত হয়।
এই ভয়াবহ প্ল্যান তৈরী করে,
সংস্করের অন্তরালেঃ
তাদের অঘোষিত শ্লোগান খুবই চমৎকার ও সম্মোহিনী। কিন্তু এর বাস্তব ও প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ। আদীম ওয়েইস হাপট বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে ‘বৈশ্বিক সরকার’ প্রতিষ্ঠার যে শ্লোগান উত্তোলন করেছিল-তাতে প্রভাবিত হয়ে অজস্র বুদ্ধিজীবি ও বৈজ্ঞানিকরা তার পতাকাতলে সমবেত হন। কিন্তু এই শ্লোগান শুধু শ্লোগানই ছিল, যাতে করে গুণীজনকে কবজা করা যায় তার মূল লক্ষ্য ছিল। বিশ্বের যাবতীয় ধর্ম-মতবাদের বিলোপ সাধন। যার মোটামোটি ধারণা পাওয়া যায়-১৮২৯ সালে অনুষ্ঠিত ‘নিউইয়র্ক কনফারেন্সে’ তাদের ‘রাইট’ নামী এক বক্তার সম্ভাষণ থেকে। সে বলেছিল- ‘আমাদের সংগঠন ধর্মদ্বেষী,। নাস্তিক ও সন্ত্রাসী মুভমেন্টের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন’। আর ঠিক এই বছর (অর্থাৎ ১৮২৯ সালে) কমিউনিজাম বা সমাজতন্ত্রের আবির্ভাব হয়। ‘বৈশ্বিক সরকার’ প্রতিষ্ঠার শ্লোগানধারী এই সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা এতই ভয়াবহ যে-‘স্বীয়হীন স্বার্থ চরিতার্থে এরাই রক্তক্ষয়ী প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব''যুদ্ধ সংঘঠিত করে’। এটা কোন লৌকিকতা নয়,বরং বাস্তব ও প্রমাণসিদ্ধ।
রহস্যাবৃত ফ্রীম্যাসনঃ
ফ্রিম্যাসনদের আন্দোলন মানব সভ্যতার সর্বাধিক অন্তর্গূঢ় আন্দোলন। এর সদস্যদের রয়েছে ৩৩টি স্তর। প্রতি স্তরের সদস্য উর্ধ্বস্থ সদস্য সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।
নবাগত সদস্যকে প্রথমে একটি ঘুটঘুটে অন্ধকার কক্ষে নিয়ে আসা হয়। সেখানে থাকে মানব দেহের কঙ্কা'ল, খুলি ও বিষাক্ত কৃত্রিম সাপ। এই কক্ষকে বলা হয় ‘চিন্তা-ভাবনার কক্ষ’।
এর দ্বারা নবাগতকে শিক্ষা দেয়া হয় যে- উঁচুস্তর লাভের জন্য সমূহ প্রতিকুল অবস্থা অতিক্রম করতে হবে। গৃহাভ্যন্তরে একজন চীফ অবস্থান করে। সে নবাগতের উদ্দেশ্যে পূনরাবৃত্তি করতে থাকে-তুমি কি ফ্রীম্যাসন হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ??
নবাগত যদি প্রত্যুত্তরে ইতিবাচক জবাব দেয়, তা হলে গাইড তাকে চক্ষু বন্ধ করে গলায় রশি বেঁধে একটি হলরুমে নিয়ে যায়। সেখানে দুইটি খুঁটির মধ্যবর্তী স্থানে তাকে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। অবশেষে তাকে বলা হয়-‘তুমি একটি কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছ। তাই অঙ্গীকার ও পাক্কা হলফ উঠানোর পূর্বে চাইলে তোমার সোনলী অতীতে ফিরে যেতে পার’। যদি নবাগত অটল ও অবিচল থাকে তাহলে যদি নবাগত অটল-অবিচল থাকে চীফ তাকে এক গ্লাস সুপেয় ও অপর গ্লাস তিক্ত পানি পান করিয়ে বলে – ‘মানব জীবন এই তিক্ততায়ও বিনাশ হতে পারে’!
শপথ গ্রহনঃ
যদি নবাগত ম্যাসনরা স্বীয় অবস্থানে অটল থাকে, তাহলে তাকে মস্তকাবনত করে পবিত্র ধর্মগন্থ (যেমন – তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআন..) দেখিয়ে চীফ বলে – তুমি আঁধার কক্ষে অনেক আলোকিত করেছ। সংগঠন তোমার রক্তের শেষ ফোঁটা পর্যন্ত প্রবাহিত করার শপথ নিয়ে তোমার দায়িত্ব গ্রহন করছে। তুমি কি এখনও এর সদস্য হতে উদগ্রীব? যদি নবাগত ইতিবাচক ইঙ্গিতে মাথা নাড়া দেয় তাহলে শোধানো হয়- তুমি এখন কি চাও? ‘যা চাইবে দেওয়া হবে । ফলে চীফ বলে- তোমাকে তা বিতরণ করা হবে। তাবৎ তার আঁখিযুগল কালপট্টি ও গ্রীবাদেশ রশি দ্বারা বাঁধা রয়েছে। এই শপথগ্রহণের পর তা- থেকে মুক্ত করা হলে সে দেখতে পায়-তীক্ষ কোষমুক্ত তর''বারী মুখ ও বুক বরাবর তাক করা। তাকে বলা হয়- ‘এই তরবরীগুলো তোমার সংরক্ষক। তুমি যদি শপথভঙ্গ কর তাহলে এগুলোই হবে তোমার ভক্ষক! আর এই গলদেশের রশিই হবে ফাঁসির কাষ্ঠ। এখন তুমি আমাদের সহোদরের মত। তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্য অন্যান্য সহোদরের মতই’। এমনি ভাবে নবাগত প্রথম এভাবে নবাগত প্রথম স্তরের সদস্য হয়।
পদোন্নতিঃ
তারপর ধীরে ধীরে তার যোগ্যতা ও সংগঠনে অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের ভিত্তিতে পদোন্নয়ন করা হয়। সে প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তর, ধীরে ধীরে বিশতম স্তরে উন্নীত হয়। প্রতিটি স্তরে উন্নীত হওয়ার সময় তার শপথের নবায়ন করতে হয়। এই- পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শপথনামা অত্যাধিক দুস্কর ও তিক্ত শর্তারোপ করা হয়। উদাহারণ স্বরূপ: আমি শপথ করছি যে-
(ক) সংগঠনের যাবতীয় সংকেত ও কোড অত্যন্ত গোপন রাখব।
(খ) সংগঠনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কোন দায়িত্বহীনতা প্রকাশ করব না। কারও ভয় প্রদর্শনে বিচলিত হব না। তাতে আমার প্রাণ পাখি উড়ে গেলেও।
(গ) আত্মীয়তার বন্ধন, রক্ত ও বংশের টান ও জাতীয় স্বার্থের উর্ধে আমার মিশনকে অগ্রাধিকার দিব।
(ঘ) মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব-সবার সঙ্গ পরিত্যাগ করব। যাতে কেউ-ই আমার মিশনের বাঁধা না হয়।
ফ্রীম্যাসনের বাহ্যিকরূপঃ
এই আন্দোলনের বাহ্যিক দিকগুলো অত্যন্ত লোভনীয় ও মনোমুগ্ধকর। বাহ্যত বুঝা যাবে – এটি একটি সামাজিক বা ধর্মীয় সংগঠন। কিন্তু প্রকৃত রূপ সম্পূর্ণ বিপরীত।
আসুন, প্রথমে বাহ্যিক দিকগুলোর প্রতি নজর বুলিয়ে নিই, তারপর অভ্যন্তরীণ রহস্য নিয়ে আলোচনা করব।
আল্লাহর উপর ঈমান
তাদের দাবী- তারা ঈমান বিল্লাহর প্রতি আহবান করে। একথার দলীল তাদের প্রাচীনতম গ্রন্থ ‘পুরাতন অসিয়তসমূহ’ – যা ১৭৩৮ সালে প্রণয়ন করা হয়। এই গ্রন্থের প্রণেতা দাউদ ক্যাসিলীর হস্তলিখিত পান্ডুলিপিটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের বাইবেল সেকশন ষ্টোর:১৭, সেল্ফ: অতে সংরক্ষিত আছে।
তার সংক্ষিপ্ত অসিয়তগুলো:
‘প্রত্যেক (ফ্রিম্যাসন্রী) ভাইয়ের উপর কর্তব্য হলো- গির্জা, পাদ্রী ও রাব্বীদের সমীহ ও শ্রদ্ধা করা। এই তিনটিকে স্বীয় আত্মার মত হেফাজত করা’। যে নবাগত সদস্য হয় তাকে সর্বপ্রথম এই নুসখাটি দেয়া হয়। এ দ্বারা যে নবাগত সদস্য হয় তাকে সর্বপ্রথম এই নুসখাটি দেয়া হয়। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে- তাদের কাছে আল্লাহর উপর ঈমান অবশ্য কর্তব্য। তাদের সেমিনারের সূচনাও সমাপ্তি প্রথানুসারে আল্লাহর নাম দ্বারা করা হয়।
শ্লোগানঃ
তাদের শ্লোগান মনে এতই রেখাপাত করে যে- মনে হয়! এরাই ধর্মের প্রকৃত ধারক-বাহক। তাদের শ্লোগান হলো- ‘‘আযাদী, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব’’।
নবাগতকে প্রথম বৈঠকেই জানিয়ে দেয়- ‘তারা উত্তম চরিত্রের প্রতি আহবানকারী ও উত্তম বস্তুসমূহের ধারক’। প্রকৃতপক্ষে তার বিপরীত।‘
ফ্রীম্যাসনের অভ্যন্তরঃ
উল্লেখিত শ্লোগানই ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক। কিন্তু এগুলো কেবলমাত্র ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর হাতিয়ার। প্রকৃত পক্ষে এগুলোর নাম-নিশানাও নেই। বরং এগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষী।
তাদের অভ্যন্তরীন বা প্রকৃত লক্ষ্য
শয়তানের উপর পূর্ণ আস্থা
অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে যে- তারা শয়তানের উপর আস্থাশীল ! কিন্তু বাস্তবকে তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই! কারণ, এর জলন্ত প্রমাণ রয়েছে তাদের দস্তাবেজও দলীলপত্রে। জেনারেল আলবার্ট পাইক ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই আন্দোলনের জেনারেল কাউন্সিলের প্রধানদের উপদেশ দিতে গিয়ে এক চিঠিতে লেখেন-
‘আমাদের উচিত হলো -আমরা জনসাধারনকে এই বুঝাবো যে- ‘আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখি এবং তারই ইবাদত করি’। কিন্তু আমাদের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের এ সত্য ভুললে চলবে না যে- এই সমস্ত কুসংস্কারের অন্তরালে আমাদের শয়তানী আক্বীদা-বিশ্বাসকে অবশ্যই সংরক্ষিত রাখতে হবে’।
সে আরও লেখে-
‘শয়তানই আমাদের প্রকৃত প্রভু।(নাউজুবিল্লাহ) কিন্তু পরিতাপের বিষয় অ্যাডোনাই ও এরকম। (অ্যাডোনাই ল্যাটিন ভাষার শব্দ, যার অর্থ- প্রকৃত উপাস্য ও জগৎ স্রষ্টা।) সঠিক ও বাস্তব দর্শন এই যে- শয়তানের উপর অ্যাডোনাইসম ঈমান রাখা অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু শয়তান কল্যাণ ও আলোর প্রভু, আর অ্যাডোনাই অন্ধকার ও নির্বিচারের প্রভু’।( নাউজুবিল্লাহ)
ধর্মের সঙ্গে সংঘাতঃ
ফ্রীম্যাসন সদস্যরা , আল্লাহর অস্তিত্বের অস্বীকার, শয়তানের উপর পূর্ণআস্থা ও বন্তুকে প্রকৃত উপাস্য মনে করা (নাউজুবিল্লাহ) তো তাদের দলীল-দস্তাবেজ দ্বারা প্রতীয়মান হলো। এতেই শেষ নয়- বরং ধর্মের ধ্বজধারীদের প্রকৃত ও আন্তরীন দৃষ্টি কোন হলো- ‘তারা ধর্মের শত্রু ও ধর্ম তাদের শত্রু’ ।
তাদের ইষ্টার্ণফার্নিচ বিধানমালারঃ
১ম ধারায় লেখা আছে
ফ্রীম্যাসনের কোন ধর্ম নয়, এবং কোন ধর্মীয় বিধানের অনুপ্রবেশ ও তার কাছে পছন্দনীয় নয়’।
২য় ধারায় লেখা আছে
ইহা কোন সদস্যকে ধর্ম অনুসরণে জোর জবরদস্তি করে না। সে যা চায় করবে। ধর্মের ব্যাপারে তার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। চাইলে ধর্মের কোন কাজ করতে পারে, না চাইলে নাও করতে পারে’।
১৮৫৬ সালে ফ্রান্সে একটি বুলেটিন প্রকাশ করা হয়, তাতে ছিল-
‘আমাদেরও ধর্মের মধ্যকার সংঘাত বন্ধ হবার নয়। আর আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত দমবোনা যতক্ষণ না সমস্ত উপাসনালয় ধুলিসাৎ হয়’। (যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন)
১৯২৩ সালের একটি বুলেটিন প্রচার করা হয়ঃ
‘ধর্মপ্রাণ লোকেরা গোটা বিশ্বের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়; আমরা সমস্ত ধর্মের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হতে কুন্ঠা/বোধ করব না। কারণ, ধর্মই মানবতার চিরশত্রু’।(নাউজুবিল্লাহ)
১৯০০ সালে বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত তাদের আর্ন্তজাতিক সেমিনারে এক বক্তা এই পর্যন্ত বলে-
‘আমরা কেবল ধর্মনিষ্ঠদের উপাসনালয়ের উপর বিজয় লাভ করেই ক্ষান্ত হব না, বরং আমাদের মূল লক্ষ্যইহলো – ভূ-পৃষ্ঠ হতে এদেরকে উপড়ে ফেলা’।
নগ্নতা ও বেহায়াপনাঃ
নগ্নতা ও বেহায়াপনা তাদের কাছে অতি স্বাভাবিক। ক্লাবসমূহে নগ্ন নৃত্যের ও সমুদ্রতীরে বিবসন স্নান করা তাদের কাছে শরমের কারণ নয়। এর উদাহারণ হলো- ফ্রান্স ম্যাসনারীদের প্রধান ও ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিবার্ণ বিলিউম কর্তৃক লিখিত ‘বিবাহ’ গ্রন্থটি। ফ্রিম্যাসনরা প্রকাশ করে ও কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করে। এটি অধ্যয়ন করলে বুঝা যায় যে – পৃথিবীতে এর চেয়ে অশ্লীল যৌনতার বই আর হতে পারে না। এ গ্রন্থের লেখক ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত (ফ্রান্সের) প্রধানমন্ত্রী ছিল।
তাদের মধ্যবর্তী পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব এতই অটুট যে – যদি ম্যাসনের ভাই বা আন্দোলনের পথে – ধর্ম-দেশ, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির যে কেউ অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ম্যাসন্রী ভাই বা আন্দোলনেরই প্রধান্য হবে।
পৃথিবীতে বিস্তৃত গুপ্ত সংগঠনগুলো উপর দিয়ে চকচক করলেও ভিতরে বিদঘুটে।
প্রবাদে আছে - “চকচক করলেই সোনা হয় না”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন