পিরিয়ড মহিলাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার জরুরি অংশ। তাই পিরিয়ড চলাকালীন পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গেলে প্রথমেই আসে প্যাড বদলের প্রসঙ্গ। ঋতুস্রাবের সময়, মহিলারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্যানিটারি প্যাডের উপর নির্ভর করে। এখন জানা দরকার যে স্যানিটারি প্যাড কি সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ?
স্যানিটারি প্যাডগুলি কি ক্ষতিকারক?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার নিরাপদ বলে শুনে আসছেন হয়তো, তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের ফলে যৌনাঙ্গে ক্যানসার হতে পারে। জরায়ু ক্যানসার বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার শরীরে ডাইঅক্সিন প্রকৃতির কারণে ঘটতে পারে।
নিচের ছবিটি লক্ষ করুন,গোল বৃত্তের মধ্যে কালো যে জিনিসটা দেখা যাচ্ছে তা আসলে একটি জীবন্ত পোকা।
যেসব ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলি স্যানিটারি প্যাডে পাওয়া গেছেঃ
ডাইঅক্সিন: ডাইঅক্সিন একটি রাসায়নিক যা স্যানিটারি প্যাডগুলি ব্লিচ করতে ব্যবহৃত হয়। ডাইঅক্সিন শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকারক এবং অনেক শারীরিক বিপদের কারণ হতে পারে।
কৃত্রিম সুগন্ধিঃ
প্যাডে জমা হওয়া রক্তের গন্ধ কারোর পছন্দ নয় কোম্পানি তা জানে। তাই একধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সাথে ব্যবহৃত হয় বাড়তি মিষ্টি গন্ধ যা প্যাকেট খুললেই টের পাওয়া যায়। এই সুগন্ধির রাসায়নিক উপাদানগুলো মারাত্মক জ্বালাপোড়া এবং অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে সক্ষম।
প্যাডে ব্যবহৃত পেট্রোলিয়ামজাত পলিমার নিজ ওজনের ত্রিশ গুণ রক্ত শোষণে সক্ষম। একই কারণে প্যাডও হয় খুব পাতলা। এই বিশেষত্বই যৌনাঙ্গে ফোস্কা, অ্যালার্জি, প্রজনন সমস্যা এবং টক্সিক শক সিনড্রোমের কারণ।
পিরিয়ডের শেষে বা মাঝামাঝি বেশিরভাগ মেয়ের যৌনাঙ্গে প্রচন্ড চুলকানি, জ্বলুনি এবং গা গরম হয়। এগুলোই টক্সিক শক সিনড্রোম। যা দিনের পর দিন অবহেলা করে চলেন অধিকাংশ নারী।
স্যানিটারি প্যাডগুলিতে ব্লিচ থাকেঃ
স্যানিটারি প্যাডগুলিতে তুলো ব্যবহৃত হয়। তুলো বাস্তবের রং ময়লা এবং হলুদ। তবে এটি কোনও প্যাডে ব্যবহার করা হলে এটি প্রথমে ব্লিচ দিয়ে উজ্জ্বল এবং সাদা করা হয়। সাদা স্বাস্থ্যকরণের সঙ্গে জড়িত, আমাদের বেশিরভাগ বিশ্বাস করে যে কোনও কিছু যদি সাদা হয় তবে এটি পরিষ্কার। একই চিন্তা প্যাডেতেও, এই রাসায়নিকটি ব্যবহারে লিভারের ক্ষতি হতে পারে এবং ত্বক কালো হতে পারে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ডাইঅক্সিন, ইমিউন সমস্যা, পেলভিক প্রদাহ, হরমোনজনিত কর্মহীনতা, ডায়াবেটিস এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করতে পারেঃ (সন্তান জন্মদানের অক্ষম)
রক্তের গন্ধ নিয়ন্ত্রণ করতে বেশিরভাগ প্যাডে ডিওডোরেন্ট বা নিউট্রালাইজার যুক্ত করা হয়। সুগন্ধি প্যাডগুলির সাথে ঝুঁকি হলো তারা আপনার উর্বরতাটিকে ভুল উপায়ে প্রভাবিত করে। কৃত্রিম পারফিউমের ব্যবহার জন্মগত ত্রুটিগুলি এবং ভ্রূণের বিকাশে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। ত্বকে জ্বালা করা ছাড়াও এটি যৌনাঙ্গে সংক্রমণ এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে।
ক্যানসার হতে পারেঃ
বিজ্ঞাপনে স্যানিটারি প্যাডকে আপনার কাছে আকর্ষণীয় করতে বলা হয়– কত হালকা, কতটা লম্বা সময় ব্যবহার করা যায়, কত তাড়াতাড়ি রক্ত শুষে নিতে পারে, কতটা সুগন্ধ ছড়ায় ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য। এসবেই লুকিয়ে আছে মহাবিপদ। স্যানিটারি প্যাড যেন লিকপ্রুফ হয় আর বেশি আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে সেজন্য প্রাকৃতিক তুলার বদলে ব্লিচড সিনথেটিক ফাইবার বা রেয়ন ব্যবহার করা হয়। ব্লিচ থেকে ডাইঅক্সিন তৈরি হয়। প্যাড ব্যবহারে শরীরে কোনো স্থানে র্যাশ হয়, চুলকায় আর সে জায়গাটা কালো হয়ে যায় ডাইঅক্সিনের কারনে। ডাইঅক্সিনযুক্ত প্যাড বছরের পর বছর ব্যবহার করলে ভ্যাজাইনা ও সার্ভিক্স এরিয়ায় এই বিষ জমে সার্ভিকাল ক্যান্সার এবং ওভারিয়ান ক্যান্সার হবে।
স্যানিটারি প্যাডে থাকা কেমিক্যালস একজন মহিলার শরীরে ক্যানসার এবং বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। সার্ভে-টি করা হয়েছিল ভারতের সর্বাধিক বিক্রিত ১০টি স্যানিটারি প্যাড ব্র্যান্ডের উপর। রিসার্চার ড. অমিত বলেন, "আমাদের অবাক করেছে স্যানিটারি ন্যাপকিনে একাধিক ক্ষতিকারক রাসায়নিকের অস্তিত্ব। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে কারসিনোজেন(ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান), রিপ্রোডাক্টিভ টক্সিন(গর্ভনাশক উপাদন), এন্ড্রোক্রিন প্রতিরোধক এবং অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান!"
কীটনাশক বিপত্তি:
স্যানেটারি প্যাডে ব্যবহৃত তুলা কৃষি জমি থেকে আসে। তুলা ফসলের পোকামাকড় থেকে দূরে রাখতে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। তুলোতেও তার প্রভাব পড়ে এবং এটি রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এ ছাড়া সুতির মধ্যে ফুরান নামক একটি রাসায়নিক থাকে যা দেহে প্রবেশ করতে পারে।
তবে স্যানিটারি প্যাড যেন লিকপ্রুফ হয় আর বেশি আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে সেজন্য প্রাকৃতিক তুলার বদলে ব্লিচড সিনথেটিক ফাইবার ব্যবহার করা হয়।
এই রাসায়নিক আর ব্লিচড সিনথেটিক ফাইবারের ফলে ক্যানসার, বন্ধ্যাত্ব, থাইরয়েডের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
টক্সিক লিঙ্কের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. আকাঙ্ক্ষা মেহরোত্রা বলেন, "ভ্যাজাইনা যে পর্দা দিয়ে তৈরি তা মূলত মিউকাস মেমব্রেন। মিউকাস মেমব্রেন শরীরের ক্ষরণকার্যে সাহায্য করে। রাসায়নিক উপাদান শোষণ করার ক্ষমতা এর অনেক বেশি। স্যানিটারি প্যাডের ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান মেমব্রেনে খুব দ্রুত শোষিত হয়ে দেহে ঢুকে যায়।"
জনপ্রিয় দশটি ব্র্যান্ডের প্রায় সব স্যাম্পলেই ফ্যাথেলেটস এবং ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস(VOC–যাতে থাকে বিষাক্ত বেনজিন ও এসিটোন) পাওয়া গেছে। এই দুই উপাদান শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসার সৃষ্টি হবে। প্রডাক্টগুলোয় আরো পাওয়া গেছে কিছু কেমিক্যাল যেগুলো ইউরোপের বহু দেশে নিষিদ্ধ!
স্যানিটারি প্যাডের বিকল্প রয়েছে
অনেকগুলো নিরাপদ বিকল্প প্যাড থাকলেও পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যকর হচ্ছে সুতি কাপড়ের প্যাড (দোকানে খুঁজলে পাবেন) যা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
আগেরকালে মা,নানী,দাদীরা সুতির পাতলা কাপড় ব্যবহার করতো মূলত ওইটাই নিরাপদ ছিল,ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকালে আবার ব্যবহার করা যায় নিরাপদ ভাবে ,আমরা যত আধুনিক, আরামপ্রিয় হচ্ছি ততই ভয়ংকর সব রোগ আবিষ্কার করে চলছি, নিজেদের শরীরে বাসা বাঁধতে সাহায্য করছি... সতর্ক হওয়া জরুরী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন