পিনাকীনামা পর্ব ২


___➌

পিনাকী ভট্টাচার্য কি অখণ্ড ভারতের সমর্থক?

জি সন্দেহাতীতভাবে।


শুনুন, হিন্দুরা বাংলাদেশকে ভারত থেকে পৃথক কোনো দেশ মনে করে না। বাংলাদেশের হিন্দুদের ধর্মীয় সকল দিকনির্দেশনা আসে ভারত থেকে। ভারত তাদের কাছে পবিত্র ভূমি। হিন্দুদেরকে ছোটোবেলা থেকেই শেখানো হয় যে, তাদের পবিত্র ভূমি মুসলমানরা আরব থেকে এসে দখল করেছে। তাদের মন্দির ধ্বংস করেছে। হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করেছে। হিন্দুদের সম্পত্তি গনিমত হিসেবে গ্রহণ করেছে। হিন্দুদের দাস-দাসী বানিয়েছে। এরপর একসময় মুসলমানদের কারণেই এই পবিত্র ভূমি বিভক্ত হয়েছে। এটাকে যেকোনো মূল্যে পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ নিয়ে হিন্দুরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী একটু একটু করে এগুচ্ছে। মুসলিম ছদ্মবেশে হিন্দুরা গোয়েন্দাগিরি করছে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মসজিদে ১৮ বছর ইমামতি করার পর ফাঁস হয়েছে যে ওই ইমাম আসলে ভারতের গোয়েন্দা ছিল। এমন বহু দাঁড়ি-টুপিওয়ালা হিন্দু গোয়েন্দা আছে। এদেরকে সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, আলেম বানিয়ে বক্তৃতা দিয়ে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। সেই হিসেবে সাধারণ হিন্দুরা প্রকাশ্য ভারতের সমর্থক হবে এটাই স্বাভাবিক।


ধরুন আগামীকাল মক্কা-মদিনা অমুসলিমদের দখলে চলে গেল। মুসলমানরা তখন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং তা পুনরুদ্ধারের জন্য কতটুকু উদগ্রীব থাকবে? একইভাবে ভারত হলো হিন্দুদের কাছে মক্কা-মদিনার মতো। (ইহুদিদের কাছে জেরুজালেম। কম্যুনিস্টদের কাছে রাশিয়া।)। 

মক্কা-মদিনার ভূমি মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ আর হিন্দুদের কাছে গুরুত্বহীন। ভারতের ভূমি মুসলমানদের কাছে গুরুত্বহীন। তাই বলে হিন্দুদের কাছেও সেটা গুরুত্বহীন হবে এমনটা ভাবা অযৌক্তিক।


তাই হিন্দু মানেই হিন্দুত্ববাদী। আর হিন্দুত্ববাদী মানেই তাকে গোমূত্র পান করতে হবে, গোমাংস খাবে না, ব্যাপারটা এমন না। বৃটিশ আমল থেকেই হিন্দুত্ববাদ ভারতের জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়েছে। হিন্দুরা বৃটিশ আমল থেকেই সংগঠিত হয়েছে। বৃটিশরাও ওদেরকে মুসলিমদের বিপক্ষে সংগঠিত হতে সম্পূর্ণ সহায়তা করেছে। বিশ্বের কোথাও এক ইঞ্চি মাটিতেও যেন খি লা ফ ত কায়েম হতে না পারে সেই ব্যাপারে অমুসলিমরা একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে। নীল নকশা এঁকে তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করছে। আর মুসলমানরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু'চারটে কিলগুঁতো খাচ্ছে। ঘুরে দাঁড়ানোর নিজেদের পরিকল্পনা তো নেই; বরং যুগে যুগে পিনাকী ভট্টাচার্যরা একটু তেল মারা কথা বললে এই বেকুব মুসলমানরা বগল বাজাতে বাজাতে বগলের চামড়া ছিঁড়ে ফেলে। ভারত রাষ্ট্র এবং ওর সংবিধানটাই হিন্দুত্ববাদী। যার মূল লক্ষ্য হলো হিন্দু বা সনাতনীদের স্বার্থ রক্ষা করা, ভারতের ভূমি পুনরুদ্ধার করা। কংগ্রেস নিজেকে সেকুলার দাবি করলেও ৫টি স্বাধীন ভূখণ্ড দখল করার মধ্য দিয়ে হিন্দুত্ববাদের মিশন সর্বপ্রথম এই দলটাই বাস্তবায়ন করেছে। কংগ্রেস আর বিজেপির মধ্যে পার্থক্য শুধু গোমূত্র ও গোমাংসের ব্যাপারে প্রথম দলটা সহনশীল আর দ্বিতীয় দলটা উগ্রবাদী।


একটা দেশে দুই বা ততোধিক রাজনৈতিক দল থাকতেই পারে। এর মানে এই নয় যে দলগুলো তাদের জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে বিভক্ত। প্রতিটি দলের কাছে জাতীয় স্বার্থ আগে। তবে লক্ষ্য পূরণে একেক দলের পরিকল্পনা একেক রকম হয়। আমেরিকার রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের দিকে তাকান বুঝতে পারবেন। ওদের নিজেদের ভেতরে পারস্পরিক কামড়াকামড়ি থাকলেও জাতীয় স্বার্থে পররাষ্ট্রনীতি একই।


মি: পিনাকী বিজেপি, আরএসএস, শিবসেনা, ইসকনের বিপক্ষে বলে। ভারতের কোনো রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে বলার মানে কি ভারতের বিপক্ষে বলা? এটা তো একটা ১২ বছরের বালকও বুঝবে। ভারতের কতিপয় দলের বিরোধিতা করা আর ভারতের বিরোধিতা করা এক জিনিস না। এমনকি সে ভারতের গোটা হিন্দু সমাজকে হিন্দুত্ববাদী বলতে নারাজ। সে মনে করে বাংলাদেশের সব সাধারণ হিন্দু নিরীহ। তাহলে হিন্দুত্ববাদ কি ভূতের গায়ে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে? সে মুসলমানদের শত্রুকে বন্ধু বানিয়ে উপস্থাপন করছে যা গত পোস্টে উল্লিখিত কুরআনুল কারিমের আয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত। গোটা ভারতের হিন্দুরা যখন উগ্রবাদী চেতনায় উজ্জীবিত, তখন মি: পিনাকী স্রেফ মোদিকে দোষারোপ করে ময়লাগুলোকে কার্পেটের নিচে লুকোতে চাচ্ছে। এটা একটা বিশাল সমস্যা। অথচ গোটা ভারতের হিন্দুরা হিন্দুত্ববাদী না হলে ভারতের মতো গনতান্ত্রিক একটা দেশে মোদি বারবার কখনোই ক্ষমতায় আসতো না। সবকিছু এভাবে চললে পরের টার্মেও আবার মোদিই আসবে। লিখে নিন।


পিনাকী ভারতের বিপক্ষে দু'একটু বলেন বটে। তবে এটাও ভারত বিরোধিতা না। কিভাবে? পার্থক্যটা ধরতে পারবেন যদি ইলিয়াস হোসাইনের ভারতবিরোধী কথাগুলো শোনেন। পিনাকী ভট্টাচার্যের ভারতবিরোধী কথা আর ইলিয়াস হোসাইনের ভারতবিরোধী কথাগুলোর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। একটু সূক্ষ্ম দৃষ্টি থাকলেই তফাতটা ধরতে পারবেন।


পিনাকী ভট্টাচার্য কেবল আওয়ামী লীগকে ভারত যেসব বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে বা করছে সেসব নিয়ে ভারতের সমালোচনা করে; এর বেশি কিছু না। এটাও একপ্রকারের আওয়ামী লীগ বিরোধিতা। অর্থাৎ পিনাকীর চোখে ভারতের দোষ ভারত কেন আওয়ামী লীগকে আগলে রাখছে। (যদিও আমি প্রমাণ সহ পিডিএফ বুকে দেখিয়েছি যে ভারত-আওয়ামী লীগ সংসার বহু আগেই ভেঙেছে।)। আচ্ছা বাংলাদেশের জন্য ভারত নামক সমস্যাটা কি আওয়ামী লীগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ? আজ অথবা কাল, আওয়ামী লীগের পতন নিশ্চিত। কারও ক্ষমতাই চিরস্থায়ী না। কিন্তু আজকে আওয়ামী লীগের পতন হলে কি ভারত ভালো হয়ে যাবে? ভারতে মুসলিম নির্যাতন, বাংলাদেশে হিন্দুদের আস্ফালন, হিন্দুত্ববাদীদের উগ্রতা, বাংলাদেশের মুসলমানদের দিকে ভারতের হিন্দুদের চোখ রাঙানি, অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা চেষ্টা বন্ধ হয়ে যাবে?


পিনাকী মূল সমস্যাটা না ধরে ছাল-বাকল নিয়ে টানাটানি করতে শেখাচ্ছে।


বর্তমানে বাংলাদেশ নিজের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য চীনের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা বাধ্যতামূলক। দাঁড়ানোর জন্য বিকল্প জায়গা না থাকলে একজনের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। আর রাজনীতিতে এক হাত ধরে চললে বড়ো দেশগুলো ছোটো দেশগুলোকে চাকর-বাকরের চোখে দেখবে। সেই হিসেবে চীন হলো বাংলাদেশের জন্য উত্তম বিকল্প হেল্পিং হ্যান্ড। এতে করে পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটা কমে আসবে, এসেছে। পাশাপাশি ভারতের আগ্রাসী আচরণ অনেকটা কমেছে। এটা গুড সাইন। তাছাড়া অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড়ো বাঁধা হলো চীন, একমাত্র চীন। শুধু বাংলাদেশের জন্য না; অনেক দেশ এখন এই নীতিতে চলছে। চীনমূখী হয়েছে। পশ্চিম নির্ভরতা কমিয়েছে। তাছাড়া চীন এমন কিছু প্রজেক্ট বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করছে যা কি না ভারতের জন্য বিশাল মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। (এগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা পিডিএফ বুকে পাবেন।)।


কিন্তু মি: পিনাকী সেই চীনেরই বিরোধিতা করছে। অপরদিকে আমেরিকার প্রশংসা করছে। উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে চীনের বিরোধিতা করলে ১৬ আনা কার লাভ? জি ভারতের। কারণ চীন ভারতের প্রধান শত্রু। একইভাবে উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে আমেরিকার পক্ষ নিলে ১৬ আনা কার লাভ? জি ভারতের। কারণ আমেরিকা ভারতের প্রধান মিত্র। হিসেব দুয়ে দুয়ে চার মিলেছে?


____➍

পিনাকী ভট্টাচার্য আসলে কে?


সে ভারতের 'র' -এর এজেন্ট। প্রমাণ কি? প্রমাণ পিনাকী নিজেই। 

প্রথমত গোয়েন্দাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করা ব্যক্তি নিজের আসল পরিচয় দেবে এমনটা আশা করা বোকামি। তার কাজকর্ম থেকে বুঝে নিতে হবে।


বলতে পারেন–তার এমন কোনো কাজ বা বক্তব্য এখনও চোখে পরেনি যেটা দেখে তাকে 'র' -এর এজেন্ট বলব। আমিও ঠিক এই কথাটাই বলি।


পিনাকী জামায়াতের পক্ষ নিয়ে কথা বলে। জামায়তের প্রকাশনী তার বই ছাপে। তাই লোকে তাকে জামায়াতি বলতে পারে। দাবির পেছনে লজিক আছে। একই লজিকে পিনাকীকে হেফাজতি বলা যায়। বিএনপির মাউথপিস বলা যায়। একসময় বাম রাজনীতি করেছে। তাই তাকে ছুপা বাম বলাটাও লজিকাল। পিনাকী ভট্টাচার্য জন্মগত ব্রাহ্মণ হিন্দু। তাই তাকে গান্ধীর মতো ছুপা হিন্দুত্ববাদীও বলা যায়। 


কিন্তু সে এমন কি করল যে লোকে তাকে 'র' -এর এজেন্ট বলে? 


এটা কিন্তু তার নিজের মুখের কথা। সে তার লেখা ও ভিডিওতে দাবি করে লোকে নাকি তাকে উক্ত ট্যাগগুলো দেওয়ার পাশাপাশি 'র' -এর এজেন্ট ট্যাগ দেয়। পেছনের ট্যাগগুলো দেওয়ার ঘটনা সত্য ও যৌক্তিক। কিন্তু 'র' -এর এজেন্ট ট্যাগটা পিনাকীর নিজের বানানো। কারণ, প্রকাশ্যে যেই কাজ সে করেনি সেটা তাকে লোকে বলবে না। বাঙালি এখনও এতোটা দূরদর্শী ও বিচক্ষণ হয়ে উঠতে পারেনি। তবুও সে 'র' -এর এজেন্ট ট্যাগের কথাটা বারংবার কেন তুলে আনে?


আসলে এখানেই লুকিয়ে আছে মূল রহস্য। ইহুদিদের একটা কৌশল হলো ওরা মিথ্যাকে এমনভাবে এতো বেশি প্রচার করে যেটা একসময় মানুষের কাছে সত্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সমালোচনাকারীরা পিনাকীকে যেসব ট্যাগ দেয় পিনাকী সেসবের কোনটাই না এবং সাধারণ মানুষও পিনাকীর এই নিরপেক্ষতাকে বিশ্বাস করেছে। কিন্তু চোরের মন তো পুলিশ পুলিশ। সে যা না সেসবের সাথে সে যা সেটাও সে মিশিয়ে দিয়েছে। তাকে যেসব ট্যাগ দেওয়া হয়েছে সেগুলো যেমন সে প্রচার করে। যেই ট্যাগটা তাকে দেওয়া হয়নি সেটাও সে প্রচার করে। কারণ তার মুখ থেকে ট্যাগ দেওয়া যেকোনো নাম বের হলেই তার অনুসারীরা সেই নামের অপবাদ থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ ভাববে। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে সে নিজের আসল পরিচয়টাকেও নিজে থেকে ওই ট্যাগ লিস্টে যুক্ত করে দিয়েছে, যেন তার অনুসারীরা তাকে পেছনের সকল ট্যাগের পাশাপাশি 'র' এর এজেন্ট ট্যাগ থেকেও নিরপেক্ষ বলে বিশ্বাস করা শুরু করে।


পিনাকী ভট্টাচার্য বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে গিয়েছে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার না করে৷ তাহলে সে কি যাদুকর? না। সে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। এরপর সেখান থেকে ফ্রান্সের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে এবং এম্বাসিতে গিয়ে ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন করেছে। এগুলো একদিনের কাজ না।


তাছাড়া সে কোনো আম জনতা না। সে বাংলাদেশের পাবলিক ফিগার এবং বাংলাদেশের প্রশাসনের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। তাই ভারতের প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এসব জটিল কাজ সে করে ফেলবে এটা অসম্ভব। তাছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত ফ্রেঞ্চ দূতাবাসে না গিয়ে ভারত থেকে সে ভিসা নিতে গেলে ভারতে অবস্তিত ফ্রেঞ্চ দূতাবাসের কাছে যৌক্তিক কারণ দর্শাতে হবে এটাই স্বাভাবিক।


তো এতো কিছুর মাঝে সে আজকে ফ্রান্সে। সুতরাং খুব সহজেই এটা অনুমেয় যে, বাংলাদেশের প্রশাসন তথা আওয়ামী প্রশাসনের বিপক্ষে গিয়ে ভারতের প্রশাসন অবশ্যই মি: পিনাকীকে সহায়তা করেছে। (আওয়ামী লীগ-ভারত তালাক হয়েছে এটাও এর একটা প্রমাণ।)


বুঝলাম পশ্চিমারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাই পিনাকীকে বিনা প্রশ্নে আশ্রয় দিয়েছে। কারণ পশ্চিমাদের কিছু বাংলাদেশী দালাল লাগবে। কিন্তু ভারত কেন এবং কি হিসেবে পশ্চিমাদের এই খেলায় পিনাকীকে সহায়তা করেছিল? 

লিখেছেনঃ কারিম শাওন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন