পিনাকীনামা পর্ব ১


 

ইসলামপন্থীদের একটা বড়ো অংশ মনে করে,


১. পিনাকী ভট্টাচার্য হিদায়াতের ছায়াতলে এসে মুসলিম হয়ে গেছে বা হচ্ছে বা হবে।

২. সে ইসলামের খেদমত করছে বা করতে চাচ্ছে।

৩. সে মুসলিমদের বন্ধু হিসেবে শাহবাগী তথা বাঙ্গু সেকুলারদের বিপক্ষে কথা বলে।

৪. সে ভারত বিরোধী। বাংলাদেশকে ভারতের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে চায়।

৫. বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের মুসলমানদের অমঙ্গল সে চায় না।

৬. সে আওয়ামী লীগ বিরোধী। বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতে চাচ্ছে।


আপনারা কি জানেন মিঃ পিনাকী কি ধরণের আকিদা বা বিশ্বাস লালন করে?


প্রথমত, সে একজন সাবেক শাহবাগী। শাহবাগ তৈরির মূল কারিগরদের একজন। সে একজন পাক্কা সেকুলার।


দ্বিতীয়ত, তার বিশ্বাস হলো–একজন মহান সৃষ্টিকর্তা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। সে নিজেকে নাস্তিকও বলে না, আবার আস্তিকও বলে না। এ ধরনের মানুষরা নিজেদেরকে সংশয়বাদী হিসেবে পরিচয় দেয়। তার মানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা, মালাইকা (ফেরেশতা), কিতাব, নবুওয়াত, কেয়ামত, শেষ বিচার, জান্নাত, জাহান্নাম কোনো কিছুকেই পিনাকী ভট্টাচার্য বিশ্বাস করে না। ইসলামে এই ধরনের মানুষকে কি বলে? জি কাফের বলে।


তৃতীয়ত, সে নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। ধর্ম পালন করলে নিজের বাপ-দাদার ধর্মই পালন করবে বলে অঙ্গীকারনামা আছে তার।


ও আরেকটা কথা, পিনাকী ভট্টাচার্য কিন্তু সমকামিতায় বিশ্বাসী। সে নিজে সমকামী কি না জানি না। তবে সমকামের সমর্থনকারী। একবার তার পুরাতন ফেবু আইডিতে তার পরিচিত এক পুরুষ সমকামীর "টকটকে ফর্শা" গায়ের রং নিয়ে বেশ খোলামেলা আলোচনা দেখেছিলাম। 


তো মাঝে মাঝে যে তাকে বিভিন্ন ইসলামি শব্দ ব্যবহার করতে বা ইসলামের পক্ষে কথা বলতে শোনা যায়। এগুলো সে কেন করে?


এটাই গনতন্ত্র। সংখ্যাগরীষ্ঠ জনগণ যা শুনতে ও দেখতে পছন্দ করে, সেরকম কথা বলা ও কাজ করা। এতে করে বিপুল জনসমর্থন পাওয়া যায়। রাজনীতিবিদরা এই কৌশলেই ক্ষমতা ধরে রাখে। মি: পিনাকী রাজনীতিবিদ নন। তবে পশ্চিমের রাজনীতিবিদদের মূখপাত্র হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও কৌশলে সাধারণ জনগণের অধিকার রক্ষার কর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দিচ্ছে। এটা যে শুধু পিনাকী ভট্টাচার্যই করে তা না। অনেক পলিটিক্যাল এক্টিভিস্টরাই নিজেদের আসল পরিচয় ও অভিসন্ধি গোপন রেখে জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এরপর জনগণের পক্ষে কিছু কথাবার্তা বলে জনগণের সমর্থন আদায় করে নিজেদের দলটাকে ভারি করার চেষ্টা করছে।


তাছাড়া সেকুলারিজম সকল ধর্মের পাত্রেই চুমুক দেয়। দিতে হয়। কারণ, সকল ধর্মের সংমিশ্রণে তৈরি জগাখিচুরির নামই সেকুলারিজম।


বাংলাদেশি বামদের সাথে সাবেক বাম মি: পিনাকীর দ্বন্দ্ব হলো কেন?


বাংলাদেশের বর্তমান বাম ধারা ভারতের ছায়া থেকে অনেকটা বেরিয়ে গিয়েছে এবং ধীরে ধীরে চীনের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলছে। এই ধারা অব্যহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা অঙ্গনে ভারতকে টপকে চীন জায়গা দখল করে নেবে। অনেকটা নিয়েছেও। বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক হারে বৌদ্ধ সংস্কৃতি, বৌদ্ধ সাম্রাজ্যের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দু ইতিহাস কমিয়ে আনা হয়েছে। বলে রাখা ভালো ভারতের বাম মানে বামপন্থার আড়ালে হিন্দুত্ববাদের চর্চা। চীনা বাম মানে শতভাগ বাম না হলেও মোটা দাগে প্রকৃত বাম ধারা।


তো হিন্দুত্ববাদ ও অখণ্ড ভারতের ছুপা সমর্থক মিঃ পিনাকী বাংলাদেশের বামদের সাথে ঠিক ততদিনই ছিল, যতদিন বাংলাদেশের বাম ধারা পুরোপুরি ভারতের বলয়ে ছিল। শাহবাগ বামপন্থার আড়ালে ভারতের তৈরি প্ল্যাটফর্ম। ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকলে শাহবাগী বামপন্থীরা বিভক্ত হয়ে যায়। প্রকৃত বামরা (প্রায় সবাই মুসলিম বংশোদ্ভূত) চীনা ব্লকে ঢুকে। আর ছুপা হিন্দুত্ববাদী বামরা (প্রায় সবাই হিন্দু বংশোদ্ভূত) বুঝতে পারে বামপন্থী রাজনৈতিক ধারা এখন আর তাদের করায়ত্তে নেই। তারা এতদিন এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বর্ণচোরাদের মতো বামপন্থার আড়ালে হিন্দুত্ববাদের যতো আগ্রাসন মুসলমানদের ওপর চালিয়েছে, যতো ফায়দা তারা হাসিল করেছে, এখন আর সেটা সম্ভব হবে না। তাই তারা ক্ষোভে-আক্রোশে আমেরিকান ব্লকে ঢুকে। সরাসরি ভারতের পক্ষাবলম্বন করলে মিঃ পিনাকীরা সাধারণ মুসলমানদের সমর্থন পাবে না। আর আমেরিকার পক্ষ নেওয়ার মানে হলো উপমহাদেশে ভারতেরই তলপি বহন করা।


এরপর তারা–বিশেষ করে মি: পিনাকী "শাহবাগ থেকে অনুশোচনা নিয়ে ফিরে এসেছি" বলে মায়াকান্না করে মুসলমানদের মন গলানোর চেষ্টা করে। শাহবাগ ভুল ছিল, শাহবাগ আওয়ামী লীগের তৈরি, শাহবাগ তৈরি না হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ তৈরি হতো না ইত্যাদি বয়ান তৈরি করে সকল দায় এককভাবে আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে মূল হোতা ভারতকে শাহবাগ তৈরির দায় থেকে কৌশলে মুক্তি দিল।


আওয়ামী লীগ পিনাকীদের কাছে ততদিনই ভালো ছিল যতদিন আওয়ামী লীগ আমেরিকা-ভারত ব্লকে ছিল। আওয়ামী লীগ যখন চীনা ব্লকে ঢুকে তখন আমেরিকা-ভারত-আওয়ামী-শাহবাগীদের সম্মিলিত সকল অপকর্মের দায় এককভাবে আওয়ামী লীগের ওপর চাপানো হয়। লুটপাট কি নতুন কিছু? গুম কি নতুন কিছু? হেফাজতের ওপর হত্যাযজ্ঞ কি আজকে চালানো হয়েছিল? এতোদিন কিছুই বলেনি। চেষ্টায় ছিল যদি আওয়ামী লীগকে কোনোভাবে আমেরিকান ব্লকে ফেরানো যায়। যখন সব আশাই ম্লান হয়ে আসে তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী বয়ান চালু করে পিনাকী ও তার প্রভুরা।  


তো ফলাফল দাঁড়াল, বাংলাদেশের বামদের পক্ষে থাকলে সেটা পরোক্ষভাবে চীনকে সমর্থন করা হয়ে যায়। আর জানেনই তো চীনের সাথে ভারতের তুমুল দ্বন্দ্ব লেগে আছে। ব্রাহ্মণ পিনাকী ভট্টাচার্য নিজের পবিত্র ভূমি ভারতের বিপক্ষে কি করে যেতে পারে? তাই বাংলাদেশের বামপন্থীদের সে সকাল-বিকাল সমালোচনা ও গালাগাল করে আসলে পরোক্ষভাবে চীনের বিরোধিতা করে। মাঝখান থেকে ইসলামপন্থীরা তাকে ইসলামপ্রেমী ওলী-আউলিয়া ভাবা শুরু করেছে। 

___➋

 পিনাকী ভট্টাচার্য কি বাংলাদেশের মুসলমানদের বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী?


সময়টা সম্ভবত বছর তিন চারেক আগে। আরেক শাহবাগী জিয়া হাসানকে অনেকেই হয়তো চেনেন। তো জিয়া হাসানের সাথে পিনাকী ভট্টাচার্য তার আগের ফেবু আইডি দিয়ে শাহবাগ ও শাপলা প্রসঙ্গে একটা তর্কে লিপ্ত হয়েছিল। তর্কটা বেশ কয়েকদিন ধরে চলেছে। একজন আরেকজনের যুক্তি খণ্ডন করে একের পর এক পালটা আর্টিকেল লিখে পোস্ট করছিল।


আমি মিঃ পিনাকী সহ অন্যান্য অনেক শাহবাগী এক্টিভিস্ট, বামপন্থী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কিছু সেকুলার পেইজের লেখাজোকা ২০১৩/১৪ সাল থেকে ফেবুতে ফলো করতাম। জিয়া হাসানকে চিনেছি আরও অনেক পরে।


যা হোক। তর্কটা শুরু করেছিল জিয়া হাসান। জিয়া হাসানের মূল আপত্তিটা ছিল এক সময়কার ফ্রন্ট লাইনের শাহবাগী নেতা পিনাকী ভট্টাচার্য কেন ১৮০° এঙ্গেলে ডিগবাজি দিয়ে জামায়াত, হেফাজত ও বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের পক্ষে এবং শাহবাগী বামদের বিপক্ষে এক্টিভিজম শুরু করেছে। এই অভিযোগটা জিয়া হাসান ছাড়াও আরও অনেক শাহবাগীই পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে করে।


বলে রাখা ভালো ততদিনে মিঃ পিনাকীর ফেবু পাতায় ইসলামপন্থী ফলোয়ারের ছড়াছড়ি। ইসলামপন্থীদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছে সে। কিছু আবেগী ইসলামপন্থী পিনাকীর কমেন্ট বক্সে (ইনবক্সের খবর জানি না) তার জন্য দুআ করতে করতে তাকে জান্নাতে পাঠিয়ে দিচ্ছিল। এখনও তেমনটাই করে যাচ্ছে। (পিনাকী অবশ্য এই আবেগীদের দুআ করার আতিশয্য ও বারাবাড়ি দেখে অতিষ্ট হয়ে কয়েকজনকে বেশ তিরস্কারও করেছিল কয়েকটা পোস্টে, কমেন্টের রিপ্লাইতে। তবুও তখন তাদের হুশ ফেরেনি। এখনও ফেরেনি।)। কারণ হিন্দু বংশদ্ভূত ও বামপন্থী পিনাকী ভট্টাচার্য ইসলামের পক্ষে কথা বলছে, এটা বেশ ব্যতীক্রম ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা। আলোচিত ও সমালোচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে অপরাধ জগত থেকে অনুশোচনা নিয়ে ফিরে অতীত জীবনের কুকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং নিজে থেকেই সেই অপরাধ জগতের সমালোচনা করার কাজটা যেকোনো সমাজের মানুষের কাছেই হট কেক। সাধারণ মানুষ এসব গল্প খুব খায়। এই সুযোগটাই পিনাকী ভট্টাচার্য সুকৌশলে কাজে লাগায়। তো মি: পিনাকী যেমনভাবে চেয়েছিল ঠিক তেমনভাবই অনলাইনে পাবলিক এটেনশেন পাওয়া শুরু করল। রাতারাতি ফলোয়ারস্ গ্রো করল। অনুসারীদের ৯৯% ইসলামপন্থী।


যা হোক। বেশ কয়েকদিন ধরে চলমান জিয়া-পিনাকীর বাক্যযুদ্ধ বেশ উপভোগ করছিলাম। জিয়া হাসানের সমালোচনার সারকথা হলো– পিনাকী ভট্টাচার্য সুবিধাবাদী, ব্যাক বাইট করেছে, ডিগবাজি দিয়েছে, রঙ বদলে ফেলেছে, কিছু মূর্খ ফলোয়ার বানিয়েছে। পিনাকী ভট্টাচার্য নিজেকে ডিফেন্ড করতে পালটা জবাবে তখন তাই বলছিল যা সে এখন শাহবাগ রচনার কুফল সম্পর্কে এবং বামদের বিপক্ষে বলে থাকে।


তবে উক্ত তর্কে জিয়া হাসান নিজের অবস্থানও তুলে ধরেছিল। সেও শাহবাগ রচনার ফলে ফেসিজমের উত্থানকে স্বীকার করে। তারা দুজনেই আওয়ামী লীগ বিরোধী। তবে জিয়া শাহবাগের বিপক্ষে গেলেও সেকুলারিজমকে আকড়ে ধরে আছে এবং রাজনীতিতে হেফাজত-জামায়াতকে একসেস দিতে সে অনিচ্ছুক। জিয়া হেফাজত-জামায়তের প্রতি পিনাকীর সফট্ কর্ণারকে, ইসলামের পক্ষে ও বামদের বিপক্ষে দু একটা মন্তব্যকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। পিনাকী জিয়াকে ইনিয়েবিনিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে কেন হেফাজত-জামায়তকে রাজনীতির ময়দানে দরকার। তো যখন কোনোভাবেই জিয়া বিষয়টা বুঝতে সক্ষম হচ্ছিল না। তখন পিনাকী সরাসরিই তার দুরভিসন্ধিটা প্রকাশ করে একটা পোস্ট দেয়। সেটাই ছিল জিয়ার উদ্দেশ্যে পিনাকীর শেষ পোস্ট এবং তর্কটা সেখানেই শেষ হয়।


জিয়াকে উদ্দেশ্য করে পিনাকী ভট্টাচার্যের সেই শেষ পোস্টের একেবারে শেষের দিকের কিছু বাক্য ছিল (আমার স্মৃতি বিভ্রম না হলে), "বিপ্লব মানে জানেন জিয়া? বিপ্লব ঘরে বসে হয় না। মাঠে নেমে রক্ত দেওয়া লাগে।"


অর্থাৎ সে ইসলামপন্থীদের সাথে মিশছে, তাদেরকে তেল মারছে শুধু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে রক্ত দেওয়ার জন্য। এই শক্তিটা শুধু ইসলামপন্থীদেরই আছে। আমি এই তর্ক থেকে মি: পিনাকীর দুরভিসন্ধি উদঘাটনের ব্যাপারে চূড়ান্ত হিসেব মিলিয়েছিলাম ৪টা বিষয়কে সংযুক্ত করে।


১. পিনাকী ভট্টাচার্যের ব্যাপারে জিয়া হাসানের আপত্তিগুলো।

২. পিনাকী ভট্টাচার্যের নিজেকে ডিফন্ড করা বক্তব্যগুলো।

৩. পিনাকী ভট্টাচার্য বিদেশে বসে মাঠে নেমে রক্ত দিতে পারবে না। ওই কাজটা সে তার অনুসারীদের দিয়ে করাবে।

৪. অন্যকোনো দল না; মি: পিনাকীর টার্গেট ইসলামপন্থীরা। কারণ সে শুধু ইসলামকে ব্যবহার করেই তার আজকের এই অবস্থানে এসেছে।


যা হোক, কথাগুলো দেখে আমি বেশ শকড্ হই। ততদিন পর্যন্ত আমিও পিনাকী ভট্টাচার্যের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা রাখতাম। কারণ অমুসলিম থেকে একজন মানুষ মুসলিম হতেই পারে। অনুশোচনা মানুষকে পুড়িয়ে খাঁটি করে। কিন্তু মি: পিনাকীর সেই পোস্ট দেখার পর কুরআনুল কারিমের "যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রতি মানুষের মধ্যে ইয়াহূদ ও মুশরিকদেরকে তুমি অবশ্যই সবচেয়ে বেশি শত্রুতাপরায়ণ দেখতে পাবে।" (৫:৮২) এই আয়াতটা খুব মনে পড়েছে তখন।


অর্থাৎ আওয়ামী লীগ নামক দৈত্যের পতনের জন্য রক্ত দেওয়ার মতো লোক লাগবে৷ একটা গণঅভ্যুত্থান এমনি এমনি হয় না। যেকোনো স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে আন্দোলনে নামলে তার বাহিনী গুলি চালায়। প্রাণ দেওয়ার মতো সাহস না থাকলে স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে অপসারন করা যায় না। মানে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজটা হলো সাধারণ মানুষের সহিংস আন্দোলন। বাংলাদেশে একটা সহিংস আন্দোলন করতেই হবে এবং সেটা করলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাবে। কয়েকশত লোক নিহত হবে৷ ব্যস বিশ্ব মোড়লদের জন্য এটুকুই দরকার ছিল। সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করার কাজটা এখানেই শেষ। এরপর বিদেশি গণমাধ্যমগুলো সেই হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটেজ ফলাও করে প্রচার করবে। বিশ্বের কাছে আওয়ামী লীগকে নিজের দেশের জনগণের শত্রু হিসেবে তুলে ধরবে। এরপর আমেরিকা ও ইউরোপ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যু সামনে এনে সরাসরি বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে অথবা হত্যাযজ্ঞের ফুটেজ বিশ্বকে দেখিয়ে বিশ্বের চাপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্যু করতে বাধ্য করবে। এরপর নিজের পছন্দের কাউকে বসাবে। 


সারকথা হলো–সাধারণ মানুষকে ওরা আওয়ামী লীগের অত্যাচার থেকে মুক্ত করার আশা দিয়ে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে। অর্থাৎ ওরা সাধারণ মানুষকে বরশীর টোপ বানিয়ে হাঙর শিকার করার পায়তারা করছে। প্রাণ দেবে সাধারণ মানুষ, এরপর সেই লাশগুলো নিয়ে রাজনীতি করে ওরা ফায়দা হাসিল করবে। সাধারণ মানুষ আগেও বঞ্চিত ছিল, পরেও বঞ্চিতই থেকে যাবে। (এসবের পেছনে আমেরিকার স্বার্থ কি সেটা নিয়ে আমার 'যা ঘটেছে যা ঘটছে যা ঘটবে' পিডিএফ বুকটা পড়তে পারেন।)।


কিন্তু প্রাণ কে দেবে? বামদের সেই কলিজা নেই। হিন্দুদের তো বিচিই নেই। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও মামলায় জর্জরিত হয়ে জেলখানায়। একমাত্র উপায় হলো ইসলামপন্থীরা। কারণ তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দেওয়ার মতো চেতনা লালন করে৷ তো রেডিমেড এই আগুনটাকে যদি নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানো যায় তাই ধূর্ত প্রকৃতির লোক মি: পিনাকী হেফাজত-জামায়াত তথা ইসলামপন্থীদের পেছনে তেল মেরে কথা বলা শুরু করেছিল। এখনও করছে।


বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে মি: গান্ধী, মি: পিনাকীর মতো একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। 


কংগ্রেস দলকে ভারী করতে গান্ধী এমন কোনো তেল বাকি ছিল না যেটা মুসলিমদের পায়ে মালিশ করেনি। খেলাফত আন্দোলনের পক্ষ নিয়ে গান্ধীর কথাগুলো শুনলে মনে হবে এই বুঝি গান্ধী কলেমা পড়ে মুসলিম হয়ে গেল বা গোপনে গোপনে হয়তো গান্ধী মুসলমান হয়ে গেছে। অথচ বৃটিশদের ভারত ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসলে ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান ভেস্তে দেওয়ার অন্যতম কারিগর হিসেবে সময় মতো গান্ধী মুসলমানদের বুকে ছুরি চালিয়ে দিয়েছিল। ১৯৪৬-৪৭ শেষ সময়ের দিকে হিন্দু সন্ত্রাসী কর্তৃক মুসলিমদের ওপর চালানো হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, নিপীড়নের ব্যাপারে গান্ধী ছিল নিশ্চুপ। একসময় মুসলমানকে ঠিকই বঞ্চিত হতে হয়। বাংলাকে দুই ভাগ করা হয়। এরপর মুসলমানরা ভারতের মূল ভুখন্ড ছেড়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রে বিতাড়িত হয়।


ইসলাম ও মুসলিমদের ব্যাপারে মি: পিনাকীর এখনকার বক্তব্য মি: গান্ধীর তখনকার বক্তব্যেরই প্রতিচ্ছবি। পার্থক্য হলো–ওটা ছিল বিংশ শতাব্দী আর এটা একবিংশ শতাব্দী, ওটা ছিল বৃটিশ আর এটা আওয়ামী লীগ। 


লিখেছেনঃ কারিম শাওন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন