বাংলাদেশের ভেতরে ৬/৭টি উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?

 

"বাংলাদেশের ভেতরে আছে JSS, JSS (সংস্কারপন্থি), UPDF, UPDF (গণতান্ত্রিক), KNF, মগ পার্টিসহ ৬/৭টি উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। মিয়ানমারের ভেতরে আছে AA (আরাকান আর্মি), KIA, KNLA, MNLA, PDF, SSAN, SSAS, UWSA, ZRA, NDAA ইত্যাদি। মিয়ানমারের ভেতরের এই দলগুলোর সবই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী না। বেশ কয়েকটা স্বাধীনতাকামী দল আছে। এরা কম করে হলেও অর্ধশত বছর যাবৎ সংগ্রাম করছে। আর কিছু আছে ভুঁইফোড়; বাংলাদেশের উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মতো। এদের নিজস্ব কোনো ভিশন ও মিশন নেই। কারও উসকানিতে অস্ত্র নিয়ে নেমেছে। এরা ৩/৪ শত বা হাজারখানেক সদস্য নিয়ে নির্দিষ্ট একটা পাহাড়ি অঞ্চল নিজেদের দখলে রাখতে চায়। একটা স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি করতে এবং এটাকে টিকিয়ে রাখতে ভৌগোলিক কী কী উপাদান বিদ্যমান থাকা আবশ্যক, সেসব ব্যাপারে এই ভুঁইফোড় দলগুলোর কোনো ধারণা নেই বললেই চলে। অতিরিক্ত আরেকটু বলে রাখি। পরবর্তী আলোচনার কিছু কিছু জায়গায় এগুলো সহায়ক হবে। স্বাধীনতাকামী ভারতেও আছে। মিজোরাম : ZRA, KNA, MNF মনিপুর : UNLF, PLA, PREPAK, KCP নাগাল্যান্ড : NSCN, NSCN-K ত্রিপুরা : NLFT, ATTF আসাম : NDFB, ULFA (উলফা), KLO মেঘালয় : HNLC, GNLA এদিকে ভারতের পূর্ব দিকের সেভেন সিস্টার্সের মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুনাচল প্রদেশগুলোর সাথে মিয়ানমারের পশ্চিম দিকের চিন, সাগায়িং ও কাচিন প্রদেশগুলোর সীমান্ত আছে। এই প্রদেশগুলোর প্রত্যেকটা বিশাল বিশাল পাহাড়ে (১৫ হাজার ফিট উচ্চতা পর্যন্ত পাহাড়ও আছে) ঘেরা এবং অত্যন্ত দুর্গম এলাকা। ভারত ও মিয়ানমারের কিছু কমন এনিমি আছে। যেমন : ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (NSCN) নামে স্বাধীনতাকামী একটা সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে, যারা কিনা ভারতের নাগাল্যান্ড ও মিয়ানমারের সাগায়িং প্রদেশ দুটোকে স্বাধীন করে নাগা জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি করতে চায়। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সীমারেখার ভেতরে সাগায়িং প্রদেশের কিছু অঞ্চলে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। আরও যেমন : মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (MNF), চিন ন্যাশনাল আর্মি (CNA), কুকি ন্যাশনাল আর্মি (KNA), জোমি রেভোলুশনারি আর্মি (ZRA) নামে স্বাধীনতাকামী চারটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে, যারা কিনা ভারতের মিজোরাম, মনিপুর, ত্রিপুরা, আসাম প্রদেশ এবং মিয়ানমারের রাখাইন, চিন, সাগায়িং প্রদেশ; বাংলাদেশের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার অঞ্চলগুলো নিয়ে ‘জোগাম স্টেট’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এই ‘জোগাম স্টেট’ আয়তনে বাংলাদেশের থেকেও বড়ো। এরা মূলত ‘জো জনগোষ্ঠী’। ভারতের মিজোরাম প্রদেশের মিজো জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের চিন প্রদেশের কুকি-চিন জনগোষ্ঠী মূলত একই জনগোষ্ঠী। এদের বংশধারা ও সংস্কৃতি একই। ’৪৭-এ দেশ ভাগের সময় এই জনগোষ্ঠীটিকে বাধ্যতামূলকভাবে দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে এক অংশকে ভারতের অধীনে যেতে হয়, আরেক অংশ যায় মিয়ানমারের অধীনে। এই চারটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর লক্ষ্য হলো ‘জো জনগোষ্ঠী’-কে একত্র করা। কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী শুধু নিজ দেশের সেনাবাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত। কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী সীমান্তের দুই পাশের দুই দেশের সেনাবাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত। কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজের দেশ ও অন্য দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত। পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। আবার চীনের সেনাবাহিনী ভারত ও মিয়ানমারের কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। আবার বাংলাদেশের সেনাবাহিনী মিয়ানমারের দু-একটা সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের লাখ লাখ বর্গকিলোমিটারের পাহাড়ি অঞ্চলগুলো অনিরাপদ। 


খুবই নাজুক একটা পরিস্থিতিতে আছে। যুদ্ধের আগুন একদিক থেকে লাগলে তা দাউদাউ করে এই তিনটা দেশের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে।" 'যা ঘটেছে যা ঘটছে যা ঘটবে' বই থেকে। বইটার অফিসিয়াল পিডিএফ 

 — কারিম শাওন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন