ভারতের 'অগ্নিপথ স্কিম' মুসলমানদের জন্য অশনিসংকেত কেন?


ভারতের 'অগ্নিপথ স্কিম' মুসলমানদের জন্য অশনিসংকেত কেন?


গত পোস্টে বলা হয়েছিল অগ্নিপথ স্কিম কি। আজকে সেটার কৌশলগত দিকগুলো তুলে ধরা হলোঃ


১. পরিপূর্ণভাবে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ সৈনিকরা অবসরে যাচ্ছে। পরবর্তীতে অন্যকোনো চাকরী বা ব্যবসা করলেও তারা সাধারণ নাগরিকদের মতো না। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ত্র ধরতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ এরা একেকটা টাইম বোমা। সময় মতো বিস্ফোরিত হবে। এরা সাধারণ নাগরিকের বেশে সামরিক সদস্য।


২. তাদের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ৬৫ বছর বয়সে। সরকারিভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় চাইলেও মুসলমানদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারবে না। তাহলে রাষ্ট্রের গায়ে নিজ জনগণকে হত্যার কালি লাগবে। চাকুরী থেকে অবসরপ্রাপ্ত তরুণ সৈনিকরা ঠিক একই কাজ করবে। কিন্তু তখন সেটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।


৩. তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের রেগুলার আর্মড ফোর্সগুলো সীমান্তে বহিঃশত্রুর (চীন, রাশিয়া, বাংলাদেশ, নেপাল) সাথে যুদ্ধ করবে। আর ঘরের ভেতরটা সামাল দেবে এই অবসরপ্রাপ্ত তরুণ সৈনিকরা। ভারত ওর চারপাশে যেমন শত্রুতা করেছে। ওর নিজের ঘরেও অনেক শত্রু আছে। তাই তিন বাহিনীর সব মিলিয়ে এক্টিভ পার্সোনাল ১৪.৫ লাখ, আর রিসার্ভ ১২ লাখ, প্যারামিলিটারী ২.৫ লাখ; মোট ২৯ বা ৩০ লাখ সদস্যের সংখ্যাটা ১৫০ কোটির বিশাল জনগোষ্ঠী ও ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গ কি.মি. (বাংলাদেশের প্রায় ২৩ গুণ বড়ো) বিস্তৃত ভূখণ্ড সুরক্ষা দিতে পর্যাপ্ত না।


৪. কোনো দেশেই সামরিক বাহিনীর সংখ্যা পর্যাপ্ত না। যুদ্ধের সময় তো আরো না। তখন অনেক নিহত ও আহত হয়। ইউক্রেনে দেখেন। সাধারণ ইউক্রেনীয়ানদের যুদ্ধে নামানো হচ্ছে। রাশিয়া তার অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের যুদ্ধে নামাচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঔপনিবেশিক দেশগুলো থেকে ধরে আনা দাসদেরও যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। অর্থাৎ যুদ্ধে ম্যান পাওয়ার লাগে অনেক।


তাই প্রতিটি দেশই যুদ্ধকালীন সময়ে সাধারণ নাগরিককে প্রশিক্ষণ দিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামানোর জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু সংকটময় পরিস্থিতিতে সেটা তেমন সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ, দেশের প্রতিষ্ঠিত সামরিক বাহিনী নিজেই যুদ্ধে জড়িয়ে নির্ঘুম সময় কাটাচ্ছে। ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধরত অবস্থায় অন্যদের ট্রেইনিং দেওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব না। সময় অপচয় হয়। সময় মতো রসদ, গোলাবারুদ ও যোদ্ধা সরবরাহ করতে না পারলে ততদিনে পরাজয় নিশ্চিত। আর এটা কোনো তাড়াহুড়োর কাজ না। তাই নির্দিষ্ট গ্রাম, পাড়া, এলাকা, মহল্লায় ওই স্কিমের আওতায় চাকরী করা অবসরপ্রাপ্ত তরুণ সৈনিকরা সংগঠিত হতে পারবে। অন্য দশজন সাধারণ হিন্দুদের যুদ্ধকালীন সময়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারবে। অস্ত্র জমা দিলেও ট্রেইনিং তো আর জমা দেয়নি। হিন্দুত্ববাদী নেতারা ভারত রাষ্ট্রের প্রতিটি কোনায় কোনায় গিয়ে যেটা না করতে পারবে। এই অবসরপ্রাপ্ত তরুণ সৈনিকরা সেটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে দেবে। কারণ, এরা মেধা ও মননে নিজে থেকেই হিন্দুত্ববাদী।


৫. দীর্ঘ সময় চাকুরী করলে সৈনিক রিক্রুট কম হবে। আর ৪ বছরের মধ্যে অবসরে পাঠালে নতুন নতুন বিশাল সংখ্যক হিন্দু জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। খেয়াল করে দেখুন। সামরিক বাহিনীতে এক্টিভ সার্ভিসের যেই পদগুলো প্রতি বছর শূণ্য হবে, সেগুলো পূরণ হবে ওই ২৫% দিয়ে। আর বাকি ৭৫% সেনা সদস্য সাধারণ নাগরিকের সাথে মিশে যাবে। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে ভারতের দরকার ২৫ জন সৈনিক। তারা নিচ্ছে ১০০ জন সৈনিক। ২৫ জনকে রেখে ৭৫ জনকে যার যার নিজ গ্রাম, পাড়া, মহল্লা, এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।


৬. ধরুন কোনো এলাকায় হিন্দু-মুসলিম লড়াই হলো। সাধারণ মানুষ যে যার যার মতো লাঠি বা দেশিয় অস্ত্র ব্যবহার করবে। তবে এতে দুই পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু যদি সে এলাকায় হিন্দু ধর্মের অন্তত দুই বা তিন জন সামরিক সদস্য থাকে, তখন পুরো পরিস্থিতি হিন্দুরা পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সামরিক প্রশিক্ষণে টিকে থাকার কৌশল শেখানো হয়। 


লিখেছেনঃ কারিম শাওন


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন