ইসলামী ইমারত হল এই মূহুর্তে পুরো বিশ্বে একমাত্র পলিটিকাল এনটিটি যা ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করছে।
কলোনিয়ালিসমের যুগ আপাতভাবে শেষ হবার পর, মুসলিম বিশ্বে অনেক ধরণের ব্যবস্থা ট্রাই করা হয়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক সেক্যুলারিসম, সেক্যুলার সামরিক শাসন, কমিউনিসম, সেক্যুলার রাজতন্ত্র, লিবারেল-ডেমোক্রেসি ইত্যাদি। এই কোন ব্যবস্থাই মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি।
.
আজ আমাদের ২ বিলিয়নের মতো জনগোষ্ঠী আছে, ৬০ টার কাছাকাছি দেশ আছে, ব্যাপক পরিমাণ প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ আছে, অর্থ আছে, জাতিসঙ্ঘের ভাড়াখাটা অনেকগুলো বাহিনী আছে, পারমাণবিক বোমা-ও আছে। এ সবকিছুর পর ৮ মাস ধরে যখন গণহত্যা চলে, তখন আমরা বুঝি, আমাদের আসলে করার কিছুই নেই। আমরা দুর্বল।
.
ওপরের প্রতিটা ব্যবস্থা মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। আর তা হবারই ছিল। কারণ এ প্রতিটা ব্যবস্থাই আল্লাহর হাকিমিয়্যাহ-র বদলে জাহিলিয়্যাহকে প্রতিষ্ঠিত করে।
.
এ অবস্থায় ইসলামী ইমারত হল ঐ পলিটিকাল এনটিটি যেটা সব স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে, সব সূত্র উলোটপালোট করে দুইবার আল্লাহর যমীনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে, এবং মাঝে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তিকে ক্লান্ত করে ছেড়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা মনে করি এটি মহান আল্লাহ জাল্লা ওয়া 'আলা-র প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন।
.
তাই এই ইমারত পুরো উম্মাহর জন্য অত্যন্ত জরুরী। এমন একাধিক ইমারত, এবং বাহিনী তৈরি করা ছাড়া পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করা সম্ভব বলে মনে হয় না, ওয়াল্লাহু 'আলাম।
.
তবে এই ইমারত নিখুত না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাসন ছাড়া আর কোন শাসন নিখুত না। খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ ছাড়া আর কোন যুগ আমাদের আদর্শ না। উমাইয়্যা, আব্বাসী, সেলজুক, মামলুক, আইয়্যুবী, উসমানী - সব শাসনব্যবস্থার মধ্যে ভুল ত্রুটি ছিল। শরীয়াহ থেকে বিচ্যুতি ছিল যা অনেক সময় খুব গুরুতর পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল।
.
তবু আমরা ভারসাম্যের সাথে তাদের ব্যাপারটা অ্যাপ্রোচ করি, অন্তত তাই করা উচিত। আমরা স্পষ্ট ভুলের সাফাই গাই না, আবার ভুলের মাত্রা যতোটুকু সেটা থেকে বের করে এনে, ঐ ভুলের কারণে বাকি সব নাকচও করি না।
.
এই একই অবস্থান ইমারতের ব্যাপারেও হওয়া উচিত। দ্বীনকে ভালোবাসা যেকোন মুসলিম তাদের ভুলগুলো দেখে ব্যাথিত হবে। হয়তো সমালোচনাও করবে। এটা স্বাভাবিক। তবে সমালোচনা ভুলের মাত্রা অনুযায়ী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তা না করে, কোন ভুল বা বিচ্যুতিকে নিজেদের মধ্যেকার তর্কবিতর্কের মধ্যে পয়েন্ট স্কোরিংয়ের উপলক্ষ বানানো অত্যন্ত নিচু মানের আচরণ। অন্যদিকে স্পষ্ট ভুলকে নানাভাবে তাউয়ীল করা বড় ধরণের গোমরাহীর পূর্বাভাস।
.
ক্রিকেট কিংবা এধরণের অন্য বিষয়গুলো নিয়ে ইমারতের অবস্থান দেখে অবশ্যই আমাদের খারাপ লাগে। কারণ ইমারতে যা হয়, ইমারত যা করে - তা শুধু একটা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের বিষয় না। বরং ঐতিহাসিক দূরত্ব থেকে, দীর্ঘমেয়াদী লেন্সে দেখলে - ইমারতের ভবিষ্যতের সাথে উম্মাহর রাজনৈতিক ভবিষ্যত এবং আহলুসসুন্নাহর স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
একইসাথে এই বাস্তবতাও আমাদের বুঝতে হবে যে, ইমারত নিখুত হবে না। সাইফুদ্দীন কুতুয, রোকনউদ্দীন বাইবার্স কিংবা সুলতান মাহমুদ গাজনাভীদের শাসনও নিখুত ছিল না। আব্বাসীদের শেষ দিকে এবং মামলুকদের শাসনে অনেক ধরণের হারাম কাজ প্রকাশ্যে হয়েছে। এগুলো ঐতিহাসিক বাস্তবতা। কিন্তু কেউ কি এই ভুলগুলোর কারণে বলবে, এই ব্যক্তি এবং এই শাসনগুলো উম্মাহর প্রয়োজন ছিল না? আবার কেউ কি বলবে অমুক শাসনামলে ঐ কাজটা হয়েছিল, তারা যথেষ্ট বাঁধা দেয়নি, তাই ঐ কাজ বৈধ? নিঃসন্দেহে না।
.
আমাদের অবস্থানগুলো শরীয়াহর আলোকে ঠিক করা উচিত। যা স্পষ্টভাবে শরীয়াহবিরোধী, সেটা উম্মাহর যেই করুক, তা ভুলই থাকবে। আর ভুল যদি কুফরের পর্যায়ে না পৌছায়, তাহলে সেই ভুলের বিরোধিতা করা হবে, সেই ভুলের সংশোধনের জন্য যারা পারবেন তারা নাসীহাহ করবেন। তবে তা করা হবে ভুলের মাত্রা অনুযায়ী।
.
পাশাপাশি যদি কোন ভূখণ্ডে সামগ্রিকভাবে ইসলামী শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত থাকে, তাহলে মুসলিমদের অবশ্যই সেটাকে সমর্থন করতে হবে। যদিও সেখানে অন্যান্য ভুল থাকে। এটা আল ওয়ালা ওয়াল বারা-র একদম প্রাথমিক দাবি, এবং উম্মাহর জন্য আবশ্যক।
.
আমরা দুআ করি আল্লাহ যেন ইমারতকে হক্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং দীর্ঘস্থায়ী করেন। একে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রবল এবং মুমিনদের জন্য আশ্রয়স্থল বানান। তিনি যেন ইমারতকে এমনভাবে ইসলাহ করে দেন যাতে মুমিনদের অন্তরগুলো প্রশান্ত হয়।
.
পাশতুন গোত্রীয় অঞ্চল থেকে শুরু করে সোমাল পর্যন্ত, যেখানে যেখানে আল্লাহর পথের পথিকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তিনি যেন সেই ভূখণ্ডগুলোতেও আমাদের আরও ইমারত দান করেন।
.
আমরা দুআ করি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মাহর বিজয় আল্লাহ যেন ত্বরান্বিত করুন।
লিখেছেনঃ আসিফ আদনান (হাফিজাহুল্লাহ)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন