সিদনায়া বা সাঈদনায়া কারাগারে কিভাবে অত্যাচার করা হতো? | পর্ব - ০২

 

১ম পর্বে কয়েকটা অত্যাচারের পদ্ধতির বর্ণনা দিয়েছিলাম।
এই পর্বে আরো কয়েকটা অত্যাচারের ধরণ সম্পর্কে বিবরণ দিলাম,পড়তে পড়তে জিনিসগুলো চিন্তা করবেন। আর লেখাটা পড়ার সময় কয়েদীর জায়গায় নিজেকে রেখে কয়েদীদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করবেন।

[১] ছবির ১নং এর অত্যাচারের যে পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে সেটাকে বলে ❝ Squat Position Method❞.


যারা প্রায় ব্যায়াম করেন তারা এই পজিশন সম্পর্কে জানেন,এই পজিশনে ব্যায়াম করা কতটা কঠিন। ফিটনেস কোচরাও একটা চার্ট দেন এই পজিশন এ ব্যায়ামের। প্রাইমারি লেভেলে ১০-২০ সেকেন্ড,ইন্টারমিডিয়েট লেভেল ৩০-৪০ সেকেন্ড আর এডভান্স লেভেলে ৬০ সেকেন্ড+ হোল্ড করার জন্য। বুঝতেই পারতেছেন ঠিক কতটা কঠিন একটা ব্যায়াম।

এবার আসেন বর্ণনা করি স্কোয়াট পজিশন মেথড এর ব্যাপারে। কয়েদীকে জোরপূর্বক স্কোয়াট করানো হতো। হাত মাথার পিছনে রেখে পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে বসতে বলা হতো। কিন্তু হেলান দেওয়ার জন্য কোনো দেওয়ালে ভর দিতে দেওয়া হতোনা এবং পায়ের উপর সম্পূর্ণ ভর দেওয়া ও নিষিদ্ধ ছিলো। যদি কয়েদী একটু নড়াচড়া করতো তাকে খুব জোরে প্রহার করা হতো।

এবং এই পজিশনে কয়েদীকে ঘন্টার পর ঘন্টা এমনকি সারাদিনও রাখা হতো। উপরে পড়ে আসছেন এডভান্স লেভেলের মানুষকেও এক মিনিটের বেশি হোল্ড করার ব্যাপারে সতর্কতা দেওয়া হয়। সেখানে মিনিট না,ঘন্টা নাহ,পুরো একটা দিন এই পজিশন এ রাখা হতো। এতে কয়েদীর হাত,পা,মেরুদন্ড অবশ হয়ে পড়তো।

ছবির ২,৩ ও ৪নং এর অত্যাচারের যে পদ্ধতিগুলো দেখছেন সেই পদ্ধতির নাম ❝ Suspension torture method❞
এই মেথডের মধ্যেই বিভিন্ন ধরন আছে।

[২] ছবির ২নং এ যে ধরনটা আছে সেটা হলো,
কয়েদীকে এক হাত অথবা এক পা পিছন থেকে বেধে সিলিং থেকে ঝুলিয়ে রাখা হতো। এতে তার শরীর মাটি থেকে উপরে দুলতে থাকতো। এবং ঝুলন্ত হাত অথবা পায়ে পুরো শরীরের প্রেশার টা পড়ার কারণে হাত বা পায়ের অংশগুলো ফুলে যেতো।

কয়েদীকে এভাবে কয়েক ঘন্টা অথবা কয়েকদিন রাখা হতো। এতে হাত বা পায়ের ওই অংশের নার্ভগুলো অসাড় হয়ে যেতো,অনেক ক্ষেত্রে হাড় স্থানচ্যুত হয়ে যেতো এবং ক্ষেত্রবিশেষে ফ্র‍্যাকচার ও হতো।

[৩] ছবির ৩নং এ সাসপেনশন টর্চার এর যে ধরনটা আছে তা হলো,
কয়েদীর হাতের পিছনের অংশ আর পা এর একসাথে বাঁধা হতো। এরপর তাকে সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো ও শরীর মাটি থেকে উপরে তুলে রাখা হতো। এই পদ্ধতিতে রাখার একটা বিশেষ কারণ ছিলো এতে করে তারা মাথা এবং পিঠে চাবুক দ্বারা আঘাত করতো। এবং ক্রমাগত মাথায় ও পিঠে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে কয়েদীর মাথা ঘোরার মতো জটিলতা সৃষ্টি হতো।
কি বর্বর ছিলো তারা,ভাবতে পারেন!

[৪] সাসপেনশন টর্চার এর মধ্যে ছবির ৪নং সাসপেনশন টর্চারের ধরনটা ছিল সবচেয়ে নির্মম ও সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ধরন।


এই ধরনের ক্ষেত্রে, পুরো শরীরের ভার কব্জির উপর পড়তো,যা কাঁধ এবং বাহুর পেশী ছিঁড়ে যাওয়ার কারণ হতো। এর পাশাপাশি হাত ও ফোলা শুরু করতো। কয়েদীকে এই অবস্থায় কয়েক ঘন্টা অথবা কয়েকদিন রাখা হতো।

[৫] ছবির ৫নং এর অত্যাচারের পদ্ধতিটা শুনলে গা শিউরে উঠবে। এই পদ্ধতিটাকে বলা হয় ❝Thermal Torture Method❞।

এটার ও দুইটা ধরন আছে,
i) আগুন লেগে থাকা সিগারেটের অবশিষ্টাংশ কয়েদীর শরীরে লাগিয়ে নিভিয়ে দেওয়া হয়। অথবা তার হাত,পায়ের আঙুল, কান, ও চুল লাইটারের আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়।

ii) এই ক্ষেত্রে লোহার রডকে গরম করা হয় যা গলনের কাছাকাছি পৌঁছায়। এবং এটি আটক ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে, যেমন পিঠ, মুখ, হাত বা পায়ে প্রয়োগ করা হয়।

কল্পনা করে দেখেন,সিগারেটে আগুন লেগে থাকা অংশ আর লোহার রড যখন গলে যাবে অমন তাপমাত্রা আপনার শরীরে নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হলে ঠিক কেমন যন্ত্রণা অনুভব হবে!

[৬] দুই পর্ব ভাবানুবাদ সহ বিষয়গুলো কল্পনা করতে গিয়ে গা শিউরে উঠছিল। যারা এগুলোর মধ্য দিয়ে গেছে তাদের অবস্থা টা একবার ভেবে দেখেন।

লিখেছেনঃ ইবতিহাজ তাহসিন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন