বিয়ের মৌসুম যাচ্ছে, কুরবানীর ঈদের পরে হুট করে প্রচুর বিয়ে হয়। ভাইয়েরা! এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করবেন না। পাত্রী সম্পর্কে ঠিক করে খোজ খবর নিয়ে বিয়ে করবেন ইনশাআল্লাহ।
১.) মেয়ে পছন্দ করবেন, নিজের দৃষ্টিতে মেয়ে পছন্দ না হলে বিয়ে কইরেন না। বাকি কন্ডিশনের সাথে ফিজিকালি এট্রাকটিভ মনে হয় এমন কাওকে পাওয়ার পসিবিলিটিস থাকলে তা গ্রহণ করুন। একেক জনের একেক মেয়ে পছন্দ হয়। আপনার দৃষ্টিতে যাকে পছন্দ হবে, আরেকজনের ঐ মেয়ে পছন্দ নাও হতে পারে। আবার আরেকজনের যাকে পছন্দ, তাকে আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। আপনার পছন্দ না হলেও ঐ মেয়েকে অন্য কেও ঠিকই বিয়ে করবে ইনশাআল্লাহ। নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিবেন।
২.) খোজ নিয়ে দেখবেন ক্লিন ব্যাকগ্রাউন্ড কিনা! মুরুব্বীরা ভালো বললেই হবে না। তারা আসলে বর্তমান যুগের মেয়েদের সম্পর্কে জানে না। আপনি বরং এলাকায় সেম বয়সী বেশ কয়েকজন লোকজনকে জিজ্ঞেস করুন দু চারদিন সময় নিয়ে। মেয়ের এলাকার সেম ব্যাচের/বয়সের দুএকজন মেয়ের মতামতও নেয়ার চেষ্টা করুন আপনার মাহরাম দিয়ে।
৩.) তাড়াহুড়ো করবেন না। মেয়ে দেখতে গিয়েই কাজ সেরে ফেলতে হবে এমন না। দু চারদিন অপেক্ষা করুন। পুরো বিয়ের প্রসেস ১৫ দিন থেকে মাস খানেক লাগুক। অসুবিধার কিছু নেই। এর মধ্যে মেয়ের দিকের কোন সমস্যা থাকলে বের হবার সম্ভাবনা আছে। মেসেঞ্জার বা এরকম মেসেজিং অপশনগুলো নিয়মিত চেক করুন, কেও যোগাযোগ করে কিছু বলে কিনা দেখুন। তথ্য পেলে চুপ থেকে আগে ভেরিফাই করুন।
৪.)যারা আর্লি ম্যারেজ বয়সের ক্যাটাগরিতে আছেন কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করুন। এসব মেয়েরা সৎ থাকলে সিস্টেমেকলি অল্পতে খুশি থাকার সম্ভাবনা বেশি। তারা দুনিয়া দেখেছে কম। তাদেরকে বেশি বয়সী মেয়েদের তুলনায় কয়েক গুন কম খরচে, কম এফোর্ডে খুশি করা সম্ভব।
কম বয়সী মেয়েরা অধিক প্রেমময়ী। সম্ভাবনা আছে আপনি তার প্রথম প্রেমিক হবেন। বেশি বয়সী মেয়েরা বড় হতে হতে মন দিয়ে রাখে অনেক সময় এক তরফা ভাবে।
মেয়েরা প্রথম পুরুষের প্রেম/ছোঁয়া সহজে ভুলতে পারে না। সময় লাগে অনেক। আবার না জড়ালে ও জাহেলিয়াতের বশিভূত হয়ে অনেকের চাহিদা থাকে অত্যাধিক রেডিমেড প্রবনতার;না পেলে আফসোস হতাশাই ভুগে
আমি ১৪-১৭ বছরের মেয়েদের কম বয়সী বলছি এখানে। এরা প্রেম করতে চরম উদগ্রীব থাকে, প্রেম শুরু করতে ছোঁক ছোঁক করতে থাকে। বিয়ের মাধ্যমে কোন মেয়ের প্রথম প্রেমিক হওয়া চরম গিফট। সে আপনার ক্ষেদমতে অত্যন্ত আগ্রহী হবে।
আর এক্ষেত্রে
আপত্তি বিতর্ক এড়াতে বলতে চাই যে এদের মেন্টালিটি সাইকোলজি মানিয়ে চলতে পারেন না, বয়সের সাথে সামঞ্জস্যতা নেই তার অল্প বয়সী মেয়ে বিয়ে করা থেকে দূরে থাকুন।
৫.) বেসিক আমল চেক করুন। তবে আকিদা মানহাজ নিয়ে অতো খুতখুতে হবেন না(এরকম পেলে তো ভালো), ইলম পায়নি এটার সম্ভাবনা আছে। ইলম কালাম কম থাকলে সৎ চরিত্রবান হলে এসব মেয়েরা বিয়ের পর ইলম পেলে স্বামীর আকিদা মানহাজ গ্রহণ করে থাকে। বেসিক আমল দুই তিনটা ওকে আছে কিনা তাই দেখুন। যেমন, পর্দা কতখানি করে, সালাত আদায়ের কি অবস্থা, নন মাহরাম নিয়ে ভাবনা কি! এগুলোই। কিন্তু সমাজে প্রচলিত নয় এমন অতো হাই লেভেল জিনিসপত্র জানে কিনা, বা অবস্থান কি! এগুলো তখন মিলাতে গেলে পাবেন না সম্ভবত।
৬.) ভবিষ্যৎ প্ল্যান জিজ্ঞেস করুন। ঘরে থাকবে নাকি নিজের পায়ে দাঁড়ানোতে বিশ্বাসী কিনা বুঝুন।
৭.) "আনুগত্য করবে কিনা! ভদ্র নাকি বেয়াদব?" এই লাইনটা সবচে গুরুত্বপূর্ণ। এটা ওকে পেলে বাকি দ্বীনি পয়েন্টগুলো কয়েকগুন সহজ হয়ে যাবে। ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন পরিবার গঠন করতে গেলে এটা ওকে থাকা জরুরী।
৮.) মেয়ের মা, নানী, খালা এই তিন মহিলা কেমন এটা গুরুত্বপূর্ণ কম নয়। বিয়ের পর আপনার স্ত্রী প্রতিদিন আধাঘন্টা করে তার মা খালার সাথে যোগাযোগ করবে, এটা নরমাল। আপনার পরিবারে তার মায়ের প্রভাব কেমন হবে বুঝতে চেষ্টা করুন। খেয়াল করুন মেয়ের মা, মেয়ের পরিবারের মূল কর্তী কিনা! তিনি তার স্বামীর থেকে বেশি বুঝেন কিনা! খালা, নানী মিলাতে না পারলেও মেয়ের মা কেমন খেয়াল করুন।
৯.) কাবিন নামার ১৮ নং এ সাবধান, ভুলেও তালাকের অনুমতি দিবেন না। দিলেও লিখে দিবেন ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী এক বা দুই তালাকের অনুমতি দিলাম। দুপক্ষের উপস্থিতিতে সালিশি প্রকৃয়ায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এগুলো পতিত হবে, এমন। একান্ত নিঃশর্তভাবে দিতে বাধ্য হলে তাদেরকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দিবেন আপনি তালাকের অনুমতি দেন নাই। স্রেফ সাইন করতে বাধ্য হয়েছেন। পাত্রীকে এবং তার গার্ডিয়ানকে পরিস্কার জানিয়ে দিবেন। অথবা ঐ কাজী দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করিয়েনই না। বিকল্প খুজেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১০.) যে কিনা মাসে ৫০ হাজারের কম আয় করে এবং শহরে থাকবে, তার জন্য ৮-১০ লাখ টাকা অনেক টাকাই। অতিরিক্ত মোহর ধার্য করা পরিহার করুন। আবার কেও কেও আবেগে ১০-৫০ হাজারে বিয়ে করে, এটাও অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কম। একটা আইডিয়া দেই, আপনি বিয়েতে নিজের মাসিক আয়ের ৮-১০ গুন মোহর ধরতে পারেন। দুদিকেই এতে ব্যালেন্স থাকবে। আর বিয়ের পর বউ দূরে না রেখে কাছে রাখুন। এতেই বরকত আসবে।মোহর গুলা দিয়ে তার সম্পদ গড়ে দিন। গোল্ড বা জমিতে টাকা ঢুকাতে পরামর্শ দিন নতুন বউকে।
নতুন বউয়ের কোন ত্রুটি পেলে প্রথম তিন মাসে এগুলো ধরবেন না, বলবেন না, বেটাগীরি কমিয়ে, তাবলীগের দাওয়াতি মেজাজে আসবেন। কারো সামনে তাকে অপমানিত করবেন না। চুটিয়ে প্রেম করুন প্রথমে। এরপর কোন বিজ্ঞ আলিমের মতামত নিয়ে সংশোধন করবেন। অতিরিক্ত সমস্যা পেলে প্রথম থেকেই মুরুব্বী এবং আলিমদের পরামর্শ নিন, সে অনুযায়ী কাজ করুন, তাকদীর মেনে নিন।
এটা পরামর্শ, শতভাগ একমত হতে হবে এমন না, তবে যারা হুট করে বিয়ে করেন তাদের উপকারী হবার সম্ভাবনা।
— আবু ইরফান (ঈষৎ পরিমার্জিত)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন