মাহরাম এবং গায়রে মাহরামদের সামনে নারীর সাজসজ্জার শরয়ী বিধান কী?

 

বুলেটের আঘাতে মানুষ নিহত হয়। কিন্তু ফিতনার কবলে পড়লে তাৎক্ষণিক মৃত্যু নেই। ধুঁকে ধুঁকে, একটু একটু করে ইমান-আমল, গায়রত, আখিরাত সব নিঃশেষ করে দিয়ে কবরে যেতে হয়। ফিতনার কবলে পড়ে নিজের আখিরাত ধ্বংস করার চেয়ে বুলেটের আঘাতে জান্নাতে চলে যাওয়াই সর্বোত্তম।

⌬ ⦙ ১-
দুঃখের কথা হচ্ছে আজকের এই কথিত আধুনিক যুগে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯৮ জন নারী ফিতনা ছড়িয়ে থাকে। একদল ফিতনা ছড়ায় শারীরের ভাঁজ, সৌন্দর্য প্রকাশের মাধ্যমে। আরেকদল ফিতনা ছড়ায় আকর্ষণীয় পোশাক আর স্টাইলিশ রঙিলা (পড়ুন কথিত) পর্দার মাধ্যমে।
পথেঘাট, রাস্তা, পার্কগুলোতে যেনা-ব্যাভিচার এখন ডাল-ভাত। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় দেখলে মনে হয় ঐটা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়! স্বামী-স্ত্রীর বসতবাড়ি যা মন চায় তাই করবে। এ ধরণের নষ্টামির বিরোধীতা করলে বা বিরত থাকতে বললে পুগতিশীল উইমেনরা খুব গর্বের সাথে বলিয়া থাকে, মোল্লা তোর সমস্যা কী? জাহান্নামে গেলে আরেক বেডার মেয়ে, বউ, বোন যাইবো!
তাদের এখন কী জানার প্রয়োজন নেই? এই পাপের শেষ পরিণতি কী হবে?

⬤ যেনা-ব্যাভিচার, পাপ করা ব্যক্তি (নারী-পুরুষ) তাওবাহ না করে মারা গেলে....
Arabic: https://tinyurl.com/29d5y8ye or,
Bangla: https://tinyurl.com/4v6zk3z7
[ বিঃদ্রঃ যেনা-ব্যাভিচার, পাপের স্মৃতি যতদিন স্মরণে থাকবে ততদিন ঐ অপকর্মের জন্য তাওবাহ করতে হবে। যথাসম্ভব ফেসবুক/ইন্টারনেট থাকা পাপের চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে। ]

ফিতনা-অশ্লীলতা ছড়ানোর মধ্যে সবচেয়ে আপত্তিকর অবস্থায় নারীকেই সবচেয়ে বেশি পাবেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন,
“আমি আমার (ইন্তিকালের) পরে পুরুষদের জন্য নারীদের  ফিতনার চেয়ে অধিকতর কোন  ফিতনা রেখে যাইনি।” (সহিহ মুসলিম)

একটু যদি দেখেন, তাহলে দেখবেন অধিকাংশ নারী শরীরের ভাঁজ দেখিয়ে চলাফেরা করছে। তারা পাপকে পাপ মনে করছে না, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের বস্তা পঁচা অর্ধ উলঙ্গ কাপড়চোপড় এই দেশেও প্রচলন করিয়ে দিচ্ছে।

দুনিয়ার যত অশ্লীল পোশাক আছে সবই নারীদের জন্য বানানো হয়, কখনো দেখবেন না পুরুষের জন্য অর্ধ উলঙ্গ পোশাক বানিয়েছে। নারীকে সহজে বস্তা পঁচা মতবাদ গিলানো যায় বলেই নারীকে টিস্যুর মতো ব্যবহার করা যায়, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা সেটাই করছে, বোনদের এখনি ভাবার সময়....। 

⌬ ⦙ ২- 
কোন নারীর জন্য তার সাজসজ্জা গায়রে মাহরামের সামনে প্রদর্শন করা জায়েজ নেই। যদি সেটা শুধু লিপস্টিকও হয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে “সূরা আন-নূর এর ৩১ নং আয়াতে” স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন নারী তার সৌন্দর্য এবং সাধারণ সাজসজ্জা কাদের সামনে প্রকাশ করতে পারবে। সাথে আরো কিছু নারীদের জন্য বিশেষ বিধান।
⬤ আন নূর- ৩১
Arabic & English: 
https://quran.com/24/31 or,
Arabic, English & Bangla: 
https://quranmazid.com/24/31?translations=23-9-5

⌬ ⦙ ৩-
এবার লিপস্টিক প্রসঙ্গে আসা যাক,
লিপস্টিক দিয়ে মাহরাম ছাড়া গায়রে মাহরামদের সামনে যাওয়া যাবে না। গায়ের মাহরামদের সামনে সেজে হোক বা না সেজে সৌন্দর্য প্রকাশ করা হারাম। 
মাহরাম পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং অন্তরঙ্গ মাহরাম হচ্ছে স্বামী। যার সামনে পর্দা করতে হবে না, সাধারণ পোশাক বা একটু ভিন্ন ধরনের পোশাকেও সমস্যা নেই। এজন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন,
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পোশাক। (২:১৮৭)

স্বামীর পর সবচেয়ে কাছের মাহরাম হচ্ছে, ছেলে, বাবা এবং ভাই।
স্বামী, ছেলে, বাবা, ভাই এই ৪ জন মাহরাম ছাড়া অন্যান্য যে, মাহরাম আছে তাদের কাছ থেকে যথেষ্ট দূরত্বে থাকাই ভালো। এবং সৌন্দর্য ঐসকল মাহরামদের সামনে প্রকাশ না করে পর্দা করাই উত্তম। 
মাহরামদের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মাহরাম যেহেতু স্বামী। তাই স্বামী ছাড়া ছেলে, বাবা, ভাইদের সামনেও শালীন পোশাক পড়া জরুরী। কেননা মাথায় কখন কার খারাপ চিন্তাভাবনা চলে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বাবার দ্বারা মেয়ে, ভাইয়ের দ্বারা বোন, মামার দ্বারা ভাগ্নি, চাচার দ্বারা ভাতিজি ধর্ষণের স্বীকার হইছে এমন অনেক ঘটনাই আছে। শালীন পোশাক পড়া কিংবা শরয়ী পর্দা করে চলাফেরা কঠিন কিছু নয় বরং একটু সাহস আর আগ্ৰহ দরকার।

⬤ নারী লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারবে কিনা?
Bangla:
https://tinyurl.com/bdhnt2dk or,
English:
https://islamqa.info/en/answers/13466/ruling-on-women-wearing-lipstick

মাহরাম, গায়ের মাহরাম মেনে যদি সাজ-গোজ করতে পারেন তাহলে সমস্যা নেই। 
তবে, লিপস্টিক কি দিয়ে বানানো হয় সেটা সবার আগে নারীদের জানতে হবে। কোনো ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা, হালাল-হারাম উপাদান দিয়ে বানানো কিনা.... ইত্যাদি জানি জরুরী।
এক গবেষণায় লিপস্টিকে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। ক্যাডমিয়ামের উপস্থিত পাওয়া গেছে এবং ক্যান্সার, টিউমার হয় এমন উপাদানও রয়েছে।


ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ “ডিনা মেরি আতিহ গ্রাহাম” বলেন,
"সময়ের সাথে সাথে, এই কৃত্রিম বিশৃঙ্খলাকারী (লিপস্টিক/ মেকআপ) শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং অন্যান্য হরমোনের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। বেশি মাত্রার ক্ষেত্রে, এই উপাদানগুলি তাত্ত্বিকভাবে স্তন ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সার এবং টিউমারের মতো রোগে আক্রান্ত করবে।" 
https://www.hackensackmeridianhealth.org/en/healthu/2021/09/10/can-lipstick-cause-breast-cancer

এজন্য সবচেয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে, লিপস্টিক ব্যবহার করবেন তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে অথবা, কতটুকু নিরাপদ তা দেখতে হবে। অতি উত্তম হবে লিপস্টিক ব্যবহার না করা এবং যারা লিপস্টিক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে আছেন ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলুন।

⌬ ⦙ ৪-
লিপস্টিকের পর যেই সাজগোজের কথা আসে সেটা হচ্ছে মেকআপ করা। লিপস্টিকের যে বিধান মেকআপের ক্ষেত্রে একই বিধান। অর্থাৎ, মেকআপ দিয়ে গায়ের মাহরামদের সামনে যাওয়া হারাম। তাছাড়া লিপস্টিকের মতো মেকআপও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান রয়েছে।

মেকআপের অনেক ধাপ আছে, কেউ হালকা মেকআপ করে, কেউ মধ্যেম, কেউ ভারী মেকআপ করে থাকে। 
হালকা মেকআপে ত্বকের উজ্জ্বলতা হয়তো একটু বাড়ে এতে কোনো সমস্যা নেই যতক্ষণ না গায়রে মাহরামের সামনে যাবেন। 

কিন্তু মাধ্যম বা ভারী মেকআপে চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। যারা আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করে, কম হোক বা বেশি অথবা, কিছু সময়ের জন্য হলেও উভয়কেই অভিশপ্ত বলা হয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ, ৪১৬৯)
একবার ভাবেন, কোনো সাধারণ মানুষ অভিশাপ দেয় নাই, আল্লাহ সরাসরি দিয়েছে। তার পরিনতি হাশরে কি হবে ভাববেন তো???
⬤ নারীরা হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হওয়া কি জায়েজ?
Arabic:
https://tinyurl.com/25sxbee9 or,
Bangla:
https://tinyurl.com/3zvdravv

⌬ ⦙ ৫-
কিছু পরিবারের অনেক পুরুষ তাদের স্ত্রী, কন্যা বা বোনদেরকে গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনে উপস্থিত হতে এবং তাদের সাথে বসে কথা বলার অনুমতি দেয় অথবা বসতে এবং কথা বলতে বাধ্য করে।
এমন পরিস্থিতিতে যদি কোনো নারী তাদের সাথে বসতে বা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায় তখন পরিবারের লোকজন বলে এটি তাদের এবং তাদের পূর্বপুরুষদের রীতি। আবার এটাও বলে তারা ভাইয়ের মতো, চাচার মতো, তাদের কোনো কু-চিন্তাধারা বা মতলব নাই তাদের হৃদয় পবিত্র। এই হচ্ছে বর্তমান মুসলিম পরিবারগুলোর অবস্থা!

এমন পরিস্থিতিতে বোনদের কখনো উচিত হবে না, গায়ের মাহরামদের সামনে গিয়ে বসা, কথা বলা। শরীয়াহ সেই অনুমতি দেয় না। যদি পরিবার বাধ্য করে তাদের বুঝিয়ে বলবেন, যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে যতটুকু পারেন শালীন পোশাক পড়ে শরীর ঢেকে যাবে। কেমন আছে, বাসার সবাই কেমন অর্থাৎ সাধারণ জিজ্ঞাস শেষ করে দ্রুত নিজের রুমে চলে আসবে। পিছন থেকে বসতে ডাক দিলেও না শুনার ভান করে চলে আসবেন।

⬤ এখন জানা দরকার যে, শরীয়াহ গায়ের মাহরামদের সামনে বসা, কথা বলার অনুমতি দেয় কিনা? উত্তর, অনুমতি দেয় না।
Arabic:
https://tinyurl.com/577a4adx or,
Bangla:
https://tinyurl.com/4f8wbhyj

⌬ ⦙ ৬-
বিবাহিত -অবিবাহিত মেয়েরা মাহরাম পুরুষদের সামনে সাধারণ সাজসজ্জা করতে কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু মাহরামদের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মাহরাম হচ্ছে স্বামী। স্বামী ছাড়া অন্য মাহরামদের সামনে ঐরকম সাজসজ্জা করা যাবে না যে, সাজসজ্জায় তাঁরা আকৃষ্ট হবে, খারাপ চিন্তাভাবনা চলে আসবে। একটা অঘটন ঘটাতেও তাদের বিবেক বাঁধা নাও দিতে পারে, যেমনটা উপরে বলেছি। নারী নিজের নিরাপত্তা নিজেই নিশ্চিত করতে হবে।

⬤ অবিবাহিত মেয়েরা মাহরাম পুরুষদের সামনে লিপস্টিক এবং মেকআপ ব্যবহার করাতে পারবে কিনা? 
Arabic:
https://tinyurl.com/mskcf7k2 or,
Bangla:
https://tinyurl.com/3py23m25

⌬ ⦙ ৭-
পর্দা ঠিকমতো করেন কিন্তু কাজল, লিপস্টিক, মেকআপ দিয়ে সাজগোজ করে বাইরে বের হোন। এই ব্যাপারে শরয়ী বিধান হচ্ছে, নারী যখন ঘরের বাইরে বের হবে তখন সাজসজ্জা করে বের হতে পারবে না কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
Arabic:
https://tinyurl.com/3ucfkf5u or,
Bangla:
https://tinyurl.com/2umtfzcv

⌬ ⦙ ৮-
যেসব নারীরা পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে তাদের অভিভাবকরা দাইয়্যুস। হাদিস থেকে স্পষ্ট পাওয়া যায়, দাইয়্যুস (বাবা-ভাই, ছেলে-স্বামী বা অভিভাবক।) জাহান্নামে যাবে। 
এখন বোনদের ঠিক করতে হবে সে কি তার অভিভাবককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে নাকি জান্নাতে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে।

বিঃদ্রঃ আরবী ফতোয়া গুলো গুগল ট্রান্সলেটর দিয়ে অনুবাদ করা হয়েছে, তাই অনুবাদে কিছু ভুলভ্রান্তি বা একটু ভিন্নরকম হতে পারে। তাই একটু বুঝেশুনে অনুবাদ মিলিয়ে নিবেন। আর লিংক বড় হওয়ার লিংক ছোট করা হয়েছে। 

সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য জাযাকাল্লাহু খায়রন। যারা পড়েন নাই তারা একটু একটু করে সময় দিয়ে পড়ে নিবেন।

লিখেছেনঃ নাসিম আহমাদ 



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন