AI (Artificial intelligence–কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) কে দাজ্জালের সহযোগী প্রযুক্তি বললে অনেকে ত্যাড়ে আসবেন, বর্বর যুগের গুহা জ্ঞানী বলবেন, মূর্খ বলবেন, বিজ্ঞান সম্পর্কে কিছুই জানিস না.... ইত্যাদি বলবেন।
যে যাই বলেন এটাই সত্য যে, আধুনিকতার জগৎ অধিকাংশ মানুষকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করেছে। আধুনিক প্রযুক্তির রূপ এখন যা দেখেছেন আগামীতে এরচেয়েও বেশি কঠিনভাবে প্রয়োগ হবে মানুষের উপর।
মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় যে, পাইলট নিহত হয়েছে তার ছবি ব্যবহার করে AI দিয়ে বানানো ভিডিও সামনে পরেছে, অনেকে হয়তো দেখেছেনও। একজন মানুষ মারা গেছে আর সেই মানুষটিই বলতেছে,
“চেষ্টা করেছি খোলা জায়গায় নামাতে কিন্তু পারি নাই বলে ক্ষমা করে দিবেন!!!”
মানে আপনার একটা ছবিই যথেষ্ট AI দিয়ে ভিডিও বানানোর জন্য? আপনি মরে গিয়েও জীবন্ত হয়ে গেলেন ইন্টারনেট জগতে? আবার কথাও বলতেছেন? আবার পাপও হইতেছে।
AI দিয়ে আপনার সম্মান, ইজ্জত ধুলিসাৎ করতে পারবে কিনা সেটা আর বলছি না। এটুকু জেনে রাখুন যত্রতত্র নিজের ব্যক্তিগত তথ্য এবং ছবি শেয়ার না করাই ভালো। ইন্টারনেট জগৎ এবং আশেপাশের মানুষ অতি বিপদজনক, এমনকি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও।
এবার আসা যাক, কীভাবে AI দাজ্জালের সহযোগী হবে?
দাজ্জাল জ্বীন বা মানুষের চেয়েও শক্তিশালী কিছু না। দাজ্জাল মানুষের মতোই সাধারণ একজন। তবে তার সহযোগী হবে ইহুদি-কাফির (অমুসলিম, নামধারী মুসলিম) এবং তথ্য-প্রযুক্তি, ইবলিশ।
দাজ্জালের কিছু ক্ষমতা নিচে উল্লেখ করছি,
(১) দাজ্জালে ডান চোখ হবে কানা,
(২) তার চোখ হবে আঙ্গুরের মতো ফোলা,
(৩) কপালে লিখা থাকবে আরবীতে ك ف ر অর্থাৎ কাফির- كفر
(৪) একজন ঈমানদার মুসলিম মূর্খ বা শিক্ষিত যাই হোক সে كفر লেখাটা পড়তে পারবে।
(৫) শুধুমাত্র ইমানদার মুসলিমরাই পড়তে পারবে, মডারেট, নামধারী মুসলিমরা পড়তে পারবে না।
(৬) দাজ্জাল আকাশকে বলবে বৃষ্টি বর্ষণ কর, তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হবে। (ড্রোনের মাধ্যমে ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিতে।)
(৭) দাজ্জাল যখন আসবে, নিজেকে প্রকাশ করবে তখন তার এক হাতে থাকবে জান্নাত (দুনিয়ার সুখশান্তি, সচ্ছলতা ইত্যাদি।) আরেক হাতে থাকবে জাহান্নাম (দুনিয়ার ক্ষুধা, অভাব ইত্যাদি।)। প্রকৃতপক্ষে যে হাতে থাকবে দুনিয়ার জান্নাত তা পরকালে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। এবং যে হাতে থাকবে দুনিয়ার জাহান্নাম তা পরকালে হবে জান্নাতবাসী।
(৮) দাজ্জাল মৃতকে জীবিত করবে। (প্রযুক্তি এবং জ্বীনের মাধ্যমে।)
এমন আরো অনেক কৃত্রিম ক্ষমতা থাকবে তার কাছে। যেগুলো দিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে, দাজ্জাল তার দলে নিয়ে যাবে। এবং দাজ্জালের জান্নাতে (দুনিয়ার সুখশান্তি) প্রবেশ করাবে। যারাই দাজ্জালের জান্নাতে প্রবেশ করবে তারাই পরকালে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (৭নং)
এতো গুলো নিয়ে এক পোষ্টে আলোচনা সম্ভব নয়। যেহেতু মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারবে সেইটা নিয়েই আলোচনা করা যাক।
৮ নং পয়েন্টে দাজ্জাল মৃতকে জীবিত করবে। দাজ্জাল মৃতকে কীভাবে জীবিত করবে? মৃতকে জীবিত করার ৩ টি উপায় বিশ্লেষণ করে খুঁজে পেয়েছি,
১। AI এর মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করবে।
২। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (VR) মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করে দেখাবে।
৩। ক্বারীন জ্বীনের মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করবে। (মানুষ জন্মের পর তার সাথে এই জ্বীন আল্লাহ দিয়ে দেন।)
১। AI এর মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করবেঃ
আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন মাইলস্টোনে নিহত পাইলটের AI দিয়ে বানানো ভাইরাল ভিডিওটি। সেই ভিডিওতে কথা বলছে, নড়াচড়া করছে।
আপনারা যখন ভিডিও কলে কথা বলেন তখন বিপরীত প্রান্তে থাকা জীবিত ব্যাক্তি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। একইভাবে AI এর সাথে টেক্সট বা ভয়েজ দিয়ে কথা বলেন তখন সে উত্তর দেয়। যদিও ভিডিও মাধ্যমে কথা বলা এখনো আসে নাই। আমার ধারণা খুব শীঘ্রই চলে আসবে এবং AI দিয়ে বানানো ভিডিওর মতো AI প্রতিচ্ছবি আপনার সাথে কথা বলবে ঠিক যেভাবে জীবিত ব্যক্তির সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছিলেন, উত্তর পেয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই AI আপনাকে উত্তর দিবে।
এই পদ্ধতিতেও দাজ্জাল মৃতকে জীবিত করতে পারে।
২। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (VR) মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করে দেখাবেঃ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমেও মৃতকে জীবিত করে দেখানো এবং অনুভব করানো সম্ভব।
ইলেকট্রনিক্স বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন, গ্লাভস, চোখে VR গগলস্ , সেন্সর, হেলমেট ইত্যাদি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ আপনার শরীর লাগানো বা পড়ানো হবে।
অতঃপর VR গগলসে আপনি যে মৃত ব্যক্তিকে দেখতে চান তার নিখুঁত একটা ভিডিও চলবে। তার সাথে কথা বলতে পারবেন, স্পর্শ করলে অনুভব করতে পারবেন, হেঁটে গিয়ে ধরতে পারবেন, লুকোচুরি খেলতে পারবেন। সোজা কথায় আপনি একজন জীবিত মানুষের সাথে যেভাবে কথা বলতে পারেন, যা করতে পারেন তার প্রায় সবই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমেও পারবেন। এই পদ্ধতিতেও দাজ্জাক মৃতকে জীবিত করে দেখাবে।
নিচের ভিডিওটি দেখুন তাহলে সহজে বুঝতে পারবেন।
৩। ক্বারীন জ্বীনের মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করবেঃ
মানুষ জন্মের পর তার সাথে একটা ক্বারীন জ্বীন দিয়ে দেয় আল্লাহ। ঐ মানুষ মুসলিমের ঘরে জন্মাল নাকি কাফিরের সেটা মোক্ষ বিষয় নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যত শিশুই জন্মগ্রহণ করবে তাদের সাথে একটা ক্বারীন জ্বীন আল্লাহ দিয়ে দিবেন।
আল্লাহ কাকে কতদিন বাঁচিয়ে রাখবে বা ফিরিয়ে নিবেন সেটা বলা কেউর পক্ষেই সম্ভব নয়। ধরে নেই মানুষের গড় আয়ু ৬০ বছর অথবা তার আশেপাশে। মানুষ এতো কম সময় বাঁচলেও জ্বীন কিন্তু আরো অনেক অনেক বেশি বছর বাঁচে। আপনি মারা গেলেও আপনার ক্বারীন জ্বীন থেকে যায়।
এজন্য দেখবেন কেউ মারা গেলে অনেক সময় দাবি করে যে, আমি ওমুক জায়গায় তারে দেখছিলাম, পরে পিছনে চেয়ে দেখি নাই অথবা, বাড়িতে আসার পর মনে হয় সে তো মারা গেছিল।
তাহলে আপনি যে, দেখলেন সেটা কে ছিল?
এটা ঐ মৃত ব্যক্তির সাথে থাকা ক্বারীন জ্বীন ছিল। যে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। ক্বারীন জ্বীন জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকায় সে আপনার চলাফেরা, কথাবার্তার ধরন এবং সবকিছু তার হুবহুব জানা তাই সে লেবাস নিয়ে সহজে ধোঁকা দিতে পারে, মানুষের সামনে উপস্থিত হতে পারে। জাদুবিদ্যার মধ্যে এই ক্বারীন জ্বীনকে উপস্থিত করে দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে আপনার সামনে উপস্থিত করবে। (জাদু/ব্লাকম্যাজিক এগুলো অনেক বেড়ে গেছে। এসব কুফরী, আর যে মুসলিম কুফরী করে মারা যাবে সে কাফির হয়ে মারা যাবে। চিরস্থায়ী জাহান্নামী।)
দাজ্জালের সহযোগী যে, শুধু ইহুদি-কাফির, অমুসলিম, নামধারী মুসলিমরাই হবে তা নয় সাথে ইবলিশও তার বড় সহযোগী হবে।
এজন্যই দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচতে মুসলিমদের বলা হইছে, “সূরা কাহাফ” মুখস্থ এবং তা বারে বারে পাঠ যেন করে।
সে সময় ইমানদার মুসলিমরা ফিতনা থেকে বাঁচতে দ্বীনকে নিয়ে ফিতনামুক্ত বৃষ্টিপাত এবং ফসল জন্মায় এমন গ্ৰাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যাবে। তাদের সাথে থাকবে বকরির পাল। (বুখারী, আবূ দাঊদ, সুনানে ইবনে মাজাহ)
তথ্যানুসন্ধান, বিশ্লেষণের পর এই তিনটি উপায়ে দাজ্জাল মৃতকে জীবিত করবে এমনটাই এখন পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে পেয়েছি। আগামীর দিনগুলোতে হয়তো আরো কঠিন কিছু আসতে যাচ্ছে। ইমান টিকিয়ে রাখা হবে জলন্ত আংড়া/কয়লা হাতে নেওয়ার মতো। তাই এখন থেকেই দাজ্জালের ফিতনাগুলো চিহ্নিত করুন এবং ফিতনা থেকে বাঁচার প্রস্তুতি নিন।
লিখেছেনঃ নাসিম আহমাদ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন