সমতলে বিছানো স্থির জমিন পর্ব ২


পৃথিবী যে স্থির ও সমতল সে ব্যাপারে যুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে আমরা আগে ইসলামের দলিলাদি দেখে নেই চলুনঃ- 


১.আল কুরআনে বলা হয়েছে,

"তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তাঁরই নির্দেশে আসমান ও যমীন স্থির রয়েছে।" [আর রুম,২৫]

.

অন্য আয়াতে এসেছে,

"নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আসমান ও যমীনকে স্থির রাখেন যাতে এরা টলে না যায়।যদি এগুলো টলে যেত, তবে তিঁনি ব্যতীত কে এগুলোকে স্থির রাখবে?"[আল ফাতির,৪১]

.

এখানে কুরআন স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে আসমান-যমীন স্থির, অথচ প্রচলিত বিজ্ঞাণ বলছে যে পৃথিবী প্রতি ঘন্টায় ৩০হাজার কি.মি. বেগে চলছে।অবাক লাগে, যখন দেখি এ অতি স্পষ্ট আয়াতকেও কিছু অবুঝ মুসলিমরা গোঁজামিল দিয়ে বিজ্ঞাণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে যায়।কেউ ভেবেও দেখে না যে এর দ্বারা তারা মালিকের একটি সুস্পষ্ট বাণীর ওপর অস্পষ্টতার ঘৃণ্য অভিযোগ আরোপ করছে।আমি জানি আল কুরআনে বেশকিছু রুপক বর্ণনা রয়েছে, কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলার সুমহান ইজ্জ্বতের কসম, এ আয়াতগুলাও কখনোই সেসব রুপক আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়,এদের বর্ণনারীতিতেই তা স্পষ্ট।তাও যদি মেনে নিতে কষ্ট হয়, তবে আরও কিছু আয়াত দেখুন।

.

"তারা কি দেখে না, যমীনে যা কিছু আছে আর সমুদ্রে চলমান নৌকা, সেসবকে আল্লাহ্ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন।তিঁনিই আসমানকে স্থির রেখেছেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত যমীনে পতিত না হয়।নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি করুণাবান,দয়াবান।"[আল হাজ্জ্ব, আয়াত ৬৫] (২২:৬৫)

.

আল্লাহ্, যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন স্থির বাসযোগ্য এবং আসমানকে করেছেন ছাদ।"

[আল মুমিন,আয়াত ৬৪] (৪০:৬৪)

.

এখন কি আপনি এটা বলতে পারবেন যে এতগুলো আয়াতজুড়ে আমাদের মালিক শুধু রুপক বর্ণনাই দিয়ে গেছেন?


হযরত উমর (রাঃ) যখন কিছুকে বিশ্বাস করানোর জন্য কসম করতেন, তখন বলতেন, "সেই মহান সত্ত্বার কসম দিয়ে বলছি যার আদেশে আসমান জমীন স্থির রয়েছে।" 


উনি কি আমাদের চেয়ে দ্বীনের জ্ঞাণ কম রাখতেন।নাকি তিঁনি বা সাহাবারা অবুঝ ছিলেন যেকারণে তাঁকে পৃথিবীর গ্রহকেন্দ্রিক চলমান হবার কথা না জানিয়ে স্থির যমীনের শিক্ষা দেয়া হত?


অবাক লাগে যখন দেখি কিছু বেকুব একথা বলে যে সাহাবাদের এসব কথা বলা হলে তারা সেটা বুঝতে পারতেন না, তাই তাদের এমনটা বলা হয় নি।

এটা কতবড় ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা সেটা চিন্তা করেও দেখে না?সাহাবারা নাকি বুঝতেন না?


গোল পৃথিবী, গ্যালাক্সি এসব জিনিসগুলো নাকি এতই কঠিন যে সাহাবারা এটা বুঝতে পারতেন না, তাই তাদের সেটা সেভাবে বলা হয় নি।তবে কি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাদের ভুল শিক্ষা দিয়েছেন বা তাদের ঘুরানো প্যাঁচানো ব্যাখা করেছেন- এটা বলব আমরা? নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালেক।


২."আমি যমীনকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি।"[আল হিজর,আয়াত ১৯] (১৫:১৯)

.

"আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি।আমি কতই না সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী।
"[আয যারিয়াত,আয়াত ৪৮] (৫১:৪৮)


"যমীনকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।"[আন নাযিয়াত, আয়াত ৩০] (৭৯:৩০)

.

আচ্ছা আমাকে বলুন তো, কোনও গোল জিনিসকে কি বিস্তৃত করা, ছড়িয়ে দেয়া আদৌসম্ভব।যতই অপব্যাখা করা হোক, এটা কি কোনওভাবে মেনে নেয়া সম্ভব যে, কোনও গোল জিনিসকে বিছানো বা ছড়িয়ে দেয়া হবে।গোল জিনিসকে আকৃতিতে বড় ছোট করা যায়, কিন্তু ছড়ানো বা বিস্তৃত করা না।এরুপ করতে গেলে একমাত্র সমতল যমীনেই তা করা সম্ভব।

.

এখন আপনি হয়ত বলবেন, মহান আল্লাহ্ চাইলে তা করতে পারেন। হ্যা, অবশ্যই তিঁনি তা করতে পারেন, কিন্তু তাহলে তো এটা ঘুরানো প্যাঁচানো বর্ণনার একটা আয়াত হয়ে গেল, এটা কি আল কুরআনের বৈশিষ্ট্যের সাথে আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ?যেখানে আল কুরআন সবকিছু সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে?

.

তাও যদি আপনার আপত্তি থাকে, তবে শুনে নিন আপনার রবের সুস্পষ্ট আয়াত,


وَ اِلَی الۡاَرۡضِ کَیۡفَ سُطِحَتۡ ﴿ٝ۲۰﴾

"এবং যমীনের দিকে, কিভাবে তা সমতল বিছানো হয়েছে।" [আল গাশিয়াহ,২০] (৮৮:২০)

.

এখানে সুতিহাতের মূল হচ্ছে সাতাহা, যার অর্থ সমতল।এত সুস্পষ্ট বর্ণনার পরেও কি আপনি বিজ্ঞাণের সাথে তাল মিলিয়ে কুরআনের বিপরীত করে বলতে পারেন যে যমীন সমতল নয় বরং গোলাকার?

নাকি আপনি নিজেকে নবী দাবিকারী মুর্তাদ রাশাদ খলিফার মত বলবেন যমীন উটপাখির ডিমের মত? (উক্ত বক্তব্যের বিশদ ব্যাখা নিয়ে আলাদা পোস্ট দিব ইনশাআল্লাহ) 


৩."আমি কি করিনি যমীন(আরদ) কে বিছানা আর পর্বতসমূহকে পেরেক?"[সুরা নাবা,৬-৭] (৭৮: ৬,৭) 

.

"তিঁনি পর্বতকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।"[আন নাযিয়াত,৩২] (৭৯:৩২)

.

"তিঁনি খুটি ছাড়া আসমানসমূহকে স্থাপন করেছেন যা তোমরা দেখছ, আর যমীনকে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পাহাড়,যাতে তা তোমাদের নিয়ে হেলে না পড়ে...."[লুকমান,১০] (৩১:১০)

.

"আর তিঁনি যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা,যাতে তা তোমাদের নিয়ে হেলে না যায় এবং নদ নদী ও পথসমূহ, যাতে তোমরা পথপ্রাপ্ত হও।"[আন নাহল,১৫]

.

এ আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন, এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে যমীনে দৃঢ়ভাবে পেরেক মারার মত পর্বত মেরে দেয়া হয়েছে যাতে তা হেলে না পড়ে। অথচ প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান মোতাবেক পৃথিবী নামক এই কাল্পনিক গ্রহ তো অনবরত ঘুরছে, হেলছে দুলছে।নিজের চারদিকে আবর্তনও করছে। 

.

এখন বলুন, কার কথাকে সত্য মানবেন আপনি? আপনার রবের আয়াতকে, না কাব্বালাস্টিক যাদুবিদ্যার অনুসারী এই বিজ্ঞানীদের?

.

এছাড়া এ আয়াত দ্বারা যমীনের সমতল হবার ব্যাপারটিও স্পষ্টই বোঝা যায়, কেননা সমতল যমীনের পক্ষেই হেলে যাওয়া সম্ভব।গোল জিনিস হেলতে দুলতে পারে না, কেবল ঘুরতেই পারে।


পর্ব ১ পড়ুন

লিখেছেন Aksir Ahmed


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন