৪. বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত বলে আসছে আসমান বলে কোনওকিছুর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় নি।এজন্য অনেকে অপব্যাখা করে বায়ুমন্ডলের নামধারী স্তরগুলোকেই আসমানের স্তর বানিয়ে ফেলেছেন।অথচ এটা সম্পূর্ণ কুরআনের বর্ণনার বিপরীত।কুরআনের বর্ণনামতে আসমান একটি মজবুত শক্ত স্তর।এটি অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি ছাদ কেননা অত্যন্ত বিশাল হওয়া সত্ত্বেও এটি ভেঙে যমীনবাসীদের ওপর পড়ে না।
.
"নির্মাণ করেছি তোমাদের মাথার উপর মজবুত সপ্ত আসমান।"
[সুরা নাবা,১২] (৭৮:১২)
.
"আমি আসমানকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি, অথচ তারা আমার আসমানস্থ নিদর্শনাবলি থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।"
[আল আম্বিয়া,৩২] (২১:৩২)
.
"তারা কি তাদের উর্ধ্বস্থিত আসমানের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমি কিভাবে ওটা নির্মাণ করেছি এবং ওকে সুশোভিত করেছি, আর ওতে কোনও ফাটলও নেই।
[সূরা ক্বাফ,৬] (৫০:৬)
.
আমাকে বলুন তো আসমান যদি কোনও কঠিন/সলিড বস্তু না হত, তবে তা কিভাবে ফাটতো?আসমান যদি কোনও বায়বীয় বস্তুই হত, তবে কেন একে মজবুত বলা হলো?
কেয়ামত সংক্রান্ত আয়াতগুলোর দিকে খেয়াল করে দেখুন সেখানে আসমান সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
.
"যেদিন আকাশ প্রকম্পিত হবে প্রবলভাবে।"[আত তুর,৯]
"যেদিন আসমান বিদীর্ণ হবে সেদিন ওটা লাল চামড়ার ন্যায় রক্তবর্ণ ধারণ করবে।"
[আর রহমান,৩৭]
"যেদিন আকাশ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়বে।"
[সুরা হাক্কাহ,১৬]
.
"আসমান উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, ফলে তা হবে বহু দরজা বিশিষ্ট।"[সুরা নাবা,১৯]
আমাকে বলুন তো, প্রকম্পিত হওয়া, বিদীর্ণ হওয়া, চূর্ণ বিচূর্ণ হওয়া, এগুলো কি আদৌ কোনও বায়বীয় বস্তুর দ্বারা সম্ভব। আর সুমহান মালিক কী এমন কোনও অসম্ভব জিনিস দিয়েই মানুষকে বর্ণনা দিয়েছেন?
.
আর তাছাড়া বলা হয়েছে আসমানে বিভিন্ন দরজা থাকার কথা।বায়বীয় আসমানে কি করে দরজা থাকতে পারে?
মূলত যারা বায়বীয় আসমানের কথা বলে বিজ্ঞাণের সাথে কুর আনকে মিলাতে যায় এ আয়াতগুলো ধারালো তরবারির মত তাদের ঝাঝড়া করে দেয়।
.
৫.আরেকদল মানুষ রয়েছে যারা এ অপব্যাখা করে যে আসমান সলিড, কিন্তু তা এত এত দূরে রয়েছে যে সেটা দেখা কারও পক্ষেই সম্ভব হয় নি।তাদের এ মতবাদও খন্ডন করব ইনশাআল্লাহ্, তবে তার আগে কয়েকটা কথা বলে নেয়া প্রয়োজন মনে করছি।
.
এ ধরণের ব্যাখার কারণ হল মূলত নাসার চন্দ্রভিযানের নাটক।নাসা চাদে লোক পাঠিয়েছিল, অথচ আল কুরআনে বলা হয়েছে যে, মানুষ বা জ্বীন প্রথম আসমান পার হতে পারবে না ছাড়পত্র ব্যতীত(৫৫:৩৩)। এজন্য মানুষ মনে করে চাঁদ অভিযানে যেহেতু প্রথম আসমান দেখা যায়নি, তাই সম্ভবত প্রথম আসমান আরও দূরে কোথাও। বস্তুতঃ এটা ছিল অনেক বড় একটা ধোকা যেটা শয়তানের পূজারীদের সংস্থা NASA এবং অন্যান্য স্পেস এজেন্সিগুলো মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে, আর চন্দ্র অভিযান ছিল শুধুমাত্র একটা নাটক।এ নিয়ে প্রমাণসহ আর্টিকেল রয়েছে যেটার লিঙ্ক আমি শেষের দিকে দিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ্।
.
তো ফিরে আসা যাক সেই মহা দূরত্বে থাকা প্রথম আসমানের কথা।
.
প্রথমত, যদি বলি আসমান অনেক বেশি দূরত্বে অবস্থিত তবে বলতে হয় কত দূর?
বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে আসমানের সাথে যমীনের দূরত্ব পাঁচশো বছরের পথ, (বিস্তারিত সামনে বলব ইনশাআল্লাহ) আবার যমীনের নিজেদের মধ্যেও একই পরিমান দূরত্ব।এ পথ কিসের ভিত্তিতে দেয়া আমাদের জানা নেই।কোন কোন ক্ষেত্রে দূরত্ব বর্ণনায় ঘোড়ার অতিক্রান্ত দূরত্ব, কোনও ক্ষেত্রে পাখির গতি বলা হয়েছে।অর্থাৎ দ্রুতগামী কোনও বস্তু।কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আলো বা এজাতীয় অতিদ্রুত কোনও কিছুর দ্বারা দূরত্ব বর্ণনা করেছেন, এমন কোনও নযীর পাওয়া যায় না।অথচ কেউ কেউ এ দূরত্বকে আলোর গতি বানিয়ে বলছে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সম্ভবত আলোকবর্ষের কথা বলেছেন।এটা কিভাবে সম্ভব যে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সাহাবীদের এমন কিছু দূরত্বের একক দ্বারা দূরত্ব বোঝাবেন যেটা কিনা তাঁর জামানায় ছিলই না।আমরা জানি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সাহাবাদের সবসময় এমন কিছুর সাহায্যে উদাহরণ দিতেন, যেটা তাঁর যামানায় এভিইলেবল ছিল।উদাহরণস্বরূপ জাহান্নামীদের দাত বোঝাতে উহুদ পর্বতের মাপ ব্যবহার করেছেন।
.
আর যদি মেনেও নেই এই ব্যাখা যে, ৫০০বছরের আলো বা এমন কিছু দ্বারা বোঝানো হচ্ছে দূরত্ব, তবেও প্রশ্ন থেকে যায়। বিজ্ঞাণীরা বলেছে তারা ১৩০০০০০০০০০ আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছে, অথচ সেখানে পর্যন্ত সলিড আসমানের কোনও আসমানের দেখা মেলে নি।তাহলে কি আমরা ধরে নেব প্রথম আসমান এই ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ এরও বহু দূরের কিছু?
.
সহিহ বুখারীর কুরআআনের তাফসীর অধ্যায়ের একটি হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি জ্বীনেরা প্রথম আসমানের থেকে খবর চুরি করে যমীনের গণকদের কাছে সে তথ্য পাচার করে।
এখন এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য যে একটা জ্বীন এই হাজার কোটি আলোকবর্ষ(১ আলোকবর্শ=প্রায় ৯ লক্ষ কোটি কি.মি) পাড়ি দিয়ে আসমানি খবর চুরি করে পুনরায় সে খবর নিয়ে আসে?
বস্তুত এমন করতে হলে তো জ্বীনদের গতি আলোর গতির চেয়েও কয়েক কোটি গুণ বেশি হতে হবে।এটা কি আদৌ সম্ভব?
.
আর আসমান যদি এত এত বিশালই হয় যে এত দূরত্বেও তাকে খুজে পাওয়া যায় না, তবে কেয়ামতের সময় এ বিশাল আকাশ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে কিভাবে যমীনের উপর টুকরো টুকরো হয়ে পড়বে।কারণ সে সুবিশাল আকাশের সামনে কাল্পনিক পৃথিবি তো একটা বালুকণার তুল্যও নয়।এতবড় আসমান খন্ড বিখন্ড হয়ে তার তুলনায় একটা বালুকণা, এ পৃথিবীর উপর পতিত হবে-- এমন ব্যাখা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?
.
এছাড়া পানিচক্রের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলা কি বলেন?
তিঁনি বলেন,
"যে পবিত্রসত্ত্বা তোমাদের জন্য যমীনকে বিছানা ও আসমানকে ছাদ করেছেন এবং আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেছে।"[আল বাকারাহ,২২]
.
এ আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট যে আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ হয়ে থাকে। এখন সে আসমান যদি এত বিশাল দূরত্বেই থাকত, তবে সেটা কিভাবে এই পথ অতিক্রম করে যমীনে এসে পড়বে? কল্পনা করে দেখুন, কোটি কোটি আলোকবর্ষে অবস্থিত প্রথম আসমান, সেখান থেকে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোটা এসে এই কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরত্বের এই পৃথিবীতে এসে পড়ে? ব্যাপারটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?
আর তাছাড়া আমাদের যমীনের নিচেও তো আরও স্তরে স্তরে ছয়টি যমীন বিদ্যমান আছে, সেগুলো কোথায়?
.
যদি এতগুলো স্পষ্ট আয়াতের পরেও মানতে আপনার অসুবিধা হয় যে বিজ্ঞাণ মিথ্যা, তবে আমি একটি হাদীস পেশ করছি।
.
আল আদাবুল মুফরাতের মেহমানদারি অধ্যায়ে এ হাদীসটি আছে।হাদীসটির মান একদম সহীহ।
.
হযরত আলী (রাঃ) বলেন, "ছায়াপথ হলো আসমানের প্রবেশদ্বার এবং নূহ (আঃ) এর বন্যায় প্রবল বর্ষণের জন্য এ দ্বারকেই খুলে দেয়া হয়েছিল।"
.
এখন এ সহিহ হাদিসের ব্যপারে আপনার মতামত কি।যদি এ হাদীস মেনে নেই, তবে তো বলতে হয় বিজ্ঞাণ চুড়ান্ত মিথ্যা।কেননা বিজ্ঞাণ মতে ছায়াপথ হচ্ছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যেটা কিনা নক্ষত্র, নিহারিকায় ভরা।সেখান থেকে এখানে পানি আসার ঘটনা একদম আজগুবি।
আর যদি গোঁজামিল দিয়ে অপব্যাখা করেন তাও সেটা ভিত্তিহীন।কারণ বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে থাকা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকে এ পৃথিবীতে পানি এসে মহাপ্লাবন ঘটানোটা একটা চরম অযৌক্তিক ব্যাখা।অর্থাৎ, আপনি যত যাই করেন অপব্যাখা না করে কিছুতেই ইসলামকে বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে পারবেন না।
পর্ব ২ পড়ুন
লিখেছেন Aksir Ahmed
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন