শুধু যে পানি সংকট হবে এমন নয়, সবকিছুরই সংকট হবে। তেল,গ্যাস, বিদ্যুৎ, যাতায়াত, খাদ্য, চিকিৎসা, যোগাযোগ সংকটসহ আরো যাবতীয় অনেক কিছুর.....
এই সংকট মোকাবেলায় গ্ৰাম সবচেয়ে উত্তম বাসস্থান।
যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে, চারপাশে সবুজের সমাহার,নেই কোনো কিছুর কমতি। আল্লাহর দেওয়া এই সমতল ভূমিতে এমন কোনো ফসল নেই যা জন্মায় না।
আল্লাহ দেওয়া অশেষ রহমত আর তার (আল্লাহর) সৃষ্টি যে কত কি তা গ্ৰামে আসলেই উপলব্ধি করতে পারবে।
সংকট মোকাবেলায় যা পদক্ষেপ নিতে পারেনঃ
➊ বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে আপনারা সৌর প্যানেল কিনুন। মোবাইল, টর্চলাইট এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্জ করার জন্য সোলার প্যানেলের পাশাপাশি পাওয়াব্যাংক রাখুন। সম্ভব হলে ইলেকট্রনিক্সের কাজ শিখে রাখুন। নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করুন।
➋ যাতায়াতের জন্য সাইকেল কিনুন। বেশি দূরত্বের পথ সাইকেল দিয়ে পাড়ি দিতে পারবেন না। অনেক ক্লান্ত হয়ে অসুস্থও হতে পারেন। তাই একা ভ্রমন করার ক্ষেত্রে পারলে ঘোড়া কিনুন যদিও ঘোড়ায় চড়া শিখতে হবে, সহকারী ছাড়া শিখা কষ্টকর হবে। তবে চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। এটা আপনার পরবর্তীতেও কাজে আসবে। তবে সাইকেলও মন্দ নয় যদি মাঝেমধ্যে যাতায়াতের প্রয়োজন হয়।
➌ বিদ্যুৎ চালিত মোটর বাদ দিয়ে টিউবওয়েল কিনুন। যাদের এলাকায় পানির স্তর বেশি নিচে তারা গভীর টিউবওয়েল বসান, পাশাপাশি নলকূপ স্থাপন করে বৃষ্টি পানি রাখতে পারেন। পানি কীভাবে বিশুদ্ধ করা যায় শিখে রাখুন।
➍ তেল গ্যাসের পরিবর্তে লাকড়ি (কাঠ,গাছের ডালপালা,পাতা) ব্যবহার করে রান্নার অভ্যাস করুন। মাটির চুলায় রান্না করা শিখে রাখুন। বিশেষ করে শহরের মানুষ এতে অভ্যস্ত নয়, এমন পরিস্থিতিতে পরলে তাদেরকে একটু হিমসিম খেতে হবে।
➎ প্রাকৃতিক চিকিৎসা গ্রহণ করার অভ্যাস করুন। প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান রাখুন, শিখে রাখুন এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান রাখুন। কেননা শুধু যে তেল, গ্যাস, খাদ্যর দাম বাড়বে এমনটা নয় ঔষধসহ যাবতীয়র দাম বাড়বে। কোনো রোগ যদি অস্ত্রপাচার করা ছাড়া ভালো না হয় ডাক্তারের কাছে চলে যান। (প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিষয়ক বই অনলাইনে/দোকানে পেতে পারেন, খুঁজে নিবেন)
➏ টাকা পয়সা ব্যাংকে না রেখে জমি, গবাদি পশু এবং সোনা রুপা কিনে রাখুন। চলমান কাগজি টাকা কিছু নিজের কাছে রাখুন চলার জন্য।
➐ গৃহস্থলীর কাজে আধুনিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে সনাতন অর্থাৎ প্রাচীন বা পুরাতন পদ্ধতিতে করার চর্চা করুন। এতে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
➑ চাষাবাদের জন্য আধুনিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে গরু-মহিষ দিয়ে চাষাবাদের অভ্যাস গড়ে তুলুন। তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে পেলে কেনার সামর্থ্যর বাইরে চলে যাবে। আধুনিক চাষপদ্ধতি বিকল হবে।
➒ হাইব্রিড ফসল বাদ দিয়ে দেশি ফসল চাষ করুন এবং বীজ সংগ্রহ করুন। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করুন। গ্যাসের সংকট হলে রাসায়নিক সার উৎপাদন করতে পারবে না।
➓ হাইব্রিড পশুপাখি বাদ দিয়ে দেশি পশুপাখি পালন করা শুরু করুন এবং আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমে প্রজননের ব্যবস্থা করুন। আগামী বিশ্ব পরিস্থিতিতে বহিঃবিশ্বের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে তখন হাইব্রিড বীজ আর পাবেন না! দেশি বীজ ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না।
⓫ শহর ত্যাগ করে গ্রামে চলে আসুন কারণ শহরে তেল এবং গ্যাসের উপর নির্ভরশীল এবং বিশুদ্ধ মিষ্টি পানির মারাত্মক সংকট তাই বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে! জানলে অবাক হবেন যে শহরের পানি ভূগর্ভস্থ্য নয়, নদী থেকে আসে। পরে ঐ পানি পরিশোধন করে পৌঁছে দেয় সবার কাছে। আপনি টিউবওয়েলের পানি থেকে প্রয়োজনীয় যে খনিজ উপাদান পেয়ে থাকেন তা এই পরিশোধিত পানিত কিছু থাকে না। এই পরিশোধিত পানি ভালো রাখার জন্য কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় যার ফলে পানিতে কোনো গন্ধ, পোকামাকড় এবং পানির রং এর কোনো পরিবর্তন হয় না।
তবে যদি ভালোভাবে অর্থাৎ ১০০°C তাপমাত্রায় পানি ফুটিয়ে খান তাহলে পুরোপুরি ক্ষতিকর উপাদান নষ্ট না হলেও খাওয়ার উপযোগী হয় তবে কিছুটা তো ক্ষতিকর উপাদান রয়ে যায়, তো এটা স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর নয় কি?
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিশোধিত পানিতে আপনার প্রয়োজনীয় যে খনিজ অর্থাৎ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,সোডিয়াম থাকার কথা ছিল সেটা পাচ্ছেন না। এটার ঘাটতি কিন্তু রয়েই যায়।
কিয়ামতের আগে যে জনপদগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে,
Al-Isra' 17:58
وَإِن مِّن قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ ٱلْقِيَٰمَةِ أَوْ مُعَذِّبُوهَا عَذَابًا شَدِيدًاۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِى ٱلْكِتَٰبِ مَسْطُورًا ﴿۵۸﴾
“এমন কোন জনপদ নেই যা আমি কিয়ামাত দিনের পূর্বে ধ্বংস করবনা অথবা কঠোর শাস্তি দিবনা; এটাতো কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।”
তাফসির আহসানুল বায়ানঃ
[১] 'কিতাব' বলতে লাওহে মাহফুযকে বুঝানো হয়েছে। অর্থ হল, আল্লাহর পক্ষ হতে এ কথা নির্ধারিত যা লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ যে, আমি কাফেরদের প্রত্যেক বস্তিকে মৃত্যুর মাধ্যমে ধ্বংস করব। আর 'জনপদ' বলতে জনপদবাসীরা উদ্দেশ্য। আর তাদের ধ্বংসের কারণ হবে তাদের কুফরী, শিরক, অত্যাচার ও সীমালঙ্ঘন। আর সে ধ্বংস সাধিত হবে কিয়ামতের পূর্বেই। নচেৎ কিয়ামতের দিন তো নির্বিশেষে প্রত্যেক বস্তিই ধ্বংসের শিকার হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
আমি তাদের প্রতি অত্যাচার করিনি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করেছে। বস্তুতঃ তাদের কোনই উপকার করেনি তাদের সেই উপাস্যগুলি যাদের তারা ইবাদাত করত আল্লাহকে ছেড়ে, যখন এসে পৌঁছল তোমার রবের হুকুম; তাদের ক্ষতি সাধন ছাড়া তারা আর কোনো কিছুই বৃদ্ধি করলনা।
[সূরা হুদঃ ১০১]
অন্য আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, “কত জনপদ তাদের প্রতিপালক ও তাঁর রাসূলগণের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। ফলে আমরা তাদের কাছ থেকে কঠোর হিসেব নিয়েছিলাম এবং তাদেরকে দিয়েছিলাম কঠিন শাস্তি। তারপর তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করল; ক্ষতিই হল তাদের কাজের পরিণাম। ”
[সূরা আত-তালাকঃ ৮,৯]
শহরের একটা দিক লক্ষ্য করলে দেখবেন যে নারীরা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯০+ জন বেপর্দা চলাফেরা করে,আরো একটা দিক লক্ষ্য করলে দেখবেন যে,এই ৯০+ নারীরা পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুসরণ করে, ইসলামী সংস্কৃতি নয়।
সূরা আত-তালাকের ৮,৯ আয়াতে আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ কত জনপদ তাদের প্রতিপালক ও তাঁর রাসূলগণের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।....... এবং তাদেরকে শাস্তিও দিয়েছিলেন।
তাছাড়া শেষ জামানার হাদিসে দেখা যায় প্রত্যন্ত অঞ্চল,গ্ৰাম বা সবুজে ঘেরা পাহাড়ে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়,
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা হতে সে তার ধর্ম সহকারে পলায়ন করবে। [১]
হারূন ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বেশিদিন দূরে নয়, যখন বকরী হবে মানুষের উত্তম মাল, যা নিয়ে সে পাহাড়ের উপরে এবং যেখানে বৃষ্টির পানি জমে সেখানে চলে যাবে, আর নিজের দীনকে ফিতনা হতে রক্ষা করবে। [২]
তথ্যসূত্রঃ
[১] সহীহ বুখারী
হাদিস নং ১৯ (সহীহ)
(ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮)
[২] সূনান নাসাঈ ,হাদিস নং ৫০৩৫
তাহক্বীকঃ সহীহ। মিশকাত ৫৩৮৬, সহীহুল জামে’ ৮১৮৭
আল্লাহ তাদের দ্বীনের পথে চলার তৌফিক দিন। মানুষ যেকোনো সময়, যেকোনো পরিস্থিতিতে পরিবর্তন হয়ে যায়,সবই আল্লাহর কুদরতে, তবে নিজেরাও চেষ্টা করতে হবে নয়তো সফলতা আসবে কি করে?
অতএব আমাদের প্রত্যেকের চেষ্টা করা উচিত, শহুরে জীবন ত্যাগ করে ফিতনা ও সুবিধাজনক অঞ্চলে চলে যাওয়া। অর্থাৎ উল্লেখিত হাদীস যে নির্দেশ দিচ্ছে সম্ভব হলে...
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দিন,আমিন।
লিখেছেনঃ নাসিম আহমাদ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন