দুটো বিষয় মহামারী আকার ধারণ করেছে।

 

১. ঘরে ঘরে পরকীয়াঃ

এটার কথা কী বলব! নিজের চোখে এ রকম সাতটি ঘটনার সাক্ষী। তিলে তিলে গড়া স্বপ্নের সংসার তছনছ করে দিচ্ছে। এখানে নারীরাই এগিয়ে।


সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট তো হচ্ছেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সন্তান বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। পুত্র সন্তান নেশায় আসক্ত হচ্ছে। কন্যা সন্তান নিজের দুঃখ ভুলতে ভুল কোনো মানুষের সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করছে।


পরকীয়ায় জড়িত নারীরা স্বামীর টাকা-পয়সা অবৈধ প্রেমিকের পেছনে দুই হাত ভরে খরচ করে। শারীরিক সম্পর্ক করে গর্ভবতী হলেও ভয় থাকে না; স্বামীর সন্তান বলে চালিয়ে দেওয়া যায় কিংবা নির্ভয়ে কন্ট্রাসেপটিভ পিল সেবন করা যায়। তাই দুশ্চরিত্র কিছু পুরুষের কাছে এই ধরণের বিবাহিত নারীরা পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে।


পরকীয়ায় জড়িত পুরুষের অধিকাংশই ধনাঢ্য ব্যক্তি। পুরুষের টাকা থাকলে সেই টাকার গন্ধ শোকার মেয়ের অভাব হয় না। সমাজে কিছু হীন প্রকৃতির মেয়ে আছে। এরা প্রফেশনাল প্রস্টিটিউট না। এ সব মেয়েরা ওসব ধনী পুরুষের সাথে শোয়–কারণ, ওদের দরকার নিত্যনতুন দামী পোশাক, বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, লেটেস্ট ডিজাইনের অর্নামেন্টস, ফাইফ স্টার হোটেলের খাবার, ট্যুর। এগুলোর মাধ্যমে একটা দুশ্চরিত্র মেয়ে বান্ধবীদের সার্কেলে নিজেকে শো অফ করে। সাধ্য না থাকলেও বাঁকা পথে সে নিজের সাধ পূরণ করেছে।


এসবের পেছনে কারণ কি? 

অর্থাভাব? না। আমার কাছে অন্তত সেটা মনে হয় না। ভালোবাসা সত্য হলে যেকোনো বাধাকে ডিঙানো যায়। তাছাড়া উচ্চবিত্ত সমাজেও যখন পরকীয়া হতে দেখি, তখন অর্থের সংকটকে মূল কারণ হিসেবে ধরতে পারছি না।


পুরুষরা চোখের পর্দা করে না। তাই স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ কাজ করে কম। তাছাড়া নারীরা দুটো সন্তানের মা হলে কিংবা নারীদের বয়স ত্রিশ পেরুলে এমনিতেই সৌন্দর্য কমতে থাকে। এমতাবস্থায় বাইরে চাকচিক্যময় রূপে আসক্ত স্বামী ঘরের সাদামাটা অবস্থায় থাকা স্ত্রীকে উপেক্ষা করে চলে। আলাদা বিছানায় ঘুমায়। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবজ্ঞার কারণে এ ধরণের দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীরা পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে যায়। শরীর বুড়ো হয়েছে। মন তো বুড়ো হয়নি। যেই স্বামী বিয়ের শুরুর বছরগুলোতে এত বেশি খেয়াল রাখত, রোমান্স করত, রূপের প্রশংসা করত, সে কেমন হুট করে বদলে গেল! বিয়ের সময় ছেলের চরিত্র না খুঁজে সম্পদ খুঁজলে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।


স্বামী যৌন সম্পর্কে অক্ষম হলে স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এমতাবস্থায় ওই নারীর উচিত স্বামীকে তালাক দেওয়া। ইসলাম এই ক্ষেত্রে নারীকে তালাকের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে তালাক হওয়া একটা অভিশাপ। সহজে নতুন করে ঘর বাঁধা যায় না। সমাজ তাকে গ্রহণ করে না।


বিশেষ করে প্রবাসী স্বামীদের স্ত্রীরা সবচেয়ে বেশি পরকীয়ায় আসক্ত।


কোনো পুরুষের দুটো বা তিনটি বিয়ে করার ক্ষমতা থাকলেও এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। 'লোকে কি বলবে', 'আত্মীয়রা শুনলে কি বলবে' ইত্যাদি আতঙ্কে থাকে। এত বড়ো বড়ো ছেলে-মেয়ের সামনে বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে, এটা ভাবতেই এই সমাজ অজ্ঞান হয়ে যায়। সেই বাবা উপায়ন্তর না দেখে পরকীয়ায় জড়ালে এই সমাজই তখন কানাঘুষা শুরু করে।


স্ত্রীদের একটা সমস্যা আছে। তারা ঘরের বাইরে বের হলে আচ্ছা মতো সেজেগুজে বের হয়। আর ঘরের মধ্যে পেত্নী হয়ে বসে থাকে। খাবার-দাবার নিয়ন্ত্রণ করে ফিটনেস ঠিক রাখে না। পুরুষরাও বিয়ের পর ভূড়ি বানিয়ে বসে থাকে। দাঁতও মাজে না ঠিক মতো। অর্থাৎ কেউ কাউকে আকৃষ্ট করার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায় না। ফলে দেখা যায় ছোটো-ছোটো এ সব বিষয়কে কেন্দ্র করে দূরত্ব বাড়ে।


কাকে দোষ দেওয়া উচিত? পরকীয়ায় জড়িত এই অপরাধীদেরকে? নাকি অভিভাবকদের; যারা সঠিকভাবে জীবনসঙ্গী খুঁজে দেয়নি? নাকি এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থাকে?


২. ঘরে ঘরে যাদু-টোনাঃ

নিকট আত্মীয় নিকট আত্মীয়কে। স্ত্রী স্বামীকে। মা ছেলেকে বা মেয়েকে। বোন বোনকে। বোন ভাইকে। বউ শাশুড়িকে। শাশুড়ি বউকে। এক জা আরেক জা কে।


- কারো অর্থনৈতিক উন্নতিতে হিংসার বশবর্তী হয়ে।

- কারো বিয়ে বন্ধ করতে।

- স্বামীকে বশ করতে।

- পুত্রকে বউয়ের কাছ থেকে দূরে রাখতে।

- ভাই বা বোনের সম্পদের লোভে তাকে বন্ধা বানিয়ে রাখতে।

- ভাইয়ের সম্পদের লোভে তার বিয়ে বন্ধ করতে।

- মেয়ের সংসার টেকাতে মেয়ের জামাইকে।

- কোনো ছেলের ব্যবসা কিংবা চাকরীর ক্যারীয়ার নষ্ট করতে।

- লেখাপড়া নষ্ট করতে।

- পুত্র বা কন্যা অবৈধ প্রেম করলে সেই সম্পর্ক ভাঙতে।

- পছন্দের ছেলে বা মেয়েকে প্রেমে রাজি করাতে।


আরো কত অদ্ভুত অদ্ভুত কারণে যে এসব নিজ চোখে হতে দেখছি! আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই তালিকায় মহিলাদের সংখ্যা ৯৯%। সম্ভবত এ জন্যই নারীদের অধিকাংশ জাহান্নামি।


কি মুসলমান, কি হিন্দু, কি খ্রিস্টান; সব একই অবস্থা। দেদারসে তারা বিভিন্ন জাদুকরদের দারস্থ হচ্ছে। এ সব জাদুকরদের কিছু হুজুর বেশধারী, কিছু হিন্দু সাধু বেশধারী। পার্থিব চাওয়া-পাওয়া পূরণে তারা এতটাই অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে! কিছু চাওয়া হয়তো পূরণ হলো। কিন্তু তাদের আখিরাতটা বরবাদ হয়ে গেল। 


লিখেছেনঃ কারিম শাওন 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন