দুনিয়াখোর পর্ব ৫

 

যত টাকা তত ভয়। তাই নিরাপত্তার জন্য সুদি ব্যাংকে টাকা রাখতে হবে। সে সুদ না নিক। কিন্তু সুদের চাকা সচল রাখতে তার অবদান কিন্তু আছে। মানে ডাকাতকে সে অস্ত্র সরবরাহ করল। এরপর বলল–আমার অস্ত্রটাই শুধু ফেরত দাও। তোমরা কী ডাকাতি করে এনেছো সেসব আমি ছোঁবো না।


কতটা হাস্যকর! উপরন্তু একটা রাষ্ট্রের সর্বত্র যখন সুদের ছড়াছড়ি, তখন নিশ্চিন্ত মনে সেখানে অঢেল অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়াটা প্রত্যক্ষভাবে সুদের সাথে জড়িত হয়ে যাওয়া। কে বলেছে আপনাকে অর্থ কামিয়ে সেগুলো সুদি ব্যাংকগুলোতে জমা করতে। হালাল উপায়ে সংরক্ষণ করতে না পারলে অর্থ-সম্পদ নদীর জলে ভসিয়ে দিন। তবুও সুদের সাথে সম্পৃক্ত হবেন না। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহকে ভয় করুন। শেষ বিচারের দিনকে স্মরণ করুন। নিজের আখিরাত বরবাদ করবেন না।


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

"হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং বাকী সুদ ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ঈমানদার হও। অতঃপর যদি না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নিকট হতে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে লও।" (সুরা আল বাকারা : আয়াত ২৭৮-২৭৯)


যারা বছরের ৩৬৫ দিন, দিনের ২৪ ঘন্টা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। আপনি সেই তাদের শক্তির জোগান দিয়ে যাচ্ছেন? হায় আফসোস!


যদি তাকদীরের নির্ধারিত ফয়সালা হিসেবে বৈধ উপায়ে সম্পদশালী হয়েই যান, তাহলে সেগুলো–


১. নিজের জিহাদের জন্য ব্যয় করুন।

২. মুজাহিদদের জন্য ব্যয় করুন।


এ দুটো সম্ভব না হলে–

৩. মসজিদ-মাদ্রাসা তৈরি করে দিন।

৪. মুসলিমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে যেন গবেষণা করতে পারে সেজন্য অর্থায়ন করুন।

৫. মাদ্রাসাগুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত একাধিক ফ্যাকাল্টি বা অনুষদ তৈরি করে দিন।

৬. অর্থের অভাবে আটকে থাকা দ্বীনের কাজ এগিয়ে নিতে সহায়তা করুন।

৭. এতিমদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিন।

৮. অভাবগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করুন।

৯. ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করুন।

১০. গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দিন।

১১. অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করান।

১২. সৎ কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করে দিন। কর্জে হাসানা প্রকল্প চালু করুন।

১৩. বিবাহযোগ্য গরীব ছেলে বা মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন।

১৪. সন্তান নিয়ে অভাবের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া বিধবাদের দেখাশোনা করুন।

১৫. মুসলিম বেকার তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন।


কত কাজ জমা পড়ে আছে আপনার চারপাশে!


নিশ্বাসটা বের হয়ে গেলেই আপনার দুনিয়ার কাজ শেষ। চাইলেও তো পরকালে নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকার করতে পারবেন না। পরিণতি খারাপ হোক কিংবা ভালো, পরকালের জীবনটা স্রেফ নিজের জন্য। আর দুনিয়ার জীবনটা মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য। দুনিয়ার কত দায়িত্ব আপনার কাঁধে। হিতকর কত কাজ সম্পন্ন করার জন্য মহান রিজিকদাতা আপনাকে সম্পদশালী বানিয়েছেন। একটা কানাকড়িও তো সাথে নিতে পারবেন না। অথচ আপনি সম্পদের পাহাড় জমা করছেন। তাও আবার জমা করছেন কোথায়? ইহুদিদের হাতে গড়া সুদি ব্যাংকে।


একবার একটা মালবাহী গাড়ির পেছনে দুটো বাক্য লেখা দেখেছিলাম। বেশ মনে ধরেছিল কথাটা। "সম্পদ খাবে লোকে। দেহ খাবে পোকে।" মাঝে মাঝে এই কম জ্ঞানী ও কম শিক্ষিত মানুষগুলো আমরা বেশি জ্ঞানী ও বেশি শিক্ষিত মানুষগুলোর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে–আমাদের বেশি জ্ঞান ও বেশি শিক্ষা থাকা সত্ত্বেও আমরা অতি মূর্খ ও অতি অশিক্ষিত মানুষের মতো আচরণ করি।


যদি ছোটো মন-মানসিকতা তথা কৃপণতার কারণে উক্ত মানবিক কাজগুলো করতে মন সায় না দেয়, তবে অন্তত নতুন নতুন হালাল ব্যবসায়ে সম্পদ বিনিয়োগ করুন। কিংবা জমি কিনে রেখে দিন। নিরাপদে সম্পদ সংরক্ষণ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো জমি কিনে রাখা। তবুও সুদি ব্যাংকে অর্থ জমা করা থেকে বিরত হোন।


যাহোক। আলোচনা ভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে।

পেছনে বলেছিলাম–তারা যখন কয়েক দিনের ফেরেশতায় রূপান্তরিত হয়েছিল, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার শত্রুদের নিজের প্রধান শত্রু বানিয়ে নিয়েছিল। তখন তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল এই শত্রুদের পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এজন্য নিজের জীবনের সব শখ-আহলাদ, ভোগ-বিলাসিতা, প্রেম-ভালোবাসা–এগুলো বিসর্জন দেওয়ার পাশাপাশি নিজের সবচেয়ে প্রিয় যেই জীবন, সেটাকেও উৎসর্গ করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিল। তাদের কেউ কেউ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে। কেউ কেউ প্রতিজ্ঞা সত্যে পরিণত করেছে। আর কেউ কেউ প্রতিজ্ঞা পূরণের আশায় এখনো ধৈর্য্য ধারণ করে আছে।


আচ্ছা এটা কি স্রেফ কোনো আবেগ? আবেগই যদি হয়ে থাকে তবে কি সেটা ভুল, অযৌক্তিক, মূল্যহীন কোনো আবেগ? কস্মিনকালেও না; বরং এটাই সঠিক, যৌক্তিক ও অমূল্যবান আবেগ। এটাই তো দরকার। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সাথে আমাদের সম্পর্কটাই তো আবেগ ও ভালোবাসার। কারো প্রতি আবেগ না থাকলে কি তার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা যায়? যুদ্ধের উদ্দেশ্যের প্রতি যেই যোদ্ধার আবেগ যত অধিক, যুদ্ধের ময়দানে সেই যোদ্ধার তেজ তত বেশি। তাছাড়া কাউকে ভালোবাসলে সেই ভালোবাসার সত্যতা, বিশুদ্ধতা ও গভীরতার প্রমাণ কাজের মাধ্যমে দিতে হয়।


কিভাবে?

আমরা সবাই সবার বন্ধু। এ কথাটা যেমন সত্য। আমরা সবাই সবার শত্রু। এ কথাটাও তেমন সত্য। কারণ, মানুষ স্বার্থপর। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নিজের স্বার্থ ছাড়া এক চুলও নড়ে না। তাই পরস্পরের সাথে পরস্পরের চিরদিনের একটা অদৃশ্য দ্বন্দ্ব বা প্রতিযোগিতা থেকেই যায়। আবার পরস্পরের সাথে পরস্পরের যেই সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক আমরা দেখি, সেটাও স্বার্থের কারণে। এই স্বার্থপর মানুষই যখন নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকার করে বা অন্যের পক্ষ নিয়ে কথা বলে বা অন্যের স্বার্থ রক্ষা করে, তখন সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে খাঁটি ভালোবাসা হিসেবে বিবেচিত হয়। পাশাপাশি মহৎ কাজ তো বটেই।


নিঃস্বার্থ কাজ কি? নিজের কোনো লাভ নেই জেনেও অন্যের উপকার করা। কথাটা অন্যভাবে বললে–কোনো প্রতিদান ছাড়াই বা প্রতিদানের আশা না করে অন্যের জন্য কল্যাণকর কাজ করা। উপরন্তু এ ধরণের কাজ করতে গিয়ে যদি নিজের ওপর কোনো বিপদ আসে তথা নিজের ক্ষতি করে অন্যের উপকার করাটা আবার দ্বিগুণ খাঁটি ভালোবাসা হিসেবে বিবেচিত হবে। পাশাপাশি মহৎ কাজ তো বটেই। 


লিখেছেনঃ কারিম শাওন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন