শাসন শোষণের নীতি নির্ধারণ এবং তার প্রয়োগ

 আমরিকা বাংলাদেশ থেকে যেভাবে শোষণ করে, ঠিক সেভাবে ভারত থেকেও করে, পাকিস্তান থেকেও করে, বরং তার বলয়ে থাকা মুসলিম এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশ সবার সাথেই করে। এই শোষণে তার সাথে রয়েছে তাদের মিত্রদেশগুলো। তবে চীনও এদের থেকে আলাদা হয়ে নিজের জন্য আলাদা শোষণ নীতি প্রয়োগ করছে।


কিছু মুখোরোচক কথা প্রায়ই শুনবেন যেমন দারিদ্রবিমোচন, শিশু শিক্ষা, নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এগুলো নিয়ে জাতিসঙ্ঘের অঙ্গ সংগঠন যেমন ইউনিসেফ, ইউএসএআইডি এগুলো খুব হাউকাউ করে। তো এরা সরকারকে কি বলে যে আপনারা এসব বিষয়ে কাজ করুন। তখন সরকার কি বলে জানেন?


তখন সরকার বলে, আমাদের তো এসবের জন্য কাজ করার পর্যাপ্ত অর্থ এবং জনবল নেই, আমার কি করবো? তারাও জানে যে এদের সেটা নেই। কারণ মন্ত্রনালয় এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আসলে তেমন কোন কাজই হয় না। এরা ঘুমায়, সাইন দেয়, বিভিন্ন এনজিও আর বিদেশী সংস্থার পরামর্শে চলে, তাদের বিভিন্ন প্রোজেক্ট বাজেট দিতে লবী করে, আর মাসে মাসে বেতন নেয়। আর দুর্নীতির কথাই বা বললাম। 


তখন বিদেশী এসব সংস্থা বলে যে, এসব প্রোজেক্টের জন্য তারাই ফান্ড এনে দিবে, তারাই লোকজন যোগাড় করে প্রোজেক্ট করে দিবে। তো তারা আইএমএফ, ওয়ার্ল ব্যাংক থেকে অনেক বড় অংকের টাকা ফান্ড এনে সরকারকে দেয়। সরকার সেই টাকাগুলো প্রোজেক্টের খরচ হিসেবে সেইসব টাকাগুলো এসব বিদেশী সংস্থা এবং এনজিওগুলোকে দেয়। কিন্তু সে এগুলো ঋণ হিসেবে পেয়েছে, এবং ঋণটা আসলে জনগণের নামেই লেখা হচ্ছে।


অর্থাৎ ঋণ নিতেসে বাংলাদেশ, কিন্তু ঋণের টাকা খরচ করছে বিদেশী সংস্থাগুলো এবং তারা এই টাকায় তাদের প্রোজেক্ট, রিসার্চ, ফিল্ড ওয়ার্ক করে নিচ্ছে। এসব কাজে তারা দেশীয় লোকজনদেরই নিয়োগ দিচ্ছে। যেমন খুশি আপা, যে ঘরে ঘরে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলে। সে প্রোজেক্ট করতেসে পশ্চিমাদের কিন্তু আপনার টাকায়। সে দেখতে আপনার মতই, হয়ত আপনার কোন আত্মীয়রই মেয়ে, কিন্তু মননে হোক আর প্রোফেশনাল মূলা দেখিয়ো হোক সে পশ্চিমাদের কুকুর। প্রোফেশনা কারণে যেমন নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ওদের ভাড়া খাটতে যেতে পারে, কিংবা কোকাকোলার এ্যাড করা যেতে পারে, সেইরকম আর কি। 


তো এই টাকা আমাদের কিভাবে হলো? এগুলো তো আমরা ঋণ এনেছি। ঋণ তো আমাদের নামেই লিখা, তাই না? তো প্রতিবছর আসলে এই ঋণের টাকাও সুদের আসলে পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ আমরা একই টাকা নিজেরা একবারও ভোগ না করে, দুইবার পরিশোধ করতেসি, একবার তাদের থেকে বিষ কিনে, আরকেবার সুদসহ।


এখানে আরো একটা টুইস্ট আছে। সেটা হল আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে আমরা যে ডলার ঋণ নিচ্ছি এগুলো তো টেকনিকালি ফিয়াট কারেন্সী, যেটার ব্যাকিং এ কিছু নেই। অর্থাৎ আমরিকার জাস্ট ইচ্ছা ডলার ছাপিয়ে ঋণ দিয়ে দিলো। এক্সট্রা কোন কষ্ট করতে হয় নি। জাস্ট একটা সফটওয়ার কপি করার মত। তাহলে ব্যাপারটা কি যে, আমার যেই ঋণ নিলাম, খরচ করলাম, সুদ দিলাম, এগুলোও কি ফিয়াট? 


না! ঋণ দিয়ে তারা আমাদের ইহসান তো করছেই না, বরং তাদের জন্য ঋণ দেয়াটাই জরুরী। ঋণ দিয়ে এই ফিয়াট কারেন্সী সারা বিশ্বে ছড়াতে পারলেই এর সাথে ভ্যালু এ্যাড হবে। কারণ এত এত ডলার ছাপিয়ে যদি আমরিকা নিজের দেশে রেখে দেয়, তাহলে তাদের ইনফ্লেশন হবে, আমরিকাতে ডলারের মান পড়ে যাবে। তারা করে কি এইরকম মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে ইস্যু করে বিভিন্ন দেশকে দিয়ে দেয়।


এই যে আমার আপনার মাথার ঘাম পায়ে ফেলা কষ্টগুলোর কারণে যে নতুন ভ্যাট তৈরী হয়, সেটার একটা বড় অংশ এই ঋণের ডলারগুলোতে ভ্যালু এ্যাড করে? কিভাবে? কারণ আপনারা থেকে ভ্যাট ট্যাক্স হিসেবে অনেক টাকা কেটে রাখা হয়। সেই টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়। টেকনিকালি ডলার টাকাকে না, টাকা ডলারকে ব্যাক করছে। অন্যান্য দেশে স্থানীয় মুদ্রাগুলো ডলারকে ব্যাক করছে, মানে ডলারকে একাট মূল্য মান দিচ্ছে। আর এদিকে স্থানীয় মুদ্রা যেমন টাকাকে আমরা আমাদের উৎপাদন, শ্রমের মাধ্যমে মূল্যমান দিচ্ছি।   


এই যে একটা সিস্টেম তারা দাড় করালো যেখানে তাদের ছাপানো কাগজ, আমাদের ঘামে রক্তে ভিজে কাগজ থেকে আসল মুদ্রায় পরিণত হচ্ছে, আবার সেটা খরচ হচ্ছে, তাদের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে, এবং আমাদেরকে বিভিন্ন বিষ আর ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, আবার সেই খরচ আবার আমাদেরকেই সুদে আসলে প্রতিবছর তাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে, এবার বুঝুন সারাবিশ্বের তারা আসলে এতগুলো দেশ থেকে কি পরিমাণ শোষণ করছে? এটাই হচ্ছে নব্য উপনিবেশবাদ। 


তাদের এই সিস্টেমেটিক শোষণের ক্ষেত্রে ভারতের শোষণ কিছুই না। কিছুই না বলতে, আসলে এমনিতে ভারতের শোষণও অনেক, কিন্তু সেটা সিস্টেমেটিক না, বরং সেটা অনেকটা আমরিকারই অধীনে যেসব সংস্থা, কোম্পানী কাজ করে তাদের মত। বরং তারা এই পুরো প্রোজেক্টরই একটা ছোট অংশ। যদিও নিজ দেশে তারা নিজেরাও এসবের শিকার। 


তো যেই সরকারই আসুক, তাদের আসলে এই সিস্টেম টিকিয়ে রাখার পক্ষে থাকতে হয়, বরং বেশী বেশী সুবিধা দিতে হয় যে, আরো বেশী তাদের এজেন্ডা পুশ করতে দিতে হবে, এজন্য তাদের থেকেই ঋণ নিতে হবে, আবার ঋণের টাকা তাদের সংস্থাদেরই দিয়ে দিতে হবে। বিএনপি আসলে এগুলো শিকার করেই আসবে। এটা কিন্তু বুঝাই যায় যে, বিএনপির লোকেরা আমরিকান বিভিন্ন এজেন্ডার সাথে পলিটিকাল কারেক্টনেস দেখায়। শুধু রাজনৈতিক দল না, ধরুন আপনি একটা প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেন, আপনাকে টিকে থাকতে হলে এই সিন্ডিকেটের সাথে রয়ে সয়ে চলতে হবে, তাদের পক্ষে কাজ করতে হবে, নতুবা আপনাকে মার্কেট থেকে আউট করে দিবে।

____২

চীন-রাশিয়া যে বিশ্বব্যবস্থা চায়, সেখানে তারা জাস্ট আমরিকার জায়গায় বসতে চায় - তারাও চায় তারাও শোষিত না হোক, বরং নিজেই শোষক হোক। কিন্তু আমাদের মুসলিম সালাতানাতগুলোর দিকে যদি আমরা তাকাই, সেগুলোতে এত এত জালিম বাদশাহ থাকার পরও, তারা কখনও একরম সিস্টেমেটিক জুলুম আর শোষণ চালু করে নি। বরং তারা স্থানীয়দের সাথে মিশে গেছে যেখানেই গেছে। অনেক হতাশাবাদীরা হয়ত আপনাকে বলবে যে এরা আসলে স্বার্ণালী যুগের যেই রোমন্থন করে, সেটা আসলে মিথ, কখনোই পার্ফেক্ট সালাতানাত ছিল না, খিলাফত তো দূর কি বাত। এরপর তারা পশ্চিমা সিস্টেমের সাফাই গাওয়া শুরু করবে, কারণ তারা নিজেরাও আসলে এর বেনিফিশিয়ারী। 


ইয়াসির কাদী কখনোই জীবনে স্ট্র্যাগল ফেস করে নাই, না নুমান আলী খান। তাদের কাছে সিস্টেমের অংশ হয়ে ভাল কাপড়, ভালো মিডিয়া, ভালো অফিস, বাসস্থান, শহরে থাকাটাই সাফল্য। এ্যাট হোয়াট কস্ট? ব্যাকইন্ডে যে তাদের সরকার শোষণ করছে সারা বিশ্বকে সেটা তারা জানলেও বলতে পারবে না? আমি আপনি পারতাম যদি আমরাও বেনিফিশিয়ারী হতাম? আপনি তাদের জাকজমক দেখে ধোঁকা খাইয়েন না। 


আমরা যখন কোডিং করি, বিভিন্ন ফ্রেমওয়ার্কে কাজ করি, তখন কাজের শুরুতে আমরা মাথায় রাখি যে একেবারে পার্ফেক্ট একটা প্রোজেক্ট করবো। কিন্তু যতটা ভাবি ততটা পার্ফেক্ট হয় না। অনেক প্রসেস ডিবাগিং, কোয়ালিটি টেস্টে, ডেভলপমেন্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। কিন্তু শুরুতে যে পার্ফেকশনের কথা ভাবছিলাম, তাহলে কি সেটা ভুল ছিল? মোটেই না। বরং সেই বেঞ্চমার্কটা ধরেই তো আমরা কাজ আগাচ্ছিলাম। বেঞ্চমার্কের ব্যাপারে সন্দেহ তৈরী করে দিতে পারলে, আপনাকে পুরা ইকামাতে দ্বীনের ব্যাপারেই সন্দেহ ফেলা যাবে। আপনি ভাববে, কি আর হবে, এসব আসলে সম্ভব না, এসব তো ফ্যান্টাসি, দেখসি বাকিরা কত হাতি-ঘোড়া মারসে। 


ভাই হয়ত নয়এগারো ইতিহাসে কেবল একবারই হবে, কিন্তু এর ইফেক্ট একে ঘিরে তৈরী হওয়া ইকোসিস্টেম - আরো সহজ করে বললে, হাতি-ঘোড়া মারা তো মূল না, মূল হল আপনার অল্পএকটু কন্ট্রিবিউশন। হয়ত আল্লাহর পছন্দ হয়ে যেতে পারে। হয়ত আল্লাহ তা'আলা এর জন্যই ক্ষমা করে দিবে। আমরা জানি না আল্লাহ তা'আলা খাবারের কোন অংশে বরকত রেখেছেন। তাই খবার পড়লেও যেমন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম পরিষ্কার করে সেটা খেয়ে নিতেন। আমলের ক্ষেত্রে কাজের ক্ষেত্রে কোনটা আল্লাহকে খুশি করবে আমার তো জানি না, তাই এভরি পসিবল ওয়ে তো আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত খুঁজতেই হবে। হয়ত অন্তত একটা জন্য আমরা মাফ পেয়ে যাবো।


লিখেছেনঃ Bearded Bengali 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন