নব্য মালালা ফাতিহা আয়াত | পর্ব ১-৫




পর্বঃ ১

'স্বর্ণ কিশোরী' এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা ব্রাউনিয়া। আপাদমস্তক পশ্চিমা ফান্ডিংয়ে ও পশ্চিমা আদলে গড়া একটা নারীবাদী সংগঠন।

এই এনজিওর মূল লক্ষ্য, পুষ্টির কথার আড়ালে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে বন্ধ করা। সংসার জীবন নিয়ে ভিত্তিহীন, বানোয়াট, অযৌক্তিক কথা বলে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মেয়েদেরকে বিয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা।

বিভিন্ন জেলায় এদের টিম আছে। ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ের বিয়ে হলে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক সেই বিয়ে বন্ধ করে দেয়। অনেকগুলো উদাহরণ আছে এসবের।

অথচ মেডিকেল সায়েন্স বলছে ভিন্ন কথা। ৭-৯ বছরের মধ্যে মেয়েরা সাবালিকা হয়। ওরা অজুহাত দেয় বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে না। বিয়ে কি কেবল বাচ্চা জন্মা দেওয়ার জন্য? বাচ্চা তো পরেও নেওয়া যায়। বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য বৈধভাবে যৌ ন সম্পর্ক করা; যেন ছেলে-মেয়েরা জিনা-ব্যাভীচারে না জড়ায়।

আচ্ছা বয়সটা ওরা ১৮ বছরই কেন নির্ধারণ করল? এর কম বা বেশি না কেন? কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা জরীপের ভিত্তিতে ওরা বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করল? এর কোনো সদুত্তর নেই। অথচ যেই পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশনে এই ফা.ব্রা. নিজের জাতির মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে জাতির সাথে বেঈমানি করছে, সেই পশ্চিমাদের দেশেও ১৬/১৫/১৪/১৩/১২ এমনকি ১১ বছরেও বিয়ে করার অনুমতি আছে। বিয়ে হয়েছে।

এই ফা.ব্রা. বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেখানে নানান বিভ্রান্তিমূলক বক্তৃতা দিয়ে একটা রক্ষনশীল সমাজকে নষ্ট করার পায়তারা করছে। পরোক্ষভাবে ঘুরিয়ে ইসলামবিদ্বেষী কথা বলে ও কাজ করে। পশ্চিমাদের চিন্তা-চেতনা, আদর্শ ও জীবনাচারের আদলে মুসলমানদের গড়ে তুলতে চাচ্ছে। তাই প্রথম টার্গেট করেছে মেয়েদের। কারণ, মেয়ে মানে আগামীর মা। মা নষ্ট হলে জাতি নষ্ট হবে।

ফা. ব্রা. এর কিছু বক্তব্য:

১) ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করার কুপরামর্শ:
https://www.facebook.com/share/r/19aY2PWbBt/

২) বাঙালী সংস্কৃতি বিরোধী বক্তব্য:
https://www.facebook.com/share/r/19NV6wvTgs/

৩) বিয়ে করতে অনুৎসাহিত করার অপচেষ্টা:
https://www.facebook.com/share/r/1EKz882owh/

পশ্চিমারা এই পথে হেঁটে আজকে কি পেয়েছে?
– ১৮ বছরের আগে পশ্চিমা ছেলে-মেয়েরা অবৈধভাবে যৌ ন সম্পর্কে জড়াচ্ছে।
– অবাধ যৌ না চা রের ফলে জরায়ুর ক্যান্সার, এইচআইভি থেকে শুরু করে নানান রকমের সেক্সু্য়্যাল ট্রান্সমিটেড ডিজিস হচ্ছে।
– গড়ে পশ্চিমাদের ৫০% জনগণ জা র জ সন্তান হিসেবে জন্ম নিচ্ছে।
– প্রতি মিনিটে পশ্চিমা নারীরা ধ র্ষি ত হচ্ছে।
– পশ্চিমা নারী-পুরুষরা তাদের জীবদ্দশায় গড়ে ১৫-৩০ জনের সাথে যৌ ন সম্পর্ক করছে।
– পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অনাস্থার কারণে পশ্চিমাদের পরিবার বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। কারণ, ওরা এখন বিয়েই করে না।

ফা. ব্রা. এর জামাই হচ্ছে লে. জে. হাসান সারওয়ার্দী। আর্মি থেকে কিক খেয়েছে এই লোক। আমেরিকান দালালী করার কারণে সেনাপ্রধান হতে পারেনি। একসময় লীগের সক্রিয় দালাল ছিল। শেষমেশ লীগও কিক দিয়েছে। এই লোকের দ্বিতীয় বউ ফা. ব্রা.। সামরিক পেশার অভিজ্ঞতা ও পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে এই এনজিওকে পেছন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই হাসান সারওয়ার্দী। কমিটিগুলো গঠন ও পরিচালনা করা হয় সামরিক বাহিনীর আদলে।

কমিটির গঠন প্রক্রিয়া:
https://www.facebook.com/share/v/1DYngKxxHm/

নব্য মালাল ফাতিহা আয়াত একটা হিজাবি ফেমিনিস্ট। এই নেক সুরাতের মহিলা শয়তানটা 'স্বর্ণ কিশোরী' এনজিওতে যোগদান করেছে। এই এনজিওকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। ভবিষ্যতে এটাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে দাঁড় করানো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

ফাতিহা আয়াতের বক্তব্য:
https://www.facebook.com/share/r/1AbfSBmK7u/

বাংলাদেশে যত পশ্চিমা নারীবাদী এনজিও আছে এগুলোর মধ্যে 'স্বর্ণ কিশোরী' এনজিও বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি সুসংগঠিত ও সক্রিয়। সদস্য সংখ্যা পাঁচ হাজার। সারা দেশে এদের কর্মীদের কমিটি আছে। শাহবাগীদের অধিকাংশই মুখে সরব থাকে। কিন্তু 'স্বর্ণ কিশোরী' এনজিও নিরবিচ্ছিন্নভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।

'স্বর্ণ কিশোরী' এনজিওর আন্তর্জাতিক এম্বাসেডর হিসেবে যোগদান:
https://www.facebook.com/share/r/19DiFVctmF
 
 পর্বঃ ২

 মালালা ইউসুফজাই। জন্ম ১৯৯৭ সাল। পাকিস্তানের সোয়াত ভ্যালিতে। পিতা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই পাকিস্তানের বামপন্থী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। মালালার ইসলামবিরোধী অবস্থানের পেছনে তার পিতার প্রত্যক্ষ প্ররোচনা ছিল। ২০০৯ সালে মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই বিবিসি উর্দু ব্লগে ইসলামবিরোধী লেখালেখি শুরু করে মালালা।  ২০০৯-২০১১; পরবর্তী তিন বছরে পশ্চিমা নারীবাদী সংস্থা Aware Girl, Institute for War and Peace Reporting, Khpal Kor Foundation -এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মগজধোলাই হয় মালালার। পাশাপাশি International Marxist Tendency বামপন্থী দল সহ বিভিন্ন সেক্যুলার সভা-সেমিনারে গিয়ে ইসলামী বিধি-বিধানের বিরুদ্ধে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়া শুরু করে। ওই একই সময়ে পাকিস্তান ও পশ্চিমা কয়েকটা গণমাধ্যমেও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় মালালার। আমেরিকার মদদপুষ্ট তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ২০১১ মালালাকে National Youth Peace Prize প্রদান করে।  নারীবাদী সংস্থাগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী শিক্ষার নামে যৌন শিক্ষা দেয়। উঠতি বয়সি মেয়েদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়। মেয়েদের স্বভাবগত লজ্জাশীলতা ও শালীনতার সীমারেখাকে মুছে দিয়ে বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতার দিকে মেয়েদের ঠেলে দেয়। ইসলামী জীবনাচার ও মুসলিম পারিবারিক অনুশাসন থেকে একটা মেয়েকে বের করে এনে উচ্ছৃঙ্খল বানিয়ে ফেলে। নারী শিক্ষার নামে পশ্চিমা অপসংস্কৃতিকে রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।  মালালা নিজেও এ রকমই চিন্তাচেতনা লালনকারী। তাই নারীবাদী ওই সংস্থাগুলোর ফুটসোলজার হয়ে কাজ করা শুরু করে সে তখন। বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সংবাদ সম্মেলন, লেখা ও সাক্ষাৎকারে পশ্চিমা নারীবাদীদের ভাবাদর্শ প্রচার করতে থাকে। এতে করে পাকিস্তানের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মালালার তীব্র সমালোচনা করেন। পাকিস্তানি হক্কানি আলেমগণ মালালার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে বাধ্য হন। নারী শিক্ষার নামে পশ্চিমা এনজিও চালিত স্কুলগুলোকে বন্ধ করার দাবি জানান তারা।  কথিত আছে, ২০১২ সালে বাসে চড়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় পাকিস্তানী তালিবানের একজন সদস্য মালালার মাথায় গুলি করেন। কোনো ক্রমে মালালা বেঁচে যায়। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির একটা সামরিক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ৪ দিন পর যুক্তরাজ্যের কুইন একিজাবেথ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য মালালাকে পাঠানো হয়। মালালা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।  এরপর আর যায় কোথায়! পশ্চিমা মিডিয়া থেকে শুরু করে নারীবাদী সংগঠন ও পশ্চিমা দেশগুলো একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসলামের কুৎসা রটানোর জন্য। আমেরিকান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলে, "reprehensible, disgusting and tragic". সেক্রেটারী স্টেট হিলারী ক্লিনটন বলে, "very brave in standing up for the rights of girls". জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন বলে, "heinous and cowardly act". ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব উইলিয়াম হগ বলে, "barbaric. গায়িকা ম্যাডোনা নিজের গলায় মালালার নামে ট্যাটু এঁকে নিজেরই একটা গান মালাকে উৎসর্গ করে। হলিউডের অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি মালালার জন্য ২ লাখ মার্কিন ডলার দান করে এবং মালালার জন্য আর্টিকেল লিখে। জর্জ বুশের স্ত্রী লরা বুশ পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় লিখে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মালালাকে হাসপাতালে দেখতে ছুটে যায় এবং "I am Malala" স্লোগান প্রবর্তন করে।  বোঝাই যাচ্ছে ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। কারণ, উক্ত 'সাদা চামড়ার কিন্তু কালো মনের' মানুষগুলোই ফিলিস্তিনের ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যুতে নিশ্চুপ। কেবল নিশ্চুপই না; রীতিমতো উল্লাস করছে। এই পর্যন্ত হলেও একটা কথা ছিল; বরং ইসরায়েলকে সামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে সরাসরিভাবে এই গণহত্যার সাথে জড়িত আমেরিকা ও ন্যাটো। ফিলিস্তিনের ১৫ হাজার শিশু নিহত হয়েছে। কত হাজার নারী নিহত হয়েছে। কত স্কুল ও হাসপাতাল বোম্বিং করে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনি এই মেয়েরা গুরুত্বহীন; কেবল মালালা বাদে। ফিলিস্তিনি মেয়েদের পড়াশোনার দরকার নেই। পড়াশোনা করবে শুধু মালালা। আমি আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, ইয়েমেনের মুসলিম মেয়েদের জীবন ও পড়াশোনার কথা আজকে না হয় বাদই দিলাম।  মজার বিষয় হলো, মালালাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে 'পশ্চিমা দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য সাজানো নাটক' বলেছে স্বয়ং পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ সহ নেটিজেন পাকিস্তানিরা। কেউ কেউ মালালাকে সিআইএ এজেন্ট বলেছে। কেউ কেউ বলেছে পশ্চিমাদের পতিতা।  যাহোক। পশ্চিমা পলিটিশিয়ানদের পরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ধারাবাহিকভাবে এই সংবাদ প্রচার করে মালালাকে সারা বিশ্বের সহানুভূতি এনে দেয়। আন্তর্জাতিকভাবে মালালার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। জাতিসংঘে ডেকে মালালাকে বক্তব্য দেওয়ানো হয়। এরপর একে একে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড ইউনিয়ন, লন্ডনের গার্লস সামিটে বক্তব্য দেওয়ানো হয়। বারাক ওবামা সহ ওবামা পরিবারের সাথে ওভাল অফিসে সাক্ষাৎ করে মালালা। জাতিসংঘ আবেগোচ্ছল হয়ে 'Malala Day' উৎযাপন করে। লেট নাইট শো তে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রন করা হয় মালালাকে। ২০১৩ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মালালাকে Sakharov Prize for Freedom of Thought প্রদান করে। বলে রাখা ভালো, এই Sakharov Prize কুখ্যাত মহিলা তাসলিমা নাসরিকনেও দেওয়া হয়েছিল। ২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত মালালাকে নামে-বেনামে ৪০টি পুরষ্কার দেয় পশ্চিমারা। এত ব্যস্ততার মধ্যেও মালালা 'I Am Malala' নামে বই লিখতে ভোলেনি। যাদুর মতো এ সবই ঘটছিল ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মালালাকে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়।  ধরা-ছোয়ার বাইরে চলে যায় মালালা। সাধারণ মেয়েদের কাছে মালালা আইকন। মালালা যা বলে, মেয়েরা সেটাকে ঐশীবাণীর মতো পালন করে। কারণ, মালালা নোবেলজয়ী। শিক্ষার নামে নানান ইসলামবিরোধী বক্তব্য ও কাজকর্ম চলতে থাকে। বরশির টোপ হিসেবে মাথায় অর্ধেকটা ঘোমটা সে রেখে দিয়েছিল তখনও; যেন এর দ্বারা মুসলিম মেয়েদের ধোঁকা দিয়ে পথভ্রষ্ট করা যায়। যেকোনো বক্তব্যের শুরুতে ও শেষে সালাম থাকে। আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ ইত্যাদি ইসলামী শব্দগুলো ব্যবহার করত ও করে; যেন মালালাকে কেউ ইসলামবিরোধী এক্টিভিস্ট হিসেবে তকমা না দেয়। কাফেরদের দিয়ে মুসলমান মেয়েদের যতটা না ধোঁকা দেওয়া যাবে। এ রকম ছদ্মবেশী নেক সুরাতে মহিলা শয়তান দিয়ে মুসলিম মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ধোঁকার শিকার হবে। কারণ, এখানে মালালা নিজেদের লোক বা বন্ধুর বেশে এসে হাজির হয়েছে।  মালালা নোবেল পাওয়ার পর ২০১৪ সালে 'Pakistani Marxist' নামে সমাজতান্ত্রিক একটা সভায় গিয়ে বক্তব্যে বলেছিল, "আমি নিশ্চিত যে সমাজতন্ত্রই একমাত্র সমাধান এবং আমি সকল কমরেডদের এই সংগ্রামকে একটি বিজয়ী উপসংহারের দিকে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই। কেবল এটিই আমাদের ধর্মান্ধতা ও শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবে।"  ২০১৫ সালে All Pakistan Private Schools Federation (APPSF) 'I Am Malala' বইটি সকল স্কুলে নিষিদ্ধ করে দেয়। এই ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মির্জা কাশিফ আলি 'I Am Not Malala' নামে নিজেই একটি বই প্রকাশ করে সেখানে মালালাকে, "ডাবল এজেন্ট", " বিশ্বাসঘাতক" বলে অভিহিত করেন। এবং 'Malala Fund' কর্তৃক পাকিস্তানে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করার প্রচেষ্টার নিন্দা জানান।  British Vogue -এ দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে মালালা বলে, "আমি এখনও বুঝতে পারি না মানুষকে কেন বিয়ে করতে হবে। আপনি যদি আপনার জীবনে একজন ব্যক্তিকে পেতে চান তবে কেন আপনাকে বিয়ের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে, কেন এটি কেবল একটি সংসর্গ হতে পারে না?" লিভটুগেরদারকে প্রমোট করে এই বক্তব্যের পর পাকিস্তানি নেটিজেনরা মালালাকে সোশ্যাল প্লাটফর্মগুলোতে রীতিমতো ধুয়ে দেয়। কারণ, পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে নূন্যতম ইসলামী মূল্যবোধটুকু অবশিষ্ট আছে।

পর্বঃ ৩

মাত্র ১১ বছর বয়সী একটা মেয়ে ব্লগিং, আইডিয়োলজিকাল এক্টিভিজম, বই লেখা, সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেওয়া বুঝে ফেলল? ভিষণ অবাক লাগে!

আসলে মালালাকে পশ্চিমারা নিজ হাতে তৈরি করেছে। সব বক্তব্যই ছিল স্ক্রিপটেড। সব ঘটনাই ছিল প্রিপ্ল্যান্ড।

পশ্চিমারা এই কাজটা কেন করেছিল? মালালাই কি পশ্চিমাদের হাতে গড়া প্রথম ও একমাত্র পুতুল? উত্তরগুলো জানার আগে মানুষের সাইকোলজিকাল ও বিশ্বের পলিটিকাল বিষয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন।

(ক) অনুসরণ ও অনুকরণের মানসিকতা:

আমার জীবনে কখনো এমনটা ঘটেনি যে, কোনো সেলিব্রিটির বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে কোনো পন্য কিনেছি। যখন কিশোর বয়সের ছিলাম, তখন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কোনো নায়ক-নায়িকা কিংবা গায়ক-গায়িকা কিংবা খেলোয়াড় কিংবা সুপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে দেখে মনে নানান প্রশ্ন জাগত। 'শুধুমাত্র এই মানুষগুলোকে দিয়েই কেন ৯৯% বিজ্ঞাপন করানো হয়' আমি এর কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পেতাম না।

কিন্তু কথায় আছে, চিন্তায় মুক্তি। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি তরুণ বয়সে এসে। ভেবে দেখলাম, সাধারণ মানুষ এই সেলিব্রিটিদের দ্বারা ভিষণ রকমের প্রভাবিত। তারা যা করবে, পরবে ও ব্যবহার করবে; অনুসারীরাও তা করবে, পরবে ও ব্যবহার করবে। অর্থাৎ রঙ মাখানো কৃত্রিম সৌন্দর্য, জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনী, আতিশয্যতা আর মুখরোচক কথায় বিমোহিত হয়ে অনুসারীরা নিজেদেরকে সেলিব্রিটির মতো করে তুলতে চায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কল্পনার জগতে ভেসে বেড়ায়। বাস্তবতার সাথে কতটুকু মিললো, সেসব না ভেবেই তারা অনুকরণ করাকেই আধুনিকতা মনে করে।

যাহোক। পরে দেখলাম এদেরকে দিয়ে শুধু পণ্যের বিজ্ঞাপনই করানো হয় না; বরং মানুষের মতাদর্শকেও সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করা হয়। রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত দেওয়ানো হয়। মাঝে মাঝে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এমন এমন কিছু বিষয় সামনে চলে আসে, যখন সাধারণ মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না–কোন পক্ষ নেওয়া উচিত। ঠিক তখনই এই তথাকথিত সেলিব্রিটিদেরকে মাঠে নামানো হয়। তারা অন্যান্য গতানুগতিক বিষয়ের মতো উক্ত আলোচিত বা সমালোচিত বিষয়টিতেও নিজের একটা মতামত প্রকাশ করে। সাধারণ মানুষের বিচারবোধ কম। তারা মনে করে সেলিব্রিটিরা নিরপেক্ষ। ফলে সেলিব্রিটিদের সিদ্ধান্তকে তারা ওই পণ্যের বিজ্ঞাপনের মতোই গ্রহণ করে নেয়। অথচ বাস্তবতা হলো, টাকার বিনিময়ে সেই সেলিব্রিটি পণ্যের বিজ্ঞাপন করেছিল। টাকার বিনিময়েই সেই সেলিব্রিটি উক্ত মতামতটা দিয়েছে।

(খ) নকল হাঁস দিয়ে আসল হাঁস শিকার:

হাঁস শিকারীরা নকল কিছু হাঁস খোলা মাঠ, ফসলের মাঠ, জলাশয়ের আশপাশ ও জলাশয়ে রেখে দেয়। হাঁসের ডাক নকল করা একপ্রকার বাঁশিও বাজানো হয়। আকাশে উড়ন্ত সত্যিকারের হাঁসগুলো মনে করে নিচের হাঁসগুলো খাবার পেয়েছে এবং এই জায়গা বিচরণের জন্য নিরাপদ। এটা দেখে ধোঁকা খেয়ে এরা নিচে নেমে আসে। এরপর শিকারীর শিকারে পরিণত হয়ে প্রাণ হারায়। কিছু হাঁস বন্দুকের গুলির শব্দে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সফল হয়। কিছু হাঁস পুনরায় উড়তে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে দূরের কোনো ঝোপে গিয়ে পড়ে। শিকারীর পোষা কুকুর মৃতপ্রায় হাঁসগুলোকে ঝোপঝাড়ের ভেতর থেকে খুঁজে খুঁজে বের করে ধারালো দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে এনে শিকারী প্রভুর হাতে তুলে দেয়।

এই জগতে ভীতু ও দূর্বল শ্রেণির প্রাণীদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে শিকার করা হয়। মানুষের ক্ষেত্রেও এর ব্যতীক্রম হয় না। ভীতু, দূর্বল, অদূরদর্শী ও বিচারবোধহীন মানুষদের টোপ দিয়ে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসে শাসকশ্রেণি। তাদের কাছে তাদেরই মতো রূপ ধারণ করিয়ে বন্ধুর বেশে পাঠানো হয় কিছু মানুষকে। ঠিক সেই নকল হাঁসের মতো। তারা বিশ্বাস করে সেই নকল বন্ধুদের অনুগামী হয়। এরপর ফাঁদে পড়ে।

(গ) ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করা:

সাধারণ মানুষের মানসিক ও মৌখিক সমর্থন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, কল্যাণ কামনা, আর্থিক সহায়তার দ্বারা একটা দল বা সম্প্রদায় টিকে থাকে এবং এর বিকাশ ঘটে। সমাজ ও রাষ্ট্রে সেই দলের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা পায়। কারণ, সাধারণ মানুষ সেটা চায়।

প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো দল বা সম্প্রদায়কে নিজ জাতির কাছে ভিলেন বানাতে পারলে জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। কোনো ভূখণ্ড বা রাষ্ট্রে একটা দল বা সম্প্রদায়ের অনুকূল পরিবেশ না থাকলে সেই দলটি টিকে থাকতে পারে না; নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করবে তো দূরের ব্যাপার। অর্থাৎ দল বা সম্প্রদায়কে গণশত্রু বা জাতির শত্রু বা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে উপস্থাপন করলে সাধারণ মানুষই উক্ত দল বা সম্প্রদায়কে যার যার নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিহত করবে।

এই কাজটা করতে গিয়ে কুচক্রী রাষ্ট্রটি নিজেদের মতাদর্শকে আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করে। এই মানদণ্ড মেনে জীবনযাপনকে একমাত্র সঠিক ও সর্বোচ্চ কল্যাণকর হিসেবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটাকে ক্ষতিকর, পশ্চাৎপদ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হরন হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করে।

এখানেই মালালাদের আসল খেলা। পশ্চিমারা সেলিব্রিটিদের মুখ দিয়ে নিজেদের কথাগুলো বলিয়ে নেয়। সেলিব্রিটিরা অর্থ ও রাতারাতি খ্যাতির লোভে পশ্চিমাদের জীবনযাপনকে নিজের জীবনযাপন বলে নিজ জাতির কাছে প্রচার করতে থাকে। এই ক্ষেত্রে এসে নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, জাতিত্ব, মূল্যবোধ, আঞ্চলিক প্রথা, সামাজিক রীতিনীতি, পারিবারিক অনুশাসনকে সেলিব্রিটিরা বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেয়।

 

 পর্ব ৪

(ঘ) পলিটিকাল টুলঃ
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনীতি করতে হলে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কিংবা কোণঠাসা করে রাখা হয়। এই কৌশলগুলো তিনটি মূল ভিত্তির ওপর নির্মাণ করা হয়: অর্থ, শক্তি, বুদ্ধি। প্রসঙ্গত কেবল আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়টা তুলে ধরছি। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতির কৌশলগুলো বোঝাও সহজ হয়ে যাবে।

১. অর্থ: একটা দেশের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা, সেই দেশ থেকে পণ্য আমাদানি বা সেখান থেকে পন্য রফতানি নিষিদ্ধ করা, সেই দেশের সাথে মুদ্রা লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, সেই দেশের সাথে বানিজ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কাজগুলো হরহামেশাই চোখে পড়ে আমাদের।

অর্থনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে অনেকটাই সফল হওয়া যায়; যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপিত দেশটি তুলনামূলক দূর্বল হয়। অর্থনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে পারলে অনেক দেশকেই নিজেদের আনুগত্য করানো যায়। এর অনেক নজির বর্তমান বিশ্বে দেখছি। এই কৌশল সবসময় যে কাজে দেয় তা না। নিষেধাজ্ঞায় পড়া কিছু দেশ অর্থনৈতিক মন্দায় পড়া সত্ত্বেও নিজেদের লক্ষ্যে অটুট থাকে। যেমন: আমেরিকা কর্তৃক উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, ইরান, সিরিয়া, কিউবা ও ভেনেজুয়েলার ওপর স্যাংশন।

২. শক্তি: এটা ব্যাখ্যা করে বলার কিছু নেই। শক্তি প্রয়োগ সর্বশেষ ধাপ। অর্থনৈতিক চাপে কাজ না হলে শেষমেশ সামরিকভাবে আক্রমণ করা হয়। এখান থেকে জয়-পরাজয়ের একটা চূড়ান্ত সমাধান চলে আসে।

আগ্রাসী দেশগুলো অনেক সময় সফল হয়। যেমন: ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকার কিছু দেশে আমেরিকা ও ন্যাটো কর্তৃক আক্রমণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ও ওসমানীয় খিলাফতের ওপর আক্রমণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান, জাপান, ইতালির ওপর আক্রমণ।

সামরিক আক্রমণ অনেক সময় ব্যর্থ হয়। যেমন: সোভিয়েত এবং আমেরিকা-ন্যাটো কর্তৃক আফগানিস্তানে আক্রমণ।

৩. বুদ্ধি: নব্য মালালকে নিয়ে সিরিজটির আলাপ মূলত এই তৃতীয় ধাপ নিয়ে। এটা বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই। কলম ও কথা দিয়ে এই আগ্রাসন চালানো হয়। কূটনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে গোয়েন্দা কার্যক্রম, অভিনয় জগৎ, গণমাধ্যম, শিক্ষাব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক এনজিও এই বুদ্ধিবৃত্তিক শাখার আওতায় কাজ করে।

এই মাধ্যমগুলো দিয়ে শত্রু রাষ্ট্রের জনগণের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। জনগণের মগজগুলো ধোলাই করে নিজ দেশের শাসকের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে যায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচারবোধ কম। তাই তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে না কি বেঠিক; সেটা তারা না বুঝেই নির্দিষ্ট এক বা একাধিক দাবি পূরণের জন্য মনস্থির করে রাখে। স্বাভাবিকভাবে নিজ জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করে জনগণকে খেপিয়ে তুলে কোনো শাসকই নির্বিঘ্নে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবে না। পদে পদে বাধার সম্মুখীন হবে। পরাশক্তি দেশটি নানান উস্কানীমূলক কাজ ও কথা দিয়ে জনগণকে তাতিয়ে রেখে উক্ত দেশের শাসককে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। এতে করে দূর্বল দেশের শাসকরা নমনীয় হয়। একসময় পরাশক্তির আনুগত্য করে।

এই ৩নং ধাপের কাজগুলো ১নং ও ২নং ধাপের কাজগুলোর পাশাপাশি একযোগে চালানো হয়।

যেমন: একটা দেশ চাইলো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে। সরাসরি সেটা করতে পারবে না আমেরিকা ও ইউরোপের মোড়লিপনার জন্য। তাই প্রথমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির নাম করে এই সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগুলো উক্ত দেশটি নিজের ভূখণ্ডে স্থাপন করবে। এগুলো নাড়াচাড়া করে ভেতরে ভেতরে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করলে সহজে বোঝার উপায় থাকবে না; আমেরিকা ও ইউরোপ সেটায় বাধা দেবে তো দূরের ব্যাপার। তাই ওরা উক্ত দেশের জনগণের সামনে সংবাদমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিনেতা, কতিপয় বুদ্ধিজীবী, পরিবেশবাদী এনজিও দিয়ে প্রাকৃতিক দূষণের আলাপ তুলবে। এই পারমাণবিক প্রকল্প দেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্রের জন্য হুমকি, এটা ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে লাখ লাখ মানুষ নিহত হবে ইত্যাদি বক্তব্য প্রচার করতে থাকবে। এই অপপ্রচারের কাজটা করবে উক্ত দেশের কিছু বেঈমান। এরা জ্ঞানী; তবে জ্ঞানপাপী। এরা দেখতে নিজ জাতির সদৃশ্য; তবে মনে-প্রাণে আমেরিকা ও ইউরোপের কৃতদাস। এরা সম্মিলিতভাবে সুন্দর সুন্দর শব্দ দিয়ে বক্তব্যকে গুছিয়ে জনগণের সামনে কথাগুলো তুলে ধরবে। কথাগুলো আপাতদৃষ্টিতে কল্যাণমূলক মনে হলেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে ঘৃণ্য একটা পরিকল্পনা। জাতিকে শক্তি-সামর্থ্য সহকারে মাথা তুলে দাঁড়াতে না দিয়ে শত শত বছর আমেরিকা ও ইউরোপের গোলামির শিকলে আবদ্ধ করে রাখাই ওদের মূল উদ্দেশ্য। এটা স্রেফ একটা উদাহরণ দিলাম।


পর্ব ৫
নারীশিক্ষার নামে মুসলিম দেশগুলোতে আমেরিকা ও ইউরোপ যা যা করে, তা একটা পলিটিকাল টুল। বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই। ওদের মুখে থাকে এক আর অন্তরের ভেতরে থাকে আরেক। ঘৃণ্য এক পরিকল্পনা! ওদের কথা শুনে মনে হবে ওরা বেশ নারীবান্ধব। অথচ ওদের উদ্দেশ্য নারীকে অনিরাপদ জীবনযাপনের দিকে ঠেলে দেওয়া। পারিবারিক অনুশাসন, ইসলামী বিধিনিষেধ, সামাজিক মূল্যবোধ, সুন্দর দাম্পত্য জীবন, মাতৃত্ব ও সন্তান লালন-পালন করে জাতি গঠনের মতো মহৎ কাজ থেকে নারী জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। একটা দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। নারীরা ধ্বংস হলে একটা জাতি ভেতর থেকে ধ্বংস হয়ে যায়। ঠিক যেমনটা ঘুণপোকা খায়। যুদ্ধ করে ক্ষয় করার চেয়েও বড়ো ক্ষতি করা যায় এই পন্থায়।

নারী জাতিকে বিভ্রান্ত করে দিয়ে নিজ দেশের মুসলিম শাসকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারলে শাসকরা রাষ্ট্রের উন্নতির দিকে অগ্রসর হওয়া দূরের কথা; ঘরের সমস্যা নিয়ে জর্জরিত হতে থাকবে। নারী জাতির কাছে তারা শত্রু রূপে বিবেচিত হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার একটা হাতিয়ার হচ্ছে নারীশিক্ষার বয়ান। ইসলাম নারীশিক্ষার বিরুদ্ধে না। তবে সেটার জন্য শরীয়া সম্মত জায়গা ও পরিবেশ থাকতে হবে। ওরা যেটাকে শিক্ষা বলে, সেটার দ্বারা টুকটাক শিক্ষা দেওয়া হলেও ওগুলো মূলত নারীকে বেহায়া ও উচ্ছৃঙ্খল বানিয়ে ফেলে।

ওরা নারীর মর্যাদা, নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়নে কতটা বিশ্বাসী সেটার প্রমাণ মিলবে ওদের কথা ও কাজের সামঞ্জস্যতা খুঁজলে।
বলছিলাম ড. আফিয়া সিদ্দিকির কথা। তাকে আমরা কজন চিনি? পাকিস্তানি এই নিউরোসায়েইন্টিস্ট আমেরিকার কোনো এক কারাগারের কোনো এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পচে মরছে এখন। ধর্ষিত হয়েছেন তিনি কতবার, সেটা হয়তো তিনি নিজেও গুনে বলতে পারবেন না। তার শারীরিক নির্যাতন কতটা মর্মান্তিক আর কষ্টদায়ক ছিল, সেটা দেখতে হলে আফিয়া সিদ্দিকি লিখে অনলাইনে খুঁজলেই একজন নারীর দুটো ছবি পাশাপাশি আসবে। একটা হলো বর্তমান অবস্থা–গালভাঙা, রোগাক্রান্ত; পুষ্টির অভাবে মানুষের চেহারা যেমনটা হয়। আর একটা হলো অতীতের গ্রাজুয়েশন শেষে মাথায় টুপি আর গাউন পরা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা।

আফিয়া সিদ্দিকীও তো পাকিস্তানি নারী ছিলেন। মালালা পশ্চিমাদের ক্রীড়ানক হিসেবে অনুগ্রহ নিয়ে পশ্চিমে 'পড়ালেখা' করতে গিয়েছে। আফিয়া পড়ালেখা করেছে নিজের মেধা ও যোগ্যতায়।
আফিয়া সিদ্দিকী Massachusetts Institute of Technology (MIT) এবং Brandeis University থেকে পিএইচডিসহ দুটি ডিগ্রি নিয়েছেন। MIT থেকে বায়োলজি, এ্যানথ্রপোলজি এবং আর্কেয়োলজি বিষয়ের ওপর ট্রিপল মেজর করেন। যেসব তথাকথিত নারীবাদীরা শিক্ষাগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে দায়ী করে, এদের জন্য আফিয়া সিদ্দিকি হলেন জ্বলন্ত উদাহরণ। যিনি কিনা যেনতেন কোনো জায়গা থেকে পড়াশোনা করেননি, পড়াশোনা করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরেও তিনি ইসলামকে শুধু মেনেই চলেননি, আরও কয়েক ধাপ সামনে এগিয়ে ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। তথাকথিত নারীবাদীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তথাকথিত শিক্ষাগ্রহণের নামে যা করে, তা হলো বেহায়াপনা ও নোংরামি। কিন্তু আফিয়া সিদ্দিকি ছিলেন প্রকৃত একজন উচ্চশিক্ষিত নারী।

কিন্তু 'পড়ালেখা' করবে কেবল মালালা। আফিয়ার পড়ালেখার দরকার নেই। মালালার মতো পশ্চিমা দাসী হতে পারলে নারীশিক্ষা, নারীর অধিকার, নারীর মর্যাদা নিয়ে হৈচৈ হবে। উলটোদিকে আফিয়া সিদ্দিকীর মতো প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হলে পশ্চিমাদের হিংস্রতা ও পাশবিকতার শিকার হতে হবে। পশ্চিমাদের বানানো তথাকথিত আধুনিক বিশ্বে বেহায়া ও নির্লজ্জ মালালাদের স্থান উঁচুতে। ডেকে নিয়ে তথাকথিত সর্বোচ্চ পুরষ্কার নোবেল দেবে। আর শালীন আফিয়াদের স্থান অন্ধকার কারাগারে। বন্দী করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করবে।
উলটো আরেকটা ঘটনা আছে। ৯/১১-এর ঠিক পরপর ব্রিটিশ নারী সাংবাদিক ইভন রিডলি বিনা অনুমতিতে অবৈধ পথে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে সেখানকার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তালেবান মুজাহিদদের হাতে একসময় বন্দি হন। সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ দেশে ফেরার পর তিনি ইসলাম কবুল করে মুসলিম হয়েছিলেন। রিডলি কিন্তু যেনতেন কোনো সাংবাদিক ছিলেন না। ‘সান্ডে এক্সপ্রেস’ সংবাদপত্রের চিফ রিপোর্টার ছিলেন রিডলি। যে জাতির সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের কাজের একটা বড়ো অংশজুড়ে শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে, তাদেরই একজন কি না ইসলাম কবুল করলেন, তাও আবার কথিত ইসলামি সন্ত্রাসীদের হাতে বন্দি হয়ে মুক্তি পাওয়ার পর। ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক তাই না?

তালেবান মুজাহিদরা যদি তাকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করতেন; তবে কিন্তু ঘটনা কখনোই এমনটা ঘটত না। রিডলি আফগানিস্তানে যেমন মনোভাব নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে যাওয়ার পর তার মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল তালেবান মুজাহিদদের আচরণ দেখে। এককথায় বলা চলে, তালেবানদের আচরণে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় রিডলিকে নিয়ে। মূলত অনুষ্ঠানের আয়োজনটা করা হয়েছিল রিডলির আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করার জন্যই। সেদিন তিনি হাজার তিনেক মানুষের সামনে তার বন্দি হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে তালেবান মুজাহিদদের সাথে ঘটা কিছু সুন্দর ঘটনা ব্যক্ত করেছিলেন।
এই ছোটো পোস্টে আফিয়া সিদ্দিকী ও ইভন রিডলির ব্যাপারে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। তাদের নিয়ে 'নারীবাদী বনাম নারীবাঁদি' বইতে বিস্তারিত আলাপ করেছি। ওটা পড়তে পারেন।

যাহোক। প্রকৃত ব্যাপার হলো নারীশিক্ষা পশ্চিমাদের কাছে একটা পলিটিকাল টুল। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নারী দিয়ে রাজনীতি করে। কাপুরুষের হরেক চেহারা থাকে। নারী নিয়ে রাজনীতি পশ্চিমাদের কাপুরুষতারই আরেকটা প্রতিচ্ছবি। যুদ্ধের ময়দানে প্যাদানী খেয়ে পুচ্ছ গুটিয়ে পালায়। এরপর ঘরের নারীদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করে।

লিখেছেনঃ কারিম শাওন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন