গণমাধ্যম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা পলিটিকাল টুল

 

গণমাধ্যম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা পলিটিকাল টুল বা রাজনৈতিক যন্ত্র। এটা এমন একটা টুল যেটা দিয়ে শাসকশ্রেণি সাধারণ জনগণের চিন্তাধারাকে পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

গণমাধ্যম যতটা সফলতার সাথে একজন মানুষ বা একটা দলকে রাতারাতি ভিলেন বা হিরো বানানোর কাজটা করে, ততটা সফলতার সাথে অন্য কারো পক্ষে এই কাজটা করা সম্ভব না। কারণ, গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ওপর সাধারণ মানুষ নির্ভরশীল এবং অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। পালটা কোনো প্রশ্ন করে না–এই তথ্যের উৎস কি অথবা সত্যতা কতটুকু।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই গণমাধ্যমগুলোও নির্দিষ্ট কোনো মতাদর্শ বা ভাবাদর্শ মেনে চলে। অর্থাৎ গণমাধ্যমগুলোও কোনো না কোনো একটা দল বা গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের অনুগামী। পৃথিবীর প্রতিটি গণমাধ্যম কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের মালিকানাধীন। আসলে গণমাধ্যম একটা পোষা প্রাণীর মতো। এটা কোনো কথার কথা না। এটা বাস্তব সত্য। কিন্তু মনিব ও ভৃত্যের এই সম্পর্কটা গোপন রাখা হয়। ভেবে দেখুন, একটা গণমাধ্যমের লোগো বা নামের সাথে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের নাম বা প্রতীক থাকত, সাধারণ মানুষ কি তখন গণমাধ্যমকে সেভাবে বিশ্বাস করত; যেভাবে এখন বিশ্বাস করছে?

সাধারণ মানুষের এখন কোন বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, কি নিয়ে চিন্তা করবে, কিভাবে ভাবতে হবে, কাকে বন্ধু বা শত্রু হিসেবে গ্রহণ করবে, কোন কাজটাকে ভালো বা মন্দ হিসেবে বিবেচনা করবে; এসব বয়ান গণমাধ্যম তৈরি করে দেয়। প্রেসক্রিপশন দেয় তাদের রাজনৈতিক মালিকপক্ষ।

গণমাধ্যম নিরপেক্ষ সেজে খুব সূক্ষ্ম উপায়ে সাধারণ মানুষের চিন্তার জগতকে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এরপর নিজেদের গন্তব্যের দিকে সেই জনসমর্থনকে চালিত করে। সবগুলো গণমাধ্যম যখন একই বিষয়ে সংবাদ প্রচার করতে থাকে, সাধারণ মানুষ সেটাকে নিঃসংকোচে গ্রহণ করে নেয়। কারণ, একটা মিথ্যা কথা যদি একাধিক জন অনবরত বলতে থাকে, তখন সেটাকে সত্য বলে মনে হয়।

একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন–ইসলামপন্থীরা কোনো সভা, সমাবেশ, মিছিল, প্রতিবাদ করলে সেটাকে গণমাধ্যমগুলো প্রচার করে না। যদি না সেখানে ইসলামপন্থীদের দুর্নাম রটানোর কোনো সুযোগ থাকে। প্রচার করলেও এমন শিরোনামে প্রচার করে, যেটা থেকে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।

উলটোদিকে সেক্যুলারদের কোনো সভা, সমাবেশ, মিছিল, প্রতিবাদে যদি ১০ জন মানুষও থাকে; গণমাধ্যমগুলো সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আকর্ষণীয় শিরোনামে সেক্যুলারদের বক্তব্যগুলো সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয় গণমাধ্যম।

এরা সাধারণ মানুষের কাছে সেক্যুলারদের প্রাসঙ্গিক করে রাখে আর ইসলামপন্থীদের করে অপ্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ এরা একপক্ষের কথাগুলো প্রচার করে এবং অন্য পক্ষের কথাগুলো মাটিচাপা দিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষকে ভিন্নভাবে ভাবার সুযোগ দেয় না। ফলশ্রুতিতে, সাধারণ মানুষ সেক্যুলারদের মুখে যা শুনে, সেটার দ্বারা প্রভাবিত ও চালিত হয়। একটা জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।

সুতরাং গণমাধ্যমগুলোকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। আরো আগেই এদের ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত ছিল। এদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার ছিল। কিন্তু সেরকম কোনো কাজই আমরা করিনি। আমরা ভেবেছি গণমাধ্যমকে পরিশুদ্ধ করব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শুধু প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারই না; বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যম কম-বেশি ইসলামবিদ্বেষী।

আমার পরামর্শ হচ্ছে, এখন পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই আর। যে যে গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করবে, সে সে গণমাধ্যমের অফিস ঘেরাও করা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে পেইন্টিং করে প্রতিবাদ জানানো নন-ভায়োলেন্ট এক্টিভিজম। আমরা গণমাধ্যমগুলোকে একটা হুশিয়ারি দিতে চাই–ইসলামের ব্যাপারে সংযত হোন।

লিখেছেনঃ কারিম শাওন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন