হামাস এবং তালিবানানিদের সাথে সিরিয়ান বিপ্লবীদের সম্পর্ক কি?
হামাস-তালিবানান উভয় দলই সিরিয়ার বিপ্লবীদের পক্ষে এবং শিয়া-রাশিয়া জোটের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। কারণ গত ৫০ বছরেরও আগে থেকে মুসলিম ব্রাদারহুড সিরিয়ার তাগুত আসাদ পরিবারের সাথে লড়াই করে আসছে। সুতরাং ব্রাদারহুড ইকোসিস্টেমের অংশ হিসেবে সকল ব্রাদারহুড পন্থী দল অবশ্যই বিপ্লবীদের পক্ষে থাকবে, কারণ তারা তাদেরই সন্তান।
আগের ইতিহাস জানার জন্য বাজারে জাস্ট 5 মিনিটস (Just 5 Minutes) নামক একটা বই পাওয়া যায়, যেখানে এক মুজাহিদের বোনকে ৫ মিনিটের কথা বলে ৯ বছর আটকে রাখা হয়। তিনি সেসবের বর্ণনা দেয়। সাথে হামা গণহত্যাসহ সিরিয়াতে নুসাইরী শিয়াদের হাতে সুন্নীদের নির্যাতনে ঘটনাগুলো পড়লে আপনার মনে হবে যে, হাসিনার আমলে আপনারা তুলনা মূলক আরামেই ছিলেন। যদিও ওরকম যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চলে গেলে, হাসিনা আরো ব্রুটালিটি (বর্বরতা) দেখাতে পিছ পা হতো না।
সাথে সাথে আল-কায়দা ইকো সিস্টেমের অংশ হিসেবে তালিবানদের দুইটা ফ্রন্টও স্বাভাবিকভাবে বিপ্লবীদের পক্ষেই থাকবে, কারণ ব্রাদারহুডের পরে, আল-কায়দারও অনেক অনেক কুরবানি আছে গত দশকের যুদ্ধে। আপনারা যদি আল-কুদসের ম্যাপটা দেখেন, দেখবেন যে তিনটা রাষ্ট্র খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো মিশর, তারপর জর্ডান এবং সিরিয়া - সাথে লেবাননও। আর মিশর ব্যতীত বাকিগুলো সব বরকতময় আশ-শামের অংশ। নবীদের পূণ্যভূমি, শত মুজাহিদ, সাহাবাদের ভূমি, ইমামদের ভূমি এবং হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতার ভূমি, কত যুদ্ধ আর সাম্রাজ্যে চারণ ভূমি এই আশ-শাম।
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী যখন জেরুজালেম মুক্ত করেন। তখন আগে মিশর তারপর সিরিয়া, জর্ডান এই অংশগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেন। তারপর সেখান থেকে জেরুজালেম মুক্ত করেন। আমাদের ক্ষেত্রেও সেইম কথা, এই অঞ্চলগুলোতে শক্তিশালী ইসলামী ইমারত গঠন করে, ইমামের অধীনে আল-কুদসকে মুক্ত করতে হবে। তাওহীদের পতাকা ব্যতীত আর কোন পতাকা বাইতুল মুকাদ্দাসকে ডিসার্ভ করে না। কথাটা ভালো মত মনে রাখেন লিখে রাখেন। যেই কথা বলে আমরা শাহাদাত চাই, যা বলে মৃত্যুবরণ করলে জান্নাত ওয়াজিব, সেই জিনিসটাই কেবল বাইতুল মুকাদ্দাস ডিসার্ভ করে। আল-কুদস হল পবিত্র।
হামাস এবং তালিবানদের পক্ষ থেকে পূর্বে অনেক ট্রেইনার (জিহাদের প্রশিক্ষক) পাঠানো হয়েছিল সিরিয়ার বিপ্লবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এমনকি আমরিকার মতে খোরাসান গ্রুপ নামে একটা ইউনিটও ছিল। তাছাড়া বিপ্লবীদের পক্ষে হামাস নেতাদের অনেক বক্তব্যে পাবেন। যেগুলোর পর ইরানের সাথে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়। ইরান হামাসকে সাপোর্ট দেয়াও অফ করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে ইজরায়েলের আগ্রাসনের কারণে আবারো মিত্রতা স্থাপনে বাধ্য হতে হয় উভয় পক্ষকেই।
আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন যে গাযযাতে এরকম অনেক মুজাহিদ ছিল যারা পূর্বে সিরিয়ান বিপ্লবীদের সাথে যুদ্ধ করেছিল। পরবর্তীতে যুদ্ধ কিছুটা থেমে গেলে তারা আপন ভূমিতে ফিরে আসে। অর্থাৎ হামাস, তালিবান এমনকি আল-কায়দাও একদিকে শিয়াদের নেতা ইরানের সাথে ডিপ্ল্যোমেটিক (কূটনীতিক) সম্পর্ল রাখলেও, অন্য কোন ফ্রন্টে জোট বাঁধলেও, সিরিয়ার ইস্যুতে একমত যে, ইরান সুন্নীদের উপর চরম নৃশংস গণহত্যাকারী আসাদ পরিবারকে সাহায্য করেছে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনে সাহায্য করেছে। এগুলো না করলে ইজরায়েল সুবিধা পাবে, সুযোগ পাবে এই যুক্তিতে তাদের অনাচার সহ্য করা হবে না, বরং তাদের বিরুদ্ধে একসাথে লড়তে হবে, নিজেদের মধ্যে মত পার্থক্য থাকলেও।
আমরা না আমরিকার দালাল, না রাশিয়ার। সাউদী আর তার চামচারা হতে পারে আমরিকার দালাল, ঠিক সেভাবে ইরান এবং তার চামচারা রাশিয়ার দালাল। তুর্কি-কাতার চেষ্টা করে কিছুটা দালালী, কিছুটা নিজেদের স্বার্থ, কিছুটা মুজাহিদদেরও স্পেস। আর আরব আমিরাতও কূটনীতি করা শুরু করেছে আমরিকা-রাশিয়া এবং চীন বলয়ের মাঝে। কিন্তু এরা হচ্ছে সবচাইতে নিকৃষ্ট সুন্নী বলয়ের মধ্যে। কারণ এদের কোন কিছুই মুজাহিদদের পক্ষে যায় না। সৌদীও নতুন আরব আমিরাত হবার ধান্ধায় আছে। এর কারণ হলো, আমরিকা আগের থেকে দূর্বল। আগে এরা খাস চামচামী করতো, বলার আগেই দালালী করতো। এখন বললেও, বলে দেখি পরে জানাচ্ছি বলে হিসাব নিকাশ করে আর কি। কিন্তু শয়তানি এখনো যায় নি। কারণ এখনো তারা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কিছু করতে রাজি না। তাছাড়া আমরিকা তথা পশ্চিমারা এতদিনে তাদের আক্বীদা এবং সামাজিক মূল্যবোধ আরো বেশী নষ্ট করে ফেলেছে। সেটার সমীকরণ তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
লিখেছেনঃ Bearded Bengali
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন