সহশিক্ষা, জেনারেল শিক্ষা এবং গণতন্ত্রের তুলনা

 

দুইটা ডাইমেনশ আছে একটা হল আমলগত বিষয়, হালাল-হারাম। আরেকটা হল বিশ্বাসগত বিষয়, যেমন ঈমান-কুফর।
দুইটা ডাইমেনশনকে বুঝার ক্ষেত্রে মিক্স করবেন না। x অক্ষেরটা x এর রাখেন। y অক্ষেরটা y তে, পয়েন্ট প্লটিং এর ক্ষেত্রে।

শুরুতে আমলের কথা বলে ঈমান দিয়ে শেষ করছি।
সহশিক্ষার মেইন যে ক্ষতিটা হয় তা হল নারী-পুরুষ একে অপরের কাছে এক্সপোসড। আমি যিনার কথা বাদ দিলাম। শুরুতেই নারী অনেক বেশী পুরুষকে চিনে ফেলতেসে, পুরুষও নারীকে। সহজাত আকর্ষণের কারণে একে অপরের প্রতি তীব্র ভালোবাসায় ভবিষ্যতে যে পরিবারটা গঠন হবার কথা ছিল, সেই আকর্ষণটা প্রকৃতিগত স্নিগ্ধতা হারিয়ে সন্দেহ, উৎকন্ঠা, প্রতিযোগিতা - সংঘর্ষের রূপ নিচ্ছে।

একজন ষোড়শী যেরকম প্রেমময় থাকে যেভাবে একজনকে বিশ্বাস করতে পারে, যেটা তার স্বামীর পাওয়ার কথা ছিল, ১০ বছর পরে সে সেটা আর পারবে না। কখনোই না। এক্সেপশনাল কেইস ছাড়া। কারণ সে অনেক বেশী অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান জেনে ফেলেছে। যেটা তার লাইফের কোন উপকারই করতো না। সে সহজাত আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু নফসের তীব্রতায় সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো খুবই নোংরা ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

ছেলেদের কথাটাও তো সেইম। আমরা আসলে নারীদের বুঝে ফেলছি। সে কখন কোন মুভ নিবে, কে কোন রকম আমরা অনেক দ্রুত গেস করে তাকে সেভাবে ম্যানুপুলেট করতে পারছি। আমার তো আর স্বাভাবিক সংসারের আকর্ষণ থাকবে না। আমার টার্গেট হবে আমি কত বেশী পটিয়ে কত বেশী প্রতারণা করতে পারি।

অর্থাৎ প্রথম বিষয়টাই হল নর-নারীর স্বাভাবিক আকর্ষণকে ধ্বংস করে তাকে বিকৃতির দিকে নিয়ে যাওয়া। তখন সে তার নফসকে খুশি করতে যা তা করতে হবে, কিন্তু যেই শান্তির খোঁজে তারা মিক্স হয়, সেই শান্তি খুঁজে পাবে না। সে পরিবার ভালো গঠন করতে পারবে না। তার সন্তানের ইয়াতিম না হয়েও আসলে ইয়াতিমের চেয়ে কষ্টের জীবন পাবে।

গণতন্ত্রের বিষয়টা এবার বলি অল্প করে যে, এটা আসলে জনগণের শাসন না, রাজনৈতিক দলের শাসন, যারা পশ্চিমা বা বিদেশী শক্তিগুলো প্রক্সি হিসেবে শাসন করে। স্বাভাবিক শাসন অর্থাৎ আনুগত্য - কল্যান যেটা শাসকের সাথে শাসিতের থাকে - তার বদলে সেটা চলে যায় বিদেশী সুগার ড্যেডীদের কাছে ভ্যালিডেশন পেয়ে তাদের রক্ষিতা হবার মডেলিং এ। নায়িকা বানিয়ে শাসনভার দিবে তারা। একেকটা আস্তো আস্তো পুরুষ পলিটিশিয়ানরা পতিতাদের চেয়েও অশ্লীল ভাবে লজ্জাস্থান কামড়ে ধরার জন্য সিরিয়াল দেয়।

কিন্তু দিন শেষে তারা নাকি ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড। পাস্ট ডাসেন্ট ম্যাটার। তারা জনগণের কথা ভাবে। জনগণের মূল্যবোধের শাসন করবে বলে। বিপ্লবের সময় মূসার কথা বলে ফিরাউনের বিরুদ্ধে। কুরআন-হাদিস পোস্ট করে। কিন্তু বাস্তবে দেখি পরিবারে তার কোন মন নেই। জনগণের কোন খেয়াল নেই। তার অফিসের কলিগ মেয়েটাকে খুবই এ্যাস্থেটিক লাগে। তারা সাথে প্রতিযোগিতা করে সেও নাকি এস্থেটিক হবে। অথচ তাও এক্সারসাইজটা যদি ঠিক মত করতো! অথচ দেখা যায়, পাতি (কু) বুদ্ধিজীবি এসব পলিটিশিয়ানদের পেটের ভুঁড়ি জামা ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চায়। মুরোদ থাকুক আর না থাকুক - হাই হিলে কড়া লিপিস্টিক দিয়ে আসা মেয়েটার কি অভাব পড়েছে জাস্ট ফ্রেন্ডদের? তার অরবিটে অনেক কামলা ফ্রেন্ড ঘুরে। তুমি বাছা এই অবস্থা নিয়ে বেশীক্ষণ কামলাও খাটতে পারবে না, লেট এলন রুম ডেট। 

আপুরা এদিকে বলতেসে, ইয়া শাইখ! আমরা একটু আকটু সাজতে বাধ্য। ডাক্তার হবার স্বপ্ন ছিল কিন্তু এখন অফিসে মার্কেটিং-সেলসের কাজ করি। কন্ঠও নরম করতে হয় কলে। পুরুষরা কল দিলে ক্লায়েন্টরা কথা বলতে চায় না। ব্যস্ততা দেখায়। লীড জেনারেশন কঠিন। ওই দিকে নারী কন্ঠের একটা কল - হৃদয়টা গলিয়ে দেয়। এইরকম গরম দামের বাজারে টিকতে হলে আমাদেরও তো জব করতে হয়। আমরা কি একটু সাজতে পারবো না? একটু নরম ভাবে কথা বলতে পারবো না?

ইয়া উখতি! মাশা‍‍ল্লাহ - বারাকাল্লাহ! We understand your concern. লাকিন - আমরা কিন্তু আপনাকে বাধ্য করছি না এখানে লিপিস্টিক দিয়ে সেজেগুঁজে আসতে। কন্ঠ নরম না করলে আমরা উত্তর দিবো না বিষয়টা তাও না। তবুও আপনারা এখানেও সেভাবেই এসেছেন। প্লিজ, ইয়া উখতি মাফ করবেন - আমাদের মাথায় অজুহাতের বন্দুক ঠেকিয়ে ফতওয়ার জিজ্ঞেস করবেন না। আপনার জরুরাত থাকলে আপনি আপনার রব্বের সাথে বোঝপাড়ার হিম্মত থাকলে জরুরত পূরণ করুন। তাওবা করতে থাকুন। অহংকার থেকে বিরত থাকুন। আল্লাহ তা‍আলা শিরক ব্যতীত সব গুনাহই মাফ করেন। তাওবা করলে শিরকও মাফ করেন।

গণতন্ত্রে এসব করতে হয়, সহশিক্ষায় আপনি রোবট হিসেবে কয়দিন থাকবেন? যান কিংবা না যান, তাওবা করতে থাকুন, ইস্তিগফার করুন। হারামকে হালাল কইরেন না। বইলেন না, উমার (রা) গণতন্ত্র মনা ছিলেন, আউযুবিল্লাহ! ইয়ানি, Just think a bit, Umar? Umar Ibn al-Khatattb? যার ব্যাপারে বলা হয় যে, তিনি যে রাস্তা দিয়ে যান, শয়তান সেই রাস্তা দিয়ে যায় না? আপনারা কি মনে করেন কাফিরর সেক্যুলার রা এতই নুব যে, ওনাকে গণতন্ত্রমনা বললে, তারা এখন থেকে ওনার মত খলিফা চাওয়া শুরু করবে? খিলাফাহ চাইবে? না! কখনোই না। তারা তো চাইছে তাদের দ্বীন অনুসরণ করাতে। এছাড়া তারা কখনোই সন্তুষ্ট হবে না।

সহ শিক্ষা উরফে জেনারেল শিক্ষায় এখন এমন এমন সাবজেক্ট আছে যেগুলো পড়ে বিশ্বাস করলে ডিরেক্ট ইরতিদাদ হয়ে যাবে। ঠিকমত পড়াশুনা করানো হয় না দেখে সেক্যুলাররা তাদের আক্বীদাগত বিষ ঢালতে সময় নিচ্ছে। নতুবা ফরজ ইলম ছাড়া কোন ছেলে-মেয়ের এই অপ্রয়োজনীয় ইলম নিতে গেলে তাকে আল্লাহ ছাড়া কেউ বাঁচাতে পারবে না। কারিকুলাম গুলোতে আসলেই কর্মমূখি শিক্ষার চেয়ে এইসব পশ্চাত্যের ওয়ার্ল্ড ভিউ গেলোনোর রসদ বেশী। 

সেইম কথা গণতন্ত্রের জন্যও। কারো যদি কোন কারণে নির্বাচনী রাজনীতিতে একটা কন্ঠ শক্তিশালী রাখার প্রয়োজন পড়েও - তাকে আক্বীদাগত এসব বিষয়, পরিভাষার রাজনীতি নিয়ে খুব বেশী এক্সপার্ট হতে হবে। নতুবা সে তো ধরা খাবেই, তার কারণে আরো অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়বে। আমরা সবাই জানি শয়তান ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রগুলো আমরা বুঝতে পারি না। এই ফিতনাটই সেখানে বড় হয়ে দেখা দিবে যে, শয়তান তার কাজকে সুরোভিত করে দেখাবে, আর তাওবা করতে ভুলিয়ে দিবে।

কিন্তু দিন শেষে ক্ষমতার জন্য আর উপার্জনের জন্য - এখানে সফলতার জন্য - নির্বাচনী রাজনীতি আর জেনারলের জাস্ট একটা গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী পাওয়া যথেষ্ঠ নয়। এমনকি দিন দিন এগুলো মূল ফ্যাক্টরও যে থাকছে না তা স্পষ্ট হচ্ছে। ধরা-বাঁধা কর্পোরেট জবের জন্য যে সার্টিফিকেট অর্জনের চেষ্টা সেই জব মার্কেট কতটা বুস্ট করছে? তাদের পে স্কেলের কি অবস্থা? বিপরীতে এরকম জবের বিপরীতে মার্কেট ডিমান্ড অনুযায়ী ছোট-বড় ব্যবাসাগুলো আসলে বেশীরভাগ পারিবারিক অর্থনীতিগুলোতে কি প্রভাব রাখছে - পার্থক্য কতটুকু সেটা আমার বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি। সামাজিক শক্তি ছাড়া নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখছি। বিদেশী প্রভুরা শুধু প্রক্সিই দেয়াবে। আপনাকে লিপস্টিক দিতেই হবে, পারফিউম দিতেই হবে। ভালো ডিলিং এর জন্য ট্যুর দিতেই হবে। হিজাব পরে থাকলে ক্ষমতা আপনাকে দিবে না। আপনি না হয় নিকাব খুললেন। কিন্তু অনুষ্ঠানগুলোতে কি করবেন? একটু কি মদের পেয়ালায় চুমুক দিতে ইচ্ছে করবে না?

মাঝে মাঝে ছবি হয়ত ভাইরাল হয়ে যেতে পারে। বাট এগুলাতো কিশোর গ্যাং এর দোষ তারা মানুষের প্রাইভেট জিনিস এক্সপোস করে। আপনি যদি সিকিউরিটি মেজার নিয়ে নফসকে একটু ফ্যান্টাসির জগতে নিতে চান - সেটা আপনার আর আল্লাহর ব্যাপার। এত তাকওয়া পুলিশিং কেনো হবে? এগুলোকে হারাম বলে বলে কেন আমাদের কষ্ট দিতে হবে? আমরা কি হারাম মানি না এসব? চান্সে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া কি এতই খারাপ? ভাই-বোন হিসবেও কি টাচ করা যায় না? এত শুদ্ধবাদিতা করে কি নিজেদের খারিজী প্রমাণ করতে চান? মব রেমে ইসলাম কায়েম করতে চান?

হিজাব পরি বলে কি নাচতে মন চায় না? পরে তো দেখি বিয়ের পর নাচতে না পারলে এই আপনারাই বলবেন, এ কেমন রোবট যে নাচাতে পারে না। আপনারাই পড়তে (!) মানা করেন, আবার আপনারাই ভালো পড়াশোনা ওয়ালা মেয়ে চান - এ কেমন হিপোক্রেসিরে ভাভা!

হ্যাঁ আপনারা হারাম মানেন। মানলাম - কিন্তু মানুষের অন্তর চেইঞ্জ হয়ত। আপনারা হারাম মানেন। কিন্তু অন্য কেউ হারাম বললে কষ্ট পান। মানে ভিউ চেইঞ্জ হচ্ছে। অথচ মানুষের কাছে হারাম করছি এই লজ্জা পাওয়াটা আপনার নফসের জন্য ভালো। জানি কষ্ট হয়। কিন্তু এই অর্থে ভালো যদি নত হন। নিজেও মনে মনে কষ্ট পান। তাওবা করতে থাকেন। ভুল হয়ত আবার করবেন। কিন্তু তাওবাও করতে থাকবেন। কিন্তু খবরদার! হালাল করতে যাবেন না। তখন আর আমলের না - ঈমানের প্রশ্ন। হারামকে হালাল ভাবতে শুরু করলে, তাওবার প্রশ্ন আর আসে না। আর যখনই অনুশোচনা আসবে না - বুঝতে পারবেন যে, হারামকে হালাল ভাবা শুরু করেছেন।

তেমনি গণতন্ত্রের ক্ষেত্রেও। যারা এসবের জড়িত তাদের নত হতে হবে। জনগণের সাথে নম্র হতে হবে। জনগণের কটু কথা গিলতে হবে। এটা তো আপনাদের গণতন্ত্রেরই প্রেমিস। অথচ আমারা দেখি আপনাদের অনেকে ক্ষমতা না পেতেই আগামী আয়নাঘরের হুমকি দিচ্ছেন। জাস্ট এতটুকু মনে রাইখেন এত সোজা না - বিষয়গুলো। আপনারা ব্যাথা দিলে, আমরাও দিতে পারি। You just can't vanish us!

লিখেছেনঃ Bearded Bengal

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন