উপরের ছবিটিতে খুলাফায়ে রাশিদিন, উমাইয়া এবং আব্বাসি খিলাফতের শাম প্রদেশের সীমারেখা।
সিরিয়াতে আসলে কে কি চায়?
ইজরাইল আর আমেরিকা চায় বাশার এবং বিপ্লবীদের মধ্যেই কেউ না জিতুক। যেমন বিপ্লবীরা যদি ইরান-রাশিয়কে একটু সাইজ দেয় they won't mind that. কিন্তু তারা চায় বাশার আল-আসাদ দুর্বল হয়ে টিকে থাকুক। যখন দেখবেন যে, বিপ্লবীরা বাশারের শেষ করার ধারপ্রান্তে, তখন দেখবেন ইজরাইল আমেরিকা তার সাহায্যে নেমে পড়েছে।
অলরেডি আমেরিকা সমর্থিত মার্কিনিস্ট কুর্দিদের দল মুজাহিদদের বিরুদ্ধে মুভ করছে। কারণ কি? কারণ হচ্ছে পূর্বে আসাদ বাহিনী মার্কিনীদের সাথে এ্যালাই করেছে। সাদ্দামকে পতনে সাহায্য করেছে সেখানকার বাকি শিয়া এবং ইরানের মত।
আবার বাশার টিকে থাকলে ইজরায়েলের বর্ডরাও সেইফ। ইরান এবং এর প্রক্সিগুলো ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সুন্নী মুজাহিদদের মত থ্রেট না। বরং তাদেরকে কিছু করলে তারা রিএ্যাক্ট করে। নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু করে না, যেমনটা হামাস করেছে।
আমেরিকা চায় মুসলিম গ্রুপ গুলো এরকম হয়ে যায় যেন পুরো পলিটিক্সের উপর ডিপেন্ড হয় হার্ড পাওয়ার ছেড়ে দেয়। আর সফট পাওয়ারে বারবার তাদের আউট স্মার্ট করা যায়। কিন্তু তালিবানদের হার্ডপাওয়ার থাকায়, আমেরিকা ডিপ্লোম্যাটিক টেবিলেও হেরেছে।
তেমনি হামাসকে গত ২০-৩০ বছর হার্ড পাওয়ার ঠিক মত ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছিল না। তারাও একটা সময় গণতান্ত্রিক লোকজনদের পাল্লায় পড়ে পুরো সফট পাওয়ারের দিকে ঝুকছিলো হয়ত পশ্চিমাদের সফট পাওয়ার দিয়ে রাজি খুশি করিয়ে, কিছু অর্জন সম্ভব।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে বুঝতে ছিল যে এসব সব ধোঁকা। পুরা আরব বিশ্ব ইজরায়েলের সাথে আপোষ করে ফেলছে।
তাদের নিশ্চিহ্ন করার প্ল্যান চলছে। এবং তারা ভিতর ভিতর অনেক দিন ধরে প্ল্যান করে - ৭ অক্টোবরে হার্ড পাওয়ার ইউস করলো। বাকি সবার পরিকল্পনা গেলে ভেস্তে।
হার্ড পাওয়ার এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তো কুরআনে হাদিদের কথা বলেছেনই। মাঠের শক্তি আপনাকে বার্গেনিং (দর কষাকষি) টেবিলে এগিয়ে রাখবে। আপনাকে সবাই চেক দিলো, আপনি কাউরে চেক দিতে পারলেন না - তাহলে হবে না। গণতান্ত্রপন্থী দলগুলা পশ্চিমাদের খুশি করতে এই ভুলটা করে থাকে।
এমনকি শুধু দাওয়াহপন্থী দলগুলাও। ক্যাপাবলিটি সাধ্যমত অর্জন করা আর স্ট্রাইকে যাওয়া একই বিষয় না। পরেরটা নর্মাল না হোক, আগেরটা আপনার লাগবেই। নতুবা আপনার আসলে তেমন দাম থাকবে না রাজনীতির মাঠে। আপনি কিছু আদায়ই করতে পারবেন না, সেই অর্থে!
তুর্কিও এদিকে সিরিয়াতে দুর্বল শাসন চায়। তারা মুজাহিদদের ততটুকু হেল্প করে না, যতটুকু করলে তারা বাশারকে পরাজিত করে ফেলতে পারে। আবার পুরো সমর্থনও সরিয়ে নেয় না যেন, বাশার বাহিনী মুজাহিদদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারে। বরং তার মাঠের পরিস্থিতি দেখে সেগুলো নিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায়ে সচেষ্ট থাকে।
আরব আমিরাত তো পুরাই এখন বাশারের পক্ষে। জর্ডান চুপ আবার বাশারের পক্ষে মানে আমেরিকা যা বলবে। সাউদী তো পুরাই চুপ। আর কাতার কিছুটা তুর্কির পদ্ধতিতে চলছে। তারা সকলেই আছে শুধু তাদের স্বার্থটা নিয়ে। কিন্তু ইরান আবার এদিকে বাশারকে বাঁচাতে নিজেদের জান-মাল সব দিয়ে দিচ্ছে।
রাশিয়াকে হিসাব করে চলতে হচ্ছে। যদিও বাশারকেই সাপোর্ট দিচ্ছে, কিন্তু ইউক্রেনের কারণে এদিকে এ্যাগ্রেসিভ হতে পারছে না। হিজবুল্লাহও ইজরাইলের সাথে যুদ্ধ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইরাকে থাকা শিয়া-মিলিশিয়ারও অনলাইনে এই করতে সেই করতেসে ভিডিও ছড়ালেও তারা আসলে বাস্তবে সেই অর্থে মুভ করতেসে না।
ইরাক-সিরিয়ার মাঝের বিশাল মরুভূমি। মাঝে মাঝে কিছু জনপদ, তেলক্ষেত্র। এগুলো আমেরিকার দখলে। কিছু জায়গায় শিয়া-মিলিশিয়ারাও আছে। আছে কুর্দি মার্ক্সিস্ট বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ। কিছু জায়গায় অল্পসল্প দাঈশও আছে হয়ত।
ইউফ্রেটিস তথা ফুরাত নদী চলে গেছে মাঝ দিয়ে। নদীর দুই ধারে শুধু জনপদ। রাক্কা এই নদীর পাড়েরই একটা বড় শহর। এখন এসডিএফ নামক আমেরিকা-রাশিয়া সমর্থিত কুর্দি মার্ক্সবাদীদের দখলে।
এই শহর নিয়ন্ত্রণের জন্য আইসিস, আল-কায়দা গত দশকের ভয়ংকর তম যুদ্ধ করেছিল। আইসিসের খারেজীরা আল-কায়দা সহ অন্যান্য মুজাহিদদের পরাজিত করে, তাদের গলা কেটে কেটে শহরের রাস্তা জুড়ে সারি বানিয়েছিল। তাদের লাশ বিকৃত করে অবজ্ঞা আর হাসি ঠাট্টা করেছিল। উভয় পক্ষ আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। কিন্তু একপক্ষ নিজেদের মত নিয়ে অহংকার করলো। আরেক পক্ষের ভুল ত্রুটির জন্য ছাড় দিলো না।
তাদের উপর সীমলঙ্ঘন করেই ক্ষ্যান্ত হলো না, তাদের উপর ইরতিদাদের অভিযোগ তুললো। আল্লাহ তা'আলা এই জালিমদের ঘাড় ভেঙে দিয়েছেন। হঠাৎ ক্ষমতা আর অহংকার তাদের ধ্বংস করলো। আমাদেরও তাওবা-ইস্তিগফার করা উচিত নিয়মিত, আমরাও যেন এভাবে ধ্বংস না হই। ভিন্ন মতের মুসলিম ভাইদের ছোট-খাটো ভুল ক্ষমা করতে হবে। এমনকি ব্যক্তিগত রেশারেশিও, যদি না সেটা উম্মাহর জন্য ক্ষতিকর হয়।
এই রাক্কা শহরের কাছেই সেই বিখ্যাত সিফফিনের প্রান্তর। যেখানে আলী (রা.) এবং মুয়াবিয়া (রা.) এর দল মুখোখুখি হয়েছিলে ১৪০০ বছর পূর্বে। এখনেই আম্মার ইবনু ইয়াসির (রা.) শহীদ হবার পর, মুয়াবিয়া (রা.) এর দল বুঝাতে পারে, তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা যুদ্ধ ছেড়ে দেয়, সন্ধির আহবান করে।
আমরা কি তাদের মত ভুল বুঝাবুঝিগুলো সুধরাতে পারছি? ইনশা'ল্লাহ পারবো। আলাদা থাকি কিন্তু একের অন্যের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করবো না, এই ওয়াদাটুকু করি। রোমান সম্রাট মুয়াবিয়া (রা.) কে চিঠি লিখেছিল যে, তারা আলী (রা.) বিরুদ্ধে মুয়াবিয়া (রা.) কে সাহায্য করবে।
তখন মুয়াবিয়া (রা.) প্রতিউত্তোরে লিখেছিলেন, রোমের কুকুর! এদিকে এক পা বাড়ালে আলীর পক্ষে প্রথম শহীদ হবো আমি মুয়াবিয়া!
আজ আমরা সেই শহর আমেরিকা-রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়ে বসে আছি। কয়েক বছর পূর্বে সেই শহরে আমেরিকা-রাশিয়া উভয়ের সেনারাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। খবরটা শুনে আমি বলি, আল্লাহ! এ কেমন শহর! এখানে আল-কায়দা-আইএস ফাইট করে। আবার কিছু বছর পরে এই শহরে আমেরিকা-রাশিয়াও ফাইট করে। আরো আরো আগেই এই শহরে রোমান আর পারসিয়ানরা ফাইট করত কিন্তু এই শহর তো আলী আর মুয়াবিয়ার শহর! তাদের যুদ্ধের শহর এবং তাদের সন্ধির শহরও! রাদিয়াল্লাহু আনহুম।
সিরিয়ার মুজাহিদরা সিরিয়ার স্বাধীনতা চায় - একটি শক্তিশালী ইসলামী ইমারাত চায়, যা হবে আল-কুদস মুক্ত করার পথ। হামাসও তা চায়! আল-কায়দাও তা চায়! তালিবানরা তো চায়ই! আমরাও তাই চাই। আল্লাহুম্মা আমীন।
সিরিয়ায় থাকা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী
SDF = Syrian Democratic Force (PKK-YPG-Marxist Kurd) – US/Russia
PKK-YPG তুর্কিতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে লিস্টেড। এজন্য আমেরিকা তাদের সিরিয়য়ার ডেমোক্রিটিক ফোর্স হিসেবে চালাচ্ছে। ওইদিকে তুর্কি সহ বাকি সবার কাছে HTS সহ বাকি মুজাহিদরা সন্ত্রাসী হিসেবে লিস্টেড।
কিন্তু তারাই মূল ফাইটার। তুর্কি ডিরেক্ট তাদের সাথে দহরম-মহরম করতে পারে না। কারণ তারা শরীয়াহ কায়েমের কথা বলে। তাই তুর্কি সিরিয়ান ন্যাশেনাল আর্মি নামে নিজেদের একটা বাহিনী বানিয়েছে। SNA = Syrian National Army - Turky
SAA = Syrian Arab Army – Iran/Russia
এটা হচ্ছে মূল বাশার বাহিনী। এখন SDF এর কুর্দি মার্ক্সিস্টরা বাশারের পক্ষে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
আর কুর্দি ইসলামিস্ট আল-কায়দা লিংকড আনসার আল-ইসলাম মুজাহিদদের পক্ষে আছে।
লিখেছেনঃ Bearded Bengali
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন