Read in Urdu: Click Here [FBLnk]
ছোট তালিবান টিটিপি এবং পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডা
TTP বা Tehreek-E Taliban Pakistan (তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান - تحریک طالبان پاکستان)। তাদেরকে আফগানি বড় তালিবানের পর দ্বিতীয় কোনো তালিবান বলা যেতে পারে। অর্থাৎ ছোট তালিবান।
ছোট তালিবানরা অনেক বড় একটা কাজের আঞ্জাম দিতেছে। আমরা জানি বিজয়ের আগে খুব কম লোকই তাদের নিয়ে ফ্ল্যেক্স করবে। কিন্তু শুধু বিজয়টা হতে দেন, ১০ বছর পর কিংবা ২০ বছর, কিংবা এর মাঝে, কিংবা এর আগে তাদের নিয়ে বড় তালিবানদের থেকেও বেশী হাউ-কাউ হবে সারা দুনিয়ায়।
আমি পাকিস্তানের অন্যান্য ইসলামপন্থীদের মিডিয়া আউটলেট গুলো ফলো করি, অথচ ছোট তালিবানদের নিয়ে তাদের তেমন কোন কথাই শুনতে পাই না। জিনিসটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। পাকিস্তানের আলেমরা এবং বাকি ইসলামপন্থীরা যদি পাক-আফগান একজোট করার কিংবা দাওয়াহ চালাতো.....। কারণ ঐতিহাসিকভাবে এই পাক-আফগানের ভূমি তেমন একটা আলাদা ছিল না, সেই মুঘল আমল থেকে এর আগে সুলতানি আমলগুলো, খাওয়ারিজম, গজনভী, এরও আগে আব্বাসী, উমাইয়া পর্যন্ত টানলে তো আমরা এমনই দেখি।
তো কিসের ভিত্তিতে পাক-আফগান আলাদা রাষ্ট্র হবে? পাকিস্তানের ওলামাদের উচিত এই দাওয়াহ সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। গণবিপ্লবের ডাক দেওয়া। আর ওইদিক থেকে ইমারাহ (আফগানিস্তান) এবং তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান তো আছেই সরাসরি আল্লাহর রাস্তায়।
আমরা নিকট অতীতেই দেখিছে আল্লাহ চাইলে কত সহজে বিপ্লব হতে পারে। আমাদের দুনিয়ার হিসাবে অনেক হিসাব নিকাশ থাকলে, সঠিক প্ল্যান-পদ্ধতি থাকলে, বরং এরও আগে সহীহ নিয়াত থাকলে, এই বিজয় সম্ভব। অথচ আমাদের সেই নিয়াতই নেই।
আফগানের মাটিতে আমেরিকার পরজায় থেকে শুরু করে, এই যামানার সর্বোত্তম আনসার হিসেবে ছোট তালিবানরা যে অবদান রেখেছে, যে কুরবানী দিয়েছে তা একেবারেই অনন্য। অন্যদেরগুলো নিয়ে অনেক সময় কথাবার্তা হলেও, তারা কেন যেন আড়ালে থেকে যায়। হয়তো আল্লাহ তা'আলা তাদের বড় কিছু দান করবেন। হয়তো এমন কোন কুওয়্যাত যা আর কাউকে দেননি, সেই দুআ'ই করি।
আজ থেকে ১০ বছর আগে পাকিস্তানীরা ছোট তালিবানদের নামে একটা বড় প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিলে, যা এখনো মানুষের বিশ্বাস করে, ঠিক যেভাবে সিরিয়াতে আল-কায়দার নামে প্রচার করা হয়েছিল যে, জায়োনিষ্টরা তাদের চিকিৎসা দিয়েছে। অথচ সেটা ছিল সেখানকার স্থানীয় একটা বিদ্রোহী দল, যাদের সাথে আল-কায়দার কোন সম্পর্ক ছিল না। এখনো সেসব তুলে আল-কায়দাকে দোষারোপ করা হয়, যদিও বিজয়ের পর ওই নিন্দুকদেরই অনেকে এখন বিজয়ের কান্ডারী বনে গেছে।
ছোট তালিবানদের ইস্যুটাতে আসি। আপনারা গুগলে “যারবে আযব” কিংবা এরও আগে “অপারেশন শের দিল” লিখে সার্চ দিয়েন। তারিখগুলো খেয়াল করবেন। এগুলো হলো পাকিস্তানী বাহিনী আগে পাক-আফগান বর্ডারে পশতুন গোত্রগুলোর উপর হামলা চালায় আমেরিকার নির্দেশে, কারণ তারা আমেরিকার লজিস্টিক সাপোর্ট (রসদ সহায়তা) লাইনে রেইড এ্যামবুশ (ওৎ পেতে থেকে আক্রমন) করে আমরিকার মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। এমনকি ২০০৯ এ সিআইএ (CIA)-র উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও মেরে ফেলা হইসে। শুধু একটু ইন্টারনেটে খুঁজে ইতিহাসটা দেখেনিন।
যখন তারা গেরিলাদের থামাতে না পেরে পাগলের মতে বর্ডারে জন-বসতিগুলোর উপর হামলা করলো, মসজিদ-মাদ্রাসা, খামার, জনবসতি নারী-শিশু, গৃহপালিত পশু-পাখি কিছুই বাদ যায়নি। আল-কায়দা এবং তাহরিক (TTP)-এর অফিশিয়াল মিডিয়াতে সেগুলোর ডকুমেন্ট প্রচারিতও হয়েছিল। এর প্রতিশোধ স্বরূপ গোত্রগুলোর একটি গোত্র সামরিক স্কুলে হামলা করে বসে।
দেখুন ছোট তালিবানদের অধীনে অনেকগুলো গোত্র আছে। এটা একটা আমব্রেলা সংগঠন ছিল। অনেক সময়ই তাদের নিজেদের মধ্যে মতভেদ হতো, একে অপরকে শুনতো না। কোঅর্ডিনেশন (সমন্বয়) করে কাজ করার বদলে, দ্রুত নিজেদের উপর হওয়া অন্যায়ের কিসাস¹ নিতে চলে যেত। তেমনই একটা গোত্র, তাদের বাসা-বাড়িতে হামলার পর পাকিস্তানের একটা সামরিক স্কুলের অনুষ্ঠানে প্রতিশোধ নিতে হামলা চালায়। তাদের পক্ষের ভাষ্য হলো যে, সেদিন উচ্চপদস্থ সেনা অফিসাররা প্রকাশিত ছিল, নিরাপত্তা বলয় কম ছিল, তারা সেই সুযোগে তাদের মারতে গিয়েছে। কিন্তু পাক-আর্মি ভয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করায় ক্রস ফায়ারে পড়ে সেখানকার সামরিক স্কুল (তথা আমাদের ক্যাডেট কলেজের মত) ছাত্ররাও মারা গিয়েছে। তারা মূলত কিশোর এবং সেনা অফিসার হবে এরকম।
আর পাকিস্তানের বিবৃতি হলো যে, ছোট তালিবরা বলা নেই কওয়া নেই শুধু শুধু এসে তাদের স্কুলের শিশুদের মেরে চলে গেসে। যদিও শরীয়াতের ভাষায় তারা শিশু না, এমনকি তাদেরকে তালিবানরা মেরেছে এটা স্পষ্ট না। যেমন হামাসের নামেও তো গত বছর এরকম কথা ছড়ানো হয়েছিল। যদিও এই কাজের পর তৎকালীন ইমারাহ এবং আল-কায়দা তাদের নিন্দা করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, এখানে পাকিস্তানীদের প্রোপাগান্ডাটা (প্রচারণা) ম্যাস স্কেলে রদ করা যায়নি। আমার এই কথাগুলো ১০ বছর আগেও বলা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কথা খুব কম মানুষের কাছেই পৌছায়। এই সুযোগে সারা বিশ্ব পাকিস্তানী মিডিয়ার কথাই বিশ্বাস করলো এবং প্রচার করলো।
এখন দেখেন আপনারা পাকিস্তানীদের বিবৃতি নাকি ছোট তালিবানদের বিবৃতি কোনটা বিশ্বাস করবেন, কোনটার যৌক্তিকতা বেশী। তবে তাদেরও ভুল হতে পারে, এবং হয়। জুলুম তারাও করতে পারে, তারাও মানুষ। আমরা সব রকম হারাম কাজের বিরেধিতা করি, এবং সেগুলো থেকে সংশোধিত হবার আহবান জানাই। তবে কারো ভুল এবং খারাপ কাজের সমালোচনা মানে, তারা ভালো এবং ন্যায্য কাজকেও আমরা নজরে আন্দাজ করবো বিষয়টা এমন না। বরং প্রাপ্য ক্রেডিট দিবো। এবং আমরা আমাদের মজলুম মুসলিম ভাইদের পক্ষে থাকবো। এবং জালিম মুসলিমদেরও তাদের জুলুমে বাঁধা দিয়ে তাদের উপকার করবো।
___
¹ কিসাস’ শব্দের অর্থ অনুগামী হওয়া, অনুসরণ করা। কিসাস এ নামকরণ এজন্য হয়েছে যে, নিহতের অভিভাবক প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে হত্যাকারীর ন্যায় আচরণ করে থাকে, অর্থাৎ তার কাজের অনুসরণ করে। তাই এ প্রতিশোধকে কিসাস বলা হয়। https://www.hadithbd.com/hadith/detail/?book=24§ion=711 ]
লিখেছেনঃ Bearded Bengali
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন