TTP - Part 2 | تحریک طالبان پاکستان

 

 Read in Urdu: Click Here [FBLnk]

 

এমন একটা ভাব যেন তারাই বিজয় এনেছে

একটা মজার জিনিস খেয়াল করলাম। যেমন মুজাহিদরা যখন দুর্বল থাকে, তা সে যে দলেরই হোক আমরা তাদের নিয়ে লেখালেখি করি। কিছু লোক কেবল তাদের নিজেদের মাসালাক হলে পক্ষে কিছুটা থাকে, অথবা কিছু লোক যাদেকে দেখতে পারে না তাদের কিছুই প্রচার করে না। আবার কিছু লোক তো নিজ মাসলাকের হোক বা অন্য কারোটাই প্রচার তো দূররে কথা, উল্টা ভুল খুঁজে।

অথচ বিজয়ী হয়ে যাবার পর, এদের অনেকে এমন একটা ভাব নেয় যেন, তারাই বিজয় এনেছে। ভালো কথা উৎযাপন করা ভালো,আমরা এটাই চাই মূলত। কিন্তু সমস্যা হলো, যখন আমরা উৎযাপন করতে যাই, তখন তারা হিংসায় জ্বলে যায়। আমাদের টিটকারী দেয় যে, আমাদের মাসলাকের, মানাহজের সাথে ওই বিজয়ী গ্রপের মাসলাক, মানহাজে পার্থক্য আছে। আমরা কেন নিজেদের বিজয় দাবী করছি, হুহ? আমরা কেন এত খুশি হচ্ছি! আমাদের নাকি কোন অধিকার নেই, আমরা নাকি সুবিধাবাদি। আর ইউ কিডিং মি?

আমার আসলে সব কিছু বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই। যারা জানেন তারা তো জানেনই। যারা জানেন না, তারা এই প্যাটার্নটা সামনে দেখবেন। বরং আমরা মাসলাক, মানহাজের উর্ধ্বে গিয়ে সকল মুসলিমদের সমর্থন দিয়েছি, তাদের বিজয়ে খুশি হয়েছি, এবং তাদের দুর্বল অবস্থায়ও তাদের পক্ষে লিখে গিয়েছি, তারা ভুল করলে স্পষ্ট করে বলার চেষ্টা করেছি এটা এটা ভুল। আবার তার উপকারী কিছু করলেও সেগুলোর স্বীকৃতি দিয়েছি। কিন্তু তারা? তারা এই কাজ কখনোই করবে না। তারা শুধু বিজয়, এবং বিজয়ের আভাস পেলে কাছে আসবে। নতুবা দূরে থেকে এমন কোন প্রোপাগান্ডা নেই তারা ছড়াবে না।

টিটিপির সাথে শায়খ তকী উসমানীর মূল মতভেদ

টিটিপির সাথে শায়খ তকী উসমানীর মূল মতভেদটা আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে। শায়খের শেষ কথাগুলো আমলে রেখেই বলছি। শায়খের মত হলো যে, উম্মাহ আমেরিকা তথা পশ্চিমাদের গোলামী করা সত্ত্বেও পাকিস্তানে যতটুকু ইসলাম এর প্রশাসন ধারণ করে, তার জন্য বিদ্রোহ করা জায়েয হয়ে যায় না। টিটিপি যে বিদ্রোহী, এটা তো এক অর্থে সত্য কথা। কিন্তু এই আমাদের মতে বিদ্রোহটা জায়েয। শায়খের মতে এই বিদ্রোহটা জায়েয নয়। এবং পাকিস্তান প্রশাসন ইসলামে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, তাদের হত্যা এবং বন্দী করার শরঈ অধিকারটা পাচ্ছে।

উনি পাকিস্তানকে দারুল ইসলাম বলেন, কারণ এর সংবিধানে তওহীদের কথা বলা আছে। এবং ইসলামী বিরোধী আইন পাশ করা যাবে না, এমন মূলনীতিও সংবিধানে আছে। কিন্তু যদি কেউ ইসলাম বিরোধী আইন পাশ করে, তাহলে কি হবে? এটাও সেই সাংবিধানিক প্রসেসের মাধ্যমে অনৈসলামিক প্রমাণ করে বাতিল করতে হবে, শায়খের এটাই মত। এর জন্য যুদ্ধ করা জায়েয হয়ে যাচ্ছে না।

বাস্তবতা হচ্ছে যে, তাহলে পাকিস্তানে এত অনৈসলামিক আইন কিভাবে আছে? কারণটা হলো, এরকম মূলনীতি বানানোর আগেই পাকিস্তানের সিস্টেম যেহেতু ব্রিটিশ আইনকে অনুসরণ করে, তাই আইনগুলো আগে থেকেই আছে। এবং কেউ আইনগুলোকে অনৈসলামিক প্রমাণ করার জন্য শেষ সাংবিধানিক প্রসেসের শেষ পর্যন্ত যেতে পারে না। কারণ ক্ষমতায় মূলতা সেক্যুলাররাই থাকে।

ইসলামে কোন ইজতিহাদ কুরআন-সুন্নাহ সম্মত কিনা এ জিনিসটা নির্ধারণ করেন আলেমরা। একটা মাযহাবের কথাই চিন্তা করুন। অনেকগুলো মতের মধ্যে উলামাদের শূরা কিংবা ইজমার মাধ্যমে একটা মতকে মাজহাবের মূতমাদ কিংবা মূলমত হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়।

কিন্তু পাকিস্তানের সংসদের আইন বানানোর ইজতিহাদ কি আলেমরা করেন? অন্তত ইসলামপন্থীরা করেন? না, বরং এগুলো সেক্যুলাররাই করে। আর সেক্যুলারদের উপমহাদেশে তাকফির করা হয় না, যদিও আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি ইকফারুল মুলহিদীন লিখে গেছেন। এই মুলহিদ উনি কাদের বলেছিলেন? সেক্যুলাদরদের পূর্বপুরুষদেরই।

তো পাকিস্তানে মুলহিদ সেক্যুলাররা ইসলাম বিরোধী আইন বানাচ্ছে এবং আগের ইসলাম বিরোধী আইন যেগুলো ব্রিটিশদের কাছ থেকে নিয়েছিলো, সেগুলো তো আছেই।

এখন এগুলো পরিবর্তনের উপায় কি এ নিয়েই হলো মূল মতভেদ। শায়খের মতে মামলা করো, রীট করো, পার্লামেন্টে যাও, আইনগুলো পরিবর্তন করো। মূলনীতিতে তো তাওহীদের কথা বলা আছে, ইসলাম বিরোধী আইন না বানানোর কথা আছে। যুদ্ধ করলে রক্তারক্তি হবে, মুসলিমদের শক্তি কমবে‌।

টিটিপির কথা হচ্ছে, না! এই মুলহিদরা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে কাফিরদের থেকেও কঠোর। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনারা মসজিদের বোমা ফেলার সাহস পায় না, কিন্তু এরা সেই সাহস দেখিয়েছে। মুসলিমদের জনবসতি ইজরায়েলের চেয়ে কোন অংশেই কম না এভাবে বম্বিং করেছে। আপনারা শের দিল কিংবা যারবে আযবের মত অপারেশনগুলো দেখতে পারেন।

আমেরিকান সাপ্লাই লাইনে হামাল করার কারণে, পাকিস্তান বাহিনী মুজাহিদদের এলাকার জনগণে বসতবাড়ির উপর এমন হামলা করেছে যে, নারী-পুরুষ, শিশু, গবাদী পশু, মসজিদ, মাদ্রাসা একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এরপর তারাও পাকিস্তান বাহিনীর উপর প্রতিশোধ নিয়েছে। হয়ত কোথাও বাড়াবাড়ি ছিল। তারপর পাঠানরা প্রতিশোধ নিতে খুবই  তাড়াহুড়ো করে।

শায়খ তকী উসমানীর মতে না দোষটা বিদ্রোহীদের বেশী! বিদ্রোহীরা আগে শুরু করেছে। এদিকে আল-কায়দার মতে, আল-কায়দা পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যুদ্ধ রক্তারক্তি এড়াতে চাচ্ছিল। মুলহিদ এবং ফাসিক হলেও দিন শেষে এই যুদ্ধে মুসলিমদের ক্ষয়-ক্ষতিই যে বাড়ে, এ ব্যাপারে আল-কায়দা শায়খের সাথে একমত।

কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী আল-কায়দাকে যুদ্ধ এড়ানোর কোন সুযোগই দিল না। তারা এমনভাবে ধাড়-পাকড় করে মুজাহিদদের আমেরিকার হাতে তুলে দিচ্ছিল আর পাকিস্তানের ভিতর দিয়ে আমেরিকার যুদ্ধের রসদ সরবরাহ করাচী বন্দর হয়ে আফগানে ঢুকছিলো। যে আফগানে জিতার জন্য পাকিস্তানে আমেরিকান সাপ্লাই লাইনে হামলা করা জরুরী ছিল। আর সেই সাপ্লাই লাইনের দারোয়ানীর দায়িত্বে ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। অর্থাৎ ইচ্ছা না থাকলেও যুদ্ধ জড়াতে বাধ্য হয়েছিল আল-কায়দা এবং টিটিপি।

এখন শায়খ যদি এটাকে বলে মুজাহিদরা আগে শুরু করেছিল বিদ্রোহ, তাহলে কিছু বলার নেই। কারণ অনেকে মনে করেন যে, আফগানে যুদ্ধ হচ্ছে আফগানের ভিতর থেকেই সব করতে হবে। পাকিস্তানকে ব্যবহার করা যাবে না। কিংবা ফিলিস্তিনে আমেরিকা ইজরায়েলকে সাহায্য করছে, যা করার ফিলিস্তিন থেকেই করতে হবে, আফগান থেকে আমেরিকাকে কিছু করা যাবে না।
আমেরিকাও এই শর্তই দিয়েছে যে, মুসলিমরা এক মুসলিম দেশকে ব্যবহার করে, আরেক মুসলিম দেশের শত্রুদের আঘাত করতে পারবে না। অর্থাৎ মুসলিমরা জোট করতে পারবে না, কিন্তু তারা ঠিকই একে অপরের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে।

এখনো দেখবেন মুজাহিদদের ভালোবাসে এরকম অনেকে বলেন যে, ৭ অক্টোবর জায়েয, কারণ গাযযাবাসী নিজেদের ভূমি ব্যবহার করেই ইজরায়েলকে আঘাত করেছে। কিন্তু নয়-এগারো (9/11) জায়েয না, কারণ তারা আফগানের ভূমি ব্যবহার করে আমেরিকাকে আঘাত করেছে। কথা হচ্ছে আমেরিকাকে আঘাত করা জায়েয এবং ওয়াজিব হলে, কার ভূমি ব্যবহার করে আঘাত করা হচ্ছে এটা জায়েযে কিংবা ওয়াজিবের প্রশ্নে জরুরী না। স্ট্র্যাটিজিকাল প্রশ্নে মুজাহিদরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে মতবিরোধ করতেই পারে।

তেমনি ফিলিস্তিনীদের প্রতিশোধ নিতে ইজরায়েলের সাপোর্টার আমেরিকাকে আফগান থেকে, কিংবা আফগানদের জেতানোর জন্য, আমেরিকানদের পাকিস্তান থেকে হামলা করা নিশ্চয়ই জায়েয এবং ফরজ কাজ। এবং এই কাজ করতে গিয়ে মুসলিমদের মধ্যে যারা তাদের পক্ষে কাজ করবে, তারাও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলে দোষটা মুজাহিদদের না। সাথে সাথে যারা আল্লাহর আইন দিয়ে শাসন করা আর জরুরী মনে করে না, চাই তারা স্বীকার করুক না আর না করুক, তাদের কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলে, আলেমদের উচিত এসব মুলহিদদের ইলহাদ স্পষ্ট করে তওবার আহবান করা।

নতুবা তারা তাওবা না করে মুসলিম পরিচয়ে মুসলিমদের মর্যাদা পেতে থাকবে, আর মানুষ মুজাহিদদের ভুল বুঝবে যে, এরা কাফিরদের ছেড়ে মুলহিদদের বিরুদ্ধে লড়ছে। অথচ কাফিররাই এসব মুলহিদদের তাদের পক্ষে নামিয়েছে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে। এইসব মুলহিদ তওবা না করতে আলেমরা যদি তাকফির না করেন, তাহলে তরুণরা নিজেরা তাকফির করতে গিয়ে অরাজকতার অবস্থা তৈরী করবে। খারিজী ফিতনা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো আলেমদের যথাযথ তাকফির চর্চা না করা, একেবারে ছেড়ে দেওয়া, মুলহিদদের পক্ষে প্রশ্রয় দেওয়া।

লিখেছেনঃ Bearded Bengali

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন