ইসলামকে শিকড়হীন করার চক্রান্ত

 


এখন অবশ্য চিত্রটা আগের থেকে বদলেছে। চিত্রটা বদলেছে বলতে নীলনকশাটা আরো নীল হয়েছে। কাফেররা আগে ঢালাওভাবে মুসলমানদের সন্ত্রাসী বলত। ইসলামের সকল বিষয়কে এক বাক্যে খারিজ করে দিতো। সেক্যুলার সেজে ইসলামকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে গেলে মুখোশটা উন্মোচিত হয়ে যাবে। তাই ইসলামের শিকড়কে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বাদবাকি বিষয়গুলোর সাথে আপোষ করেছে ইসলামের শত্রুরা।

নখদন্তহীন সিংহকে কেউ বনের রাজা মানবে না। যেকোনো মতাদর্শ কোনো রাষ্ট্র বা ভূখণ্ডে প্রতিষ্ঠা পায় পেশিশক্তির জোরে। একটা রাষ্ট্র তৈরি হয় নির্দিষ্ট একটা মতাদর্শের আদলে। আর সেই রাষ্ট্রটা টিকে থাকে সামরিক বাহিনীর কারণে। একটা রাষ্ট্র অর্থ, বুদ্ধি, প্রযুক্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা, উৎপাদনে যতই উন্নত হোক; সামরিক বাহিনী না থাকলে সেই রাষ্ট্র টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হবে।

একইভাবে কোনো রাষ্ট্র বা ভূখণ্ডে ইসলামী মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা পাবে ও টিকে থাকবে ইসলামের সৈনিক বা যোদ্ধা বা মুজাহিদদের মাধ্যমে। অন্যথায় ইসলাম স্রেফ সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত, কুরবানী ইত্যাদি আত্মশুদ্ধিমূলক ইবাদত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে। রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি-জীবনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অন্যান্য নির্দেশনাগুলোর কোনো বাস্তবায়ন হবে না। এই সূক্ষ্ম বিষয়টা যখন নরমপন্থি সেক্যুলাররা বুঝে ফেলল; তখন এরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা বা খিলাফতের বিষয়টাকে রাষ্ট্র ও সমাজ বিরোধী, অবাস্তব, ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে তকমা দিয়ে বাদবাকি ইবাদতের পিঠে হাত বুলিয়ে ইসলামপ্রেমী সাজা শুরু করল। বোকা ও আবেগী মুসলমানরা এসব দেখে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ফেলল।

সেক্যুলাররা দুই রকমের। একদল চরমপন্থী সেক্যুলার। এরা সম্পূর্ণ ইসলামকেই ঘৃণা করে। ইসলাম নাম শুনলে এদের গায়ে জ্বালা ধরে। অপর দলটা নরমপন্থি সেক্যুলার। এই নরমপন্থি সেক্যুলারদের এখন বলতে শুনি; জঙ্গি বলে নির্দোষ মুসলমানকে মামলা দিল, জঙ্গি নাম দিয়ে সাধারণ একটা তরুণকে গুম করলো, জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে ভালো মানুষকে হত্যা করল, পুলিশ ধান্দা করার জন্য জঙ্গি নাটক সাজিয়েছে, ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদের কোন সম্পর্ক নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব কথা অনেক মুসলিমকেও বলতে শুনেছি। এর মানে এই মুসলিমরা ধরে নিয়েছে যে, জঙ্গি মানে খারাপ। কখনো কি খুঁজে দেখেছেন এই তকমা দেওয়ার পেছনের উদ্দেশ্য কি? ইসলামের শত্রুরা এই জঙ্গি তকমা আসলে কাদেরকে নির্দেশ করে দেয়? জঙ্গি কারা? তারা কি করে? তাদের উদ্দেশ্য কি? তারা কি চায়?

কোনো মানুষ বা কোনো সম্প্রদায়কে প্রত্যাখ্যান করতে হলে, সমাজচ্যুত করতে হলে তাদের কাজগুলো আগে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। এটাও দেখতে হবে তাকে বা ওই সম্প্রদায়কে যারা সমাজের কাছে নিকৃষ্ট ও হীন বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তারা নিজেরা আসলে কতটুকু উৎকৃষ্ট ও উঁচু চরিত্রের। এর কারণ হলো, একজন অসৎ লোকের দৃষ্টিতে একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক খারাপ লোক। তাই অপরাধীরা কখনোই চাইবে না তাদের অপরাধকে দমন করবে বা করতে পারবে এমন মানুষ পৃথিবীতে থাকুক। এমনকি অপরাধীরা এটাও চাইবে না তাদের অপরাধকে ঘৃণা করার মতো কোনো মানুষ পৃথিবীতে থাকুক। এতে করে নির্বিঘ্নে অপরাধ কার্যক্রম অব্যহত রাখা যায়। তাই কারো ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করতে হবে। এই একটা নীতি আপনাকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিবেচক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। নয়তো আপনার একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আপনি ভালো মানুষকে খারাপ এবং খারাপ মানুষকে ভালো বিবেচনা করে বসে থাকবেন। আর একজন বিবেকবান, বুদ্ধিমান, যুক্তিবাদী, সচেতন মানুষের জন্য এটা শোভা পায় না।

যাইহোক মূল আলাপে যাই। সহজ ভাষায় বললে– জঙ্গি তকমাটা দেওয়া হয় সেসব মুসলমানদের, যারা চায় সমগ্র বিশ্ব ইসলামী আইন-কানুন দিয়ে পরিচালিত হোক। এই মানুষগুলো যেই ভূখণ্ডে বা রাষ্ট্রে বসবাস করে, অন্তত সেই রাষ্ট্রটায় ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যদি সেটা নাও পারে; তবে এই নির্দিষ্ট কিছু মুসলমান সমাজ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নেয়। তারা সামাজিক কার্যকলাপের নামে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়ায় না। অশ্লীলতা, মদ্যপান, জিনা-ব্যাভীচার, সূদ, জুয়া, হারাম উপার্জন, গান-বাজনা, নানান দিবস উদযাপন, বিভিন্ন অনর্থক কাজ ইত্যাদি থেকে নিজেদের বিরত রাখার চেষ্টা করে। তারা ইসলামের যেই মৌলিক বিধানগুলো; যেমন- সালাত, সিয়াম, চোখের পর্দা, নিকাব, মাহরাম মেনে চলা, টাখনুর ওপরে কাপড় পরা, দাড়ি রাখা, বাবরি চুল রাখা ইত্যাদি; তাদের পক্ষে পালন করা সম্ভব হয়, তারা সেগুলো দৃঢ়ভাবে পালন করে। জীবন, মৃত্যু এবং আখিরাতের ব্যাপারে অবিশ্বাসী, উদাসীন এবং অজ্ঞ মানুষের সঙ্গ পরিত্যাগ করে নিভৃতে জীবনযাপন করে তারা। কারণ, এই মুষ্টিমেয় কিছু মুসলমান নিজেদের আসন্ন সংকটের ব্যাপারে সবসময় চিন্তামগ্ন থাকে। ঈমানের সাথে মৃত্যু হবে কি না, বিচারের দিন ডান হাতে আমলনামা পাবে কি না, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ক্ষমা কপালে জুটবে কি না, কিভাবে জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানটা পাওয়া যাবে, কিভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে ইত্যাদি চিন্তায় দিনের অধিকাংশ সময় তাদের কেটে যায়। হিদায়াত পাওয়ার পর থেকেই তাদের জীবন একটা ছকে বাঁধা হয়ে গেছে। তাদের হাত-পায়ে আছে অদৃশ্য একটা শেকল। রহমতের শেকল। তারা একটা অদৃশ্য খাঁচায় বন্দি। অনুগ্রহের খাঁচা।

তকমা প্রদানকারী লোকগুলোর একাংশ এবার বলবে, এই নির্দিষ্ট সংখ্যক মুসলমানরা উক্ত কাজগুলো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে তো কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। কিন্তু এই ধরণের মুসলমানরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্য মানুষের ক্ষতি করে। হাট-বাজার, মাঠ-ঘাট, দোকান-পাট, বাসা-বাড়ি, আচার-অনুষ্ঠান, যানবাহনে বোমা মেরে অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে। ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ সমালোচনা করলে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। জিহাদি দল বানিয়ে নিজ রাষ্ট্রের ওপর সশস্ত্র হামলা করে। মূলত জঙ্গি এরাই। আর ওপরে বর্ণীত ওই কাজগুলো হচ্ছে জঙ্গি হয়ে ওঠার প্রাথমিক ধাপ। চূড়ান্ত ধাপ হলো সশস্ত্র জিহাদ করা।

অতীতের কথা বাদ। একবিংশ শতাব্দীতে সারা বিশ্বে মুসলমানদের ওপর কতটা নির্মম অত্যাচার এবং নৃশংস গণহত্যা চালানো হচ্ছে, মুসলমান নারী-শিশু-বৃদ্ধরাও যে বাদ যাচ্ছে না; আমি সেসব আলোচনায় আজকে না-ই বা গেলাম। আমি বরং একটু পুরনো আলোচনায় যাই। আমার 'বিভ্রান্তকারীরা বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত' বইতে দেখিয়েছিলাম, ধর্ম মানে মতাদর্শ। মতাদর্শ মানে ধর্ম। ধর্মের যেমন আইন থাকে। মতাদর্শেরও আইন থাকে। যে যেই ধর্ম বা মতাদর্শের অনুসরণ করে, সে সেই ধর্ম বা মতাদর্শের আইন অনুযায়ী জীবনযাপন করে। সেই বইতে আরো দেখিয়েছিলাম, রাষ্ট্র চলে আইন দিয়ে। আর সেই আইন প্রণীত হয় মতাদর্শের আদলে। শাসকশ্রেণী যেই মতাদর্শের অনুসারী তারা সেই রকমের আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। অর্থাৎ রাষ্ট্র চাইলেও কখনো ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে আদৌ কিছু নেই। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিজেই স্বতন্ত্র একটা ধর্ম। সেই বইতে আরো দেখিয়েছিলাম–সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সাম্যবাদ, পুঁজিবাদ, উদারবাদ; সবাই নিজ নিজ মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং সেটাকে পৃথিবীতে অন্যায় বা অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না। কেবলমাত্র ইসলামের ক্ষেত্রেই ঘটে ব্যতিক্রম। তারা তাদের শক্ত ভাষায় নিজেদের মতাদর্শ প্রচার করলে সেটা হয় গণতন্ত্র চর্চা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকার। আর মুসলমানরা নিজেদের মতাদর্শ প্রচার করলে হয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ। তারা সহিংস ও সশস্ত্র আন্দোলন করলে সেটাকে বলা হয় গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব, স্বাধীনতা যুদ্ধ। আর মুসলমানরা সশস্ত্র আন্দোলন করলে সেটাকে বলা হয় সন্ত্রাসবাদ। গণতন্ত্রের নামে হামলা, ভাঙচুর, হরতাল, অবরোধ, মিছিল, আন্দোলন, অরাজকতা, অস্থিতিশীলতা, অগ্নিসংযোগ, মারপিট, দাঙ্গা, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, এমনকি গণধোলাই দিয়ে হত্যাকাণ্ড যারা ঘটাবে তাদেরকে গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী না বলে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে বলা হবে বিপ্লবী। নিহত হলে বলা হবে বীর শহীদ। কিন্তু ইসলামের জন্য মুসলমানরা কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিলে সেটাকে বলা হবে মুসলিম সন্ত্রাসী। এই ব্যাপারে বলা হয়, ধর্ম রাষ্ট্র থেকে পৃথক থাকবে। এই কথাটা যে একটা নিরেট ধোঁকা সেটাও বইতে প্রমাণ করে দেখিয়েছিলাম।

মানে দাঁড়ালো–মাঠে কেবল তারাই খেলবে; মুসলমানরা খেলতে পারবে না। অত্যন্ত ছলে, বলে, কৌশলে ইসলামকে তারা রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করেছে। রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হলে সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি-জীবন থেকেও ইসলাম বিতাড়িত হয়ে যায়। কারণ, রাষ্ট্র হলো মূল। আর যেই সচেতন মুসলমান এসবের বিরোধিতা করছে, তাদেরকে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে নিকৃষ্ট, হীন ও খারাপ মানুষ হিসেবে। এরপর একটা তকমা দিয়েছে 'জঙ্গি'। বিপ্লবী তকমাটাকে যদি খারাপ দৃষ্টিতে দেখা না হয়, তাহলে জঙ্গি তকমাটাকে কেন খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে? দুটো তো একই ধরণের কাজ–নিজের মতাদর্শ রক্ষার জন্য সংগ্রাম ও লড়াই করা। পার্থক্য শুধু মতাদর্শে মধ্যে। একটা ইসলামী মতাদর্শ। আরেকটা মানবরচিত মতাদর্শ।

আমি সম্ভবত আমার কথাগুলো বোঝাতে পারিনি। আরেকটু খুলে বলি। যে চুরি করে, সে চোর৷ যে ডাকাতি করে, সে ডাকাত। যে মানুষকে ঠকায়, সে ঠগবাজ। যে জনগণের টাকা লুট করে, সে দূর্ণীতিবাজ। যে মাদক সেবন করে, সে মাদকাসক্ত। যে সুদ খায়, সে সুদখোর। যে ঘুষ খায়, সে ঘুষখোর। যে জুয়া খেলে, সে জুয়ারি। যে দেহব্যবসা করে, সে পতিতা। যে অবৈধ যৌনাচার করে, সে ব্যাভিচারী। যে ধর্ষণ করে, সে ধর্ষক। যে খুন করে, সে খুনি। তালিকা অনেক দীর্ঘ। এগুলো স্বীকৃত খারাপ কাজ এবং এই খারাপ কাজগুলো যারা করে তাদের একেকটা নির্দিষ্ট তকমা আছে। অর্থাৎ যে অপরাধ করছে, সে অপরাধী। প্রত্যেক অপরাধীর একটা নির্দিষ্ট তকমা আছে। কিন্তু জঙ্গি কারা? তাদের অপরাধটা কি? কোন অপরাধের জন্য জঙ্গি শব্দটা অপরাধীর তালিকায় উঠে এলো? উত্তরটা পেছনে আছে। তাদের অপরাধ তারা ইসলামী শাসনব্যবস্থার অধীনে জীবনযাপন করতে চায়।

তাহলে হিসেব বলছে, ইসলামের শত্রুরা 'জঙ্গি' বলতে বোঝাচ্ছে আসলে বিশুদ্ধ ইসলাম চর্চা করা সচেতন মুসলমান নারী-পুরুষকে। আর তাই জঙ্গি মানে খাঁটি মুসলমান। খাঁটি মুসলমানের সমার্থক শব্দ জঙ্গি। প্রতিটি সচেতন মুসলমান তরুণ-তরুণীকে জঙ্গি হওয়াই উচিত। ইসলামের শত্রুরা কোনো মুসলমানকে এই তকমা দিলে হীনমন্যতায় না ভুগে বরং গর্বিত হওয়া উচিত। নিজেকে 'জঙ্গি না' প্রমাণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। 'আমরা সাধারণ মুসলমান, আমরা জঙ্গিদের মতো না', এ রকম মনোভাব পরিহার করা উচিত। অন্যথায় এরূপ মনোভাবের অর্থ হলো, বিশুদ্ধ ইসলামকে অস্বীকার করা এবং ইসলামের শত্রুদের দেওয়া ওই তকমাকে স্বীকার করে নেওয়া। অর্থাৎ আপনারাও মেনে নিয়েছেন যে, জঙ্গি মানে নিকৃষ্ট, হীন ও খারাপ মানুষ। আগামীকাল যদি ওরা মুসলমান নামটাকে খারাপভাবে উপস্থাপন করে, তখন কি এই মুসলমান নামকেও পরিহার করবেন?

আরেকটা বিষয় আছে। জঙ্গি তকমা পাওয়া কোনো মুসলিমকে অনেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে সহানুভূতি দেখায়। সহানুভূতি দেখানো লোকগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, তকমাটা খারাপ; তবে ইসলামবিদ্বেষীরা যাকে-তাকে এই তকমাটা দিয়ে তকমার অপব্যবহার করে এবং তকমাপ্রাপ্ত নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানি করে। অর্থাৎ তাদের মতে জঙ্গি তকমাটা সঠিক। যেমন চোর তকমাটা সঠিক। তাই তাদের দৃষ্টিতে চিন্তা করলে–কোনো মানুষকে চুরির অপবাদ থেকে নির্দোষ প্রমাণ করার মানে এই নয় যে 'চোর' শব্দটা ভালো। তাদের দৃষ্টিতে 'চোর' শব্দটা খারাপ ও সঠিক; কিন্তু ব্যবহৃত হয়েছে ভুল মানুষের ওপর। একইভাবে তাদের দ্বারা কোনো তাওহীদবাদী মুসলমানকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাওয়ার মানে এই নয় যে, তারা 'জঙ্গি' শব্দটা এবং এই শব্দের প্রয়োগকে অস্বীকার করছে; বরং শব্দটা সঠিক, কিন্তু ব্যবহৃত হয়েছে ভুল মানুষের ব্যাপারে। অথচ একটু আগেই প্রমাণ করেছি যে, ইসলামের শত্রুরা 'জঙ্গি' শব্দটা দিয়ে যাদেরকে বোঝায় তারা মূলত বিশুদ্ধ ইসলাম চর্চাকারী তাওহীদবাদী মুসলমান। এই সহানুভূতি দেখানো মানুষগুলোর কথাবার্তার ধরণে মনে হবে তারা ইসলামের পক্ষে। বস্তুত তারা সংস্কারবাদী মুসলমান তথা মডারেট মুসলমান। তারা তাওহীদবাদী কোনো মুসলমানকে 'জঙ্গি না' প্রমাণ করতে গিয়ে ইসলামের মূল বা শিকড়কেই অস্বীকার করে মূলত। তাদের দৃষ্টিতে মৌলিক ইসলাম চর্চাকারীরা খারাপ, মুজাহিদ মানে খারাপ, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা খারাপ, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য যারা চেষ্টা করে তারাও খারাপ। তাদেরকে জঙ্গি (খারাপ অর্থে) বলে মেনে নিতে তাদের সমস্যা নেই। বস্তুত সহানুভূতি দেখানো সংস্কারবাদী মুসলমান তথা মডারেট মুসলমান এই ব্যক্তিগুলো নির্দিষ্ট কোনো একটা কারণে কিংবা স্বার্থের জন্য তাওহীদবাদী মুসলমানকে জঙ্গি তকমা থেকে মুক্ত করার জন্য সাফাই গাইছেন। সুতরাং এই সূক্ষ্ম ব্যাপারে বিভ্রান্ত হলে চলবে না। খুব সতর্ক থাকতে হবে। 

লিখেছেনঃ কারিম শাওন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন